১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


পতনের ধারায় দেশের উভয় শেয়ারবাজার

সাপ্তাহিক পর্যালোচনা
-

বিদায়ী সপ্তাহে (২১ থেকে ২৫ এপ্রিল) অব্যাহত পতনের ধারায় ছিল দেশের উভয় শেয়ারবাজার । সপ্তাহের ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে চার দিনই বাজারের পতন হয়েছে। একই সাথে কমেছে বাজার মূলধন। তবে আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে বেড়েছে লেনদেন।
সূত্র মতে, বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ২ হাজার ৭৬৪ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট হাতবদল হয়েছে। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯১২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৮৫২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
আগের সপ্তাহের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহ শেষে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬১ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ৬ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।
গত সপ্তাহে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ‘ডিএসই এক্স’ ১৬৮ দশমিক ২১ পয়েন্ট কমেছে। বর্তমানে সূচকটি অবস্থান করছে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে।
প্রধান সূচকের সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অপর দুই সূচকও কমেছে। শরিয়াহ সূচক ‘ডিএসইএস’ ২৯ দশমিক ২৯ পয়েন্ট এবং বাছাই করা কোম্পানিগুলোর সূচক ‘ডিএস ৩০’ এক সপ্তাহে ১০ দশমিক ০৬ পয়েন্ট কমেছে।
প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৪১২টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৫৭টির দর বেড়েছে, ৩২৭টির দর কমেছে, ১০টির দর অপরিবর্তিত ছিল এবং ১৮টির লেনদেন হয়নি।
বিদায়ী সপ্তাহে টানা দরপতনের কবলে থাকলেও এর মধ্যেও ‘এ’ ক্যাটাগরি কোম্পানিগুলোতে সুবাতাস বইতে দেখা গেছে। ঢাকা স্টক স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির তালিকায় ৮টি কোম্পানিই ছিল ‘এ’ ক্যাটাগরির। একই সময়ে ‘বি’ ক্যাটাগরির ২ কোম্পানি ছিল। সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকায় উঠে আসা ‘এ’ ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে- প্রথম স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন। এ ছাড়া ইজেনারেশনের ১৭.৪৬ শতাংশ, আইটিসির ১১.৬৭ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স র্ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ১০.৫১ শতাংশ, শাশা ডেনিমসের ৯.৯৫ শতাংশ, গোল্ডেন জুবিলি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯.৫৭ শতাংশ এবং বিডি থাই ফুডসের ৮.০৬ শতাংশ দর বেড়েছে।
অপর দিকে, ‘বি’ ক্যাটাগরির দুই কোম্পানির মধ্যে আরডি ফুডের ১০.৬৭ শতাংশ এবং বিডি থাই ফুডসের ৮.০৬ শতাংশ দর বেড়েছে।
খাত ভিত্তিক লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ১৮ খাতের লোকসানে রয়েছে বিনিয়োগকারীরা। একই সময়ে মাত্র পাট খাতে ৪.৫০ শতাংশ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১.৭০ শতাংশ দর বেড়েছে।

আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর কমেছে আর্থিক খাতে। এই খাতে ৮.১০ শতাংশ দর বেড়েছে। ৭.১০ শতাংশ দর কমে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে লাইফ ইন্স্যুরেন্স খাত। একই সময়ে ৬.০০ শতাংশ দর কমে তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে সিরামিক খাত।
এ ছাড়া তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে- ভ্রমণ ও অবকাশ খাতে ৫.৯০ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৫.৯০ শতাংশ, বস্ত্র খাতে ৫.৭০ শতাংশ, চামড়া খাতে ৫.৬০ শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে ৫.৩০ শতাংশ, জেনারেল ইন্সুরেন্স খাতে ৫.২০ শতাংশ, কাগজ ও প্রকাশনা খাতে ৩.৯০ শতাংশ, প্রকৌশল খাতে ৩.৭০ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩.৬০ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে ৩.৪০ শতাংশ, সিমেন্ট খাতে ২.৫০ শতাংশ, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ২.১০ শতাংশ, বিবিধ খাতে ২.০০ শতাংশ, ব্যাংক খাতে ১.৩০ শতাংশ এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে ০.৭০ শতাংশ দর কমেছে।
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে ১২০ কোটি ৫২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে: বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে ব্লক মার্কেটে এসব কোম্পানির ১২০ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১০ কোম্পানির ছিল প্রাধান্য
কোম্পানিগুলোর মধ্যে ব্লক মার্কেটে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে প্রাইম ব্যাংকের। সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে ব্যাংকটির ৫০ কোটি ২৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। বিদায়ী সপ্তাহে ব্যাংকটি সর্বশেষ দর ছিল ২১ টাকা ৬০ পয়সা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৫ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ৬১১ টাকা ৭০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ফাইন ফুডসের ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বিদায়ী সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বশেষ দর ছিল ১৭৭ টাকা ৭০ পয়সা।
সপ্তাহজুড়ে ব্লক মার্কেটে লেনদেন হওয়া অন্য ৭টি কোম্পানির মধ্যে- মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৮ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, লাভেলো আইস্ক্রিমের ৭ কোটি ৩২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ইউনিলিভার কনজুমারের ৭ কোটি ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, বিচ হ্যাচারির ৬ কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স র্ফাস্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এ দিকে বর্তমান শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ও বাজারের সার্বিক বিষয় নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ছিল নানা ধরনের উদ্যোগ।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পনিগুলোর শেয়ারের দর কমার নতুন সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নির্দেশনা অনুযায়ী, একদিনে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারবে। তবে ফ্লোর প্রাইসে থাকা ৬ কোম্পানি এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না। আর দর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগের নিয়মে বাড়বে। শেয়ারের আগের দিনের বাজার মূল্যের আলোকে পরদিন মূল্য সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারবে।
এ ছাড়া সম্প্রতি নতুন করে তালিকাভুক্ত আরো ৯০টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানোর ডিএসইর সিদ্ধান্তটি আটকে দিয়েছে বিএসইসি। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সম্মতি চেয়ে চিঠি পাঠানোর পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় ডিএসইর এ সিদ্ধান্ত আটকে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এর আগে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে স্বচ্ছতা ফেরাতে কোম্পানিগুলোকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দেয় নিয়ন্ত্রক বিএসইসি। নির্দেশনা বলা হয়, কোন কোম্পানি লভ্যাংশ প্রদান ও এজিএম করতে ব্যর্থ হলে তাকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করা হবে। এ নির্দেশনা ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে বলে জানানো হয়। এ দিনই ২২ কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
এর পর গত ৪ মার্চ নতুন করে আরো ৬টি কোম্পানির শেয়ার ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পাঠায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এর ফলে জেড ক্যাটাগরির প্রভাব পড়তে থাকে বাজারে। এর পর থেকে ধারাবাহিক পতন হতে থাকে শেয়ারবাজারে।
বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে কিভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে শিগগিরই ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরামের সাথে বসবো বলে জানান ডিএসইর চেয়ারম্যান।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল