ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্রকাশ্য দিবালোকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজছাত্র ঈশান ও মনির নামে দুই যুবকে হত্যার এক মাস পার হলেও গ্রেফতার করা হয়নি উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিকে।
এদিকে হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে ঘুরাফেরা করছে এলাকায়। বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছেন নিহতদের পরিবারকে। ফলে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের এক মাসেও যেন কান্না থামছে না ঈশানের মা আকলিমার। ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কেঁদেই চলেছেন তিনি। আর সন্তান হারা বাবা মিজানুর রহমানের কথাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। কথায় আছে পিতার কাঁদে সন্তানের লাশের চেয়ে ভারী বোঝা পৃথিবীতে আর নেই। ছেলে হারানোর জ্বালা যেন প্রকাশ করছে রক্তবর্ণ চোখ দুটি।
এদিকে বিধবা মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিল নিহত মনির। ওই মায়ের বড় দুই ছেলে বিয়ে করে সংসার গড়েছেন আলাদা করে। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন চলছে তাদের। নিহত মনির থাকতেন মায়ের সাথে। হত্যাকাণ্ডের মাত্র ২০ দিন আগে বিয়ে করেছেন মনির। ফুলটি যেন মুকুলেই ঝরে গেল নতুন সংসারের। ঘটনার পর প্রতিদিনই তিনি মনিরের ছবি বুকে নিয়ে কাঁদতে থাকেন।
উল্লেখ্য, ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুরে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে লামাবায়েক গ্রামের কলেজছাত্র ঈশান (২২) ও সদ্য বিবাহিত মনির হোসেনকে (২৪) প্রকাশ্যে টেঁটাবিদ্ধ করে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন।
জানা যায়, চায়ের দোকানে আড্ডা দেয়ার সময় আলী আজম ও দুলাল মিয়ার মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর জেরধরে প্রতিপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এতে ঘটনাস্থলে ইশান ও মনির নিহত হয়। একই গ্রামের আলী আজ্জম, মাহফুজ ও শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা করে তাদের হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা।
নিহতদের মধ্যে ঈশান স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ছিল। করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি বাড়িতে আসেন। মনির হোসেন ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। মাত্র ২০ দিন আগে তিনি কাবিন করে বিয়ে করেছিলেন। ঘরে নতুন বউ উঠানোর প্রস্তুতি নিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন তিনি।
এ ঘটনায় গত ১ অক্টোবর আশুগঞ্জ থানায় ২১ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা হওয়ার একমাস পার হলেও পুলিশ একজন ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিহত ঈশানের বাবা প্রবাসী মিজানুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের এক মাস পার হলেও আসমিদের ধরা হচ্ছে না। তাদের হুমকি ও ভয়-ভীতিতে খুব আতঙ্কে রয়েছি। ছেলেকে যারা হত্যা করেছে তাদের গ্রেফতার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
আকলিমা আক্তার জানান, ‘ছেলেই ছিল আমার একমাত্র ভরসা। অনেক শ্রম অনেক প্রচেষ্টা দিয়ে তাকে লালন পালন করে অনার্সে ভর্তি করিয়েছি। আমার আরেকটি প্রতিবন্ধী শিশু ছেলে রয়েছে। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তারা মুক্ত আকাশের নীচে ঘুরাফেরা করছেন। আর আমরা কষ্টে দিন পার করছি।’
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধীরা সাধারণত পালিয়ে থাকে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।