২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিশাল ঘাটতি নিয়ে শেষ হচ্ছে লবণ উৎপাদন মৌসুম

- ছবি : নয়া দিগন্ত

বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে এবার শেষ হয়েছে লবণ উৎপাদন মৌসুম। সরকারি হিসাব মতে ১৫ মে লবণ উৎপাদন মৌসুমের শেষ দিন।

শেষ দিন পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ ৩০ হাজার ৪৩১ মেট্রিক টন।

২৩ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন লবণের চাহিদা ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দেশে লবণ উৎপাদন মৌসুম শুরু হলেও শেষ পর্যায়ে বৈরী আওহাওয়ার কারণে বড় ধরনের ঘাটতি থেকেই গেল মৌসুমের সমাপ্তির সময়।

অফিসিয়ালি ১৫ মে পর্যন্ত উৎপাদন মৌসুম শেষ হলেও হাজার হাজার চাষী এখনো মাঠে রয়েছেন। মাঠ পর্যায়ে উৎপাদিত লবণের দাম বেশি পাওয়ার কারণেই মূলত চাষীরা মাঠে রয়েছেন। সে কারণে আরো অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনে যোগ হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করছেন অনেকেই।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র ও চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ভোজ্য ও শিল্পসহ ২৩ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন, বৈরী আবহাওয়ার আগে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়েছিল ১৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৯৪ মেট্রিক টন। সে হিসেবে চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হলেও আবহাওয়ার কারণে এবারো বিপুল উৎপাদন ঘাটতি নিয়ে লবণ মৌসুম শেষ হচ্ছে।

কয়েক মৌসুম ধরে লবণের চাহিদা ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কোনোটিই অর্জিত হয়নি।

চলতি মৌসুমে ৬৩ হাজার ২৯১ একর লবণ মাঠে ৩৭ হজার ২৩১ জন লবণ চাষী কাজ করেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিসিকের লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার জাফর ইকবাল ভূঁইয়া।

জানা গেছে, প্রতি বছর লবণ উৎপাদন মৌসুম ধরা হয় ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত এই ৬ মাস। লবণ উৎপাদন মৌসুমের শেষভাগে অর্থাৎ মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাস লবণ বেশি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে এপ্রিলে একটু বেশি হয়, আবার মে মাসের শেষ সময় পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয় এপ্রিলের উৎপাদনের চেয়ে দ্বিগুণ। কারণ, এ সময় সূর্যের তাপ ও বাতাসের উষ্ণতা বেশি হওয়ায় লবণ উৎপাদন বেশি হয়। ওই সময়টুকুতে প্রতি সপ্তাহে দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদিত হয় বলে জানিয়েছে বিসিকের লবণ প্রকল্প।

এদিকে রোববার পর্যন্ত মাঠে উৎপাদিত অপরিশোধিত লবণ পাইকারী বিক্রি হয়েছে ধোলাই খরচসহ ৩০০ টাকার ওপরে।

চৌফলদণ্ডির বিপুল পরিমাণ লবণ মাঠের স্বত্ত্বাধিকারী শাহিন মনির জানান, শেষ দিন মাঠে অপরিশোধিত লবণ পাইকারী বিক্রি হয়েছে ৩০০ টাকার বেশি।

পটিয়া ইন্দ্রোপোল লবণ শিল্প এলাকার ইসলামাবাদ সল্টের হেলাল উদ্দিন চৌধুরী জানান, মিল মালিকগণ প্রতি দু’মন লবণ পাইকারী ক্রয় করেছেন ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা পর্যন্ত।

চলতি মৌসুমে উৎপাদনের মধ্যসময়ে এসে মধ্যস্বত্বভোগীদের কবলে পড়ে হাজার হাজার চাষী লবণের মূল্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। ওই সময়ে লবণের মূল্য নেমে আসে ধোলাই খরচসহ ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। যেখানে প্রতি মন লবণ উৎপাদনে খরচ হয় গড়ে ২৪৭ থেকে ২৫০ টাকা। এ কারণে লবণের বিক্রয়মূল্য নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তারা।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে সোডিয়াম সালফেটের আড়ালে (সোডিয়াম সালফেট যেহেতু দেশে উৎপাদন হয় না) অতিরিক্ত লাখ লাখ মেট্রিক টন সেডিয়াম ক্লোরাইড (ভোজ্যলবণ) আমদানি করে বিনাবাধায় তা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল। যার ফলে, দেশের চাষীরা উৎপাদিত লবণের প্রকৃত মূল্য না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন।

চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রথমে লিকুইড ও কালার ফর্মে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। পরে সব ধরনের শিল্প কাজে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে লবণ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্কহার ৩২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮৯ শতাংশ করে। এর ফলে আমাদানিকৃত লবণের মূল্য ১০ থেকে ১২ টাকার ওপরে পড়ে।

সরকারের কার্যকরী কয়েকটি সফল উদ্যোগের ফলে অতিরিক্ত লবণ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার ফলে, উপকূলে উৎপাদিত লবণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে চলতি মৌসুম থেকে। এতে চাষীদের মাঝে চাঞ্চল্য ফিরে আসে।

মৌসুমের শুরুতে ফেব্রুয়ারিতে লবণ (অপরিশোধিত) প্রতি মন বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা থেকে প্রকারভেদে ৩৭০ টাকা পর্যন্ত।


আরো সংবাদ



premium cement