২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছে

-

- রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নতুন যোগ দেয়া ব্যক্তিরা সরাসরি পেনশন পাবেন না
- বাধ্যতামূলকভাবে যুক্ত হতে হবে নতুন ‘প্রত্যয়’ স্কিমে
- সংশোধনী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন নিয়ে জারি করা গেজেট নিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা অনেকটা মুখোমুখি অবস্থান নিতে যাচ্ছে। জারি করা গেজেট অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় নতুন যোগ দেয়া ব্যক্তিরা সরাসরি সরকারি কোনো পেনশন পাবেন না। এর পরিবর্তে তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালায় যুক্ত হওয়া ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা এক বিবৃতিতে এই বিধিমালাকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যায়িত করে তা অবিলম্বে প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফেডারশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুল ইসলাম ও মহাসচিব ড. মো: নিজামুল হক ভূঁইয়া গত শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতি এই দাবি জানিয়েছেন।
এ দিকে শ্লথগতিতে চলা সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে উজ্জীবিত করতে ‘প্রত্যয়’ নামে নতুন একটি স্কিম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। আগামী ১ জুলাই থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং এদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে নতুন যোগ দেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাধীন ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির আওতায় আসবেন।
অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় বিদ্যমান প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা- এ চার পেনশন কর্মসূচি ঐচ্ছিক হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে নতুন কর্মজীবীদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই সাথে এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাদের চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ১০ বছর রয়েছে, তারা চাইলে ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির আওতায় আসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তাদের বিদ্যমান পেনশনের সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

অতি সম্প্রতি গেজেট আকারে প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দু’টি পৃথক প্রজ্ঞাপনের একটিতে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং এদের অধীনস্থ অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে নতুন যোগ দেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়েছে এবং অপরটিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ সংশোধন করে ‘প্রত্যয়’ নামক নতুন একটি স্কীম সংযোজন করা হয়েছে।
আইনের সংশোধন অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যারা নতুন যোগ দেবেন, তাদের জন্য প্রত্যয় স্কিম বাধ্যতামূলক। তাদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার জন্য প্রযোজ্য অবসর সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না।
প্রসঙ্গত সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখেন, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা পেয়ে থাকেন। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে।
প্রত্যয় স্কিমের বিষয়ে সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে- এ স্কিমের আওতায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা- এ দু’টির মধ্যে যেটি কম হয় সে পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কেটে রাখা হবে এবং সম-পরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা প্রদান করবে এবং অতঃপর উভয় অর্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর কপার্স হিসাবে জমা করবে।
বিধিমালায় প্রত্যয় স্কিমের মাসিক চাঁদার চারটি স্তর (২ হাজার, ৩ হাজার, ৫ হাজার ও ১০ হাজার টাকা) উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মাসিক চাঁদার পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। এ স্কিমে মূল বেতনের ভিত্তিতে মাসিক চাঁদার হার নিরূপিত হবে বিধায় চাঁদার হার পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে এবং চাঁদার হার ভগ্নাংশের পরিবর্তে নিকটবর্তী পূর্ণ টাকায় প্রদান করতে হবে এবং প্রকৃত চাঁদার হারের ভিত্তিতে মাসিক প্রাপ্য পেনশন নিরূপিত হবে। এ ছাড়া সরকারের অনুমোদনক্রমে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনে কোনো স্কিমের মাসিক চাঁদার হার পরিবর্তন করতে পারবে বলে সংশোধিত আইনে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে।

সংশোধিত বিধিমালায় রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- সরকার বা কোনো স্বায়ত্তশাসিত বা স্বশাসিত সংস্থার মালিকানাধীন বা এতে ন্যস্ত বা শতকরা ৫০ ভাগের অধিক সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত কোন ব্যবসায়-উদ্যোগ, কোম্পানি ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা শিল্প-বাণিজ্য সম্পর্কিত বা অনুরূপ কোনো প্রতিষ্ঠান। স্বশাসিত বা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সংজ্ঞার বিষয়ে সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে- আপাতত বলবৎ কোনো আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, কমিশন, সংস্থা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউশন, কাউন্সিল, একাডেমি, ট্রাস্ট, বোর্ড বা ফাউন্ডেশন ইত্যাদি যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, সেগুলো এর অন্তর্ভুক্ত হবে।
জানা যায়, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে, যেগুলোতে মোট কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৪ লাখের বেশি।
এ দিকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাধীন ঘোষিত নতুন ‘প্রত্যয়’ কর্মসূচির বিষয়ে ইতোমধ্যে নানা ধরনের মতামত দিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, সংগঠন ও বিশিষ্ট জনেরা। ন
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারশনের সাথে তালমিলিয়ে আরো কয়েকটি সংগঠন এই বিধিমালা প্রত্যাহার করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট, উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা। প্রগতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য। সমতা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী (যাদের আয়সীমা বার্ষিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য। প্রবাস শুধু প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য। আর সুরক্ষা রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য। সর্বজনীন পেনশনে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সের সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement