নির্বাচন ঘিরে বরিশালে বিএনপি-আ’লীগ দু’দলেই বিভেদ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ জুন ২০২৩, ১৬:০৯, আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩, ১৬:১৪
আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হবে বরিশাল এবং খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এর মধ্যে বরিশালে বর্তমান মেয়রকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী মনোনয়ন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে এসে বিএনপির প্রার্থী এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রভাবশালী একজন নেতাকে ঘিরে জমে উঠেছে সিটি নির্বাচনের প্রচারণা।
গাজীপুরের ভোটের ফলাফলে একটা চমকের পর বিশেষ করে বরিশাল সিটিতে কী হয় তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ।
বরিশালে স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে একটা বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে নতুন ভোটারদের মধ্যে একটা বাড়তি আগ্রহ রয়েছে নির্বাচনকে ঘিরে। একজন ভোটার সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, বরিশালে শান্তিপূর্ণ ভোট চায় সবাই।
বরিশালে মোট মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন এবং জাকের পার্টি দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছেন।
বিভক্ত বিএনপির তৃণমূল
অতীতে নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বরিশালে বিএনপির একটা ভালো সমর্থক গোষ্ঠী রয়েছে। স্থানীয় এ নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির ভালো ফলাফল করতে পারত বলেই মনে করে স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ। বরিশালে এবার দলীয় নির্দেশ অমান্য করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় মেয়র প্রার্থীসহ ১৯ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
স্থানীয় বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য তৃণমূল। দল করতে হলে আমার দলের সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। আমি যে পর্যায়ের নেতাই থাকি। ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ।’
কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মহানগর বিএনপির নেতা শাহ আমিনুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর নির্বাচনের পরিবেশ ও ফলাফল দেখার পর বরিশাল সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দলের সিদ্ধান্তকে ভায়োলেট করার উদ্দেশ্য নিয়ে করিনি। কিন্তু দল আমাদেরকে চিঠিতে জাতীয় বেইমান, মুনাফেক, মীর জাফর এটা আসলে খুব বেদনাদায়ক শব্দ ব্যবহার করেছে। খুব কষ্ট লেগেছে।’
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বরিশালের বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র মরহুম আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিল ঘড়ি মার্কা নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি।
কামরুল আহসান বলেন, ‘আমি প্রমাণ করার জন্য এ নির্বাচন করছি যে এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে নৌকার পরাজয় সুনিশ্চিত হবে এবং বিএনপির যে সামনের আন্দোলন তা বেগবান হবে।’
বিএনপি চায় দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে নির্বাচনকে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণ করতে। দলীয় সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ভোট না দেয়ার নির্দেশনাও আছে দলের। কিন্তু বাস্তবতা হলো দলীয় নির্দেশ অমান্য করেই তিন ভাগের দুই ভাগ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন বিএনপির মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। ফলে বিএনপির নির্বাচনকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে বা ভোটার উপস্থিতি নেই বলেও প্রমাণ করার যে চেষ্টা করছে তা খুব একটা সফল হবে না এটি স্বীকার করছেন স্থানীয় নেতারা।
আনোয়ারুল হক তারিন বলছেন, ‘আমরা সবাইকে বলেছি না যাওয়ার জন্য। আমরা তো ওইভাবে ভোটারকে বলতে পারব না মাইকিং করে। আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বলেছি। এখন ওয়ার্ড সিদ্ধান্ত নিবে তারা যাবে কি-না। সমস্যা হয়েছে এখানে কাউন্সিলর প্রার্থী অনেকে হয়েছেন তারাই হয়ত ভোটারদের নিয়ে যাবেন।’
আওয়ামী লীগেও কোন্দল
বরিশালে আওয়ামী লীগ মেয়র পদে নতুন একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তিনি বরিশালে রাজনীতিতে নতুন মুখ। এ বিষয়টি নিয়ে সাবেক মেয়র এও তার অনুসারীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। ভোটের মাঠে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে মাঠ পর্যায়ে সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছেন না বলেও দৃশ্যমান হয়েছে।
বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের পুরো সময় বরিশালের বাইরে অবস্থান করছেন। এছাড়া তার যারা অনুসারী তারাও ভোটের মাঠে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন বলে মনে হয় না। দলের এ বিভেদ ভোটে নৌকার প্রার্থীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। কেন্দ্র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ জোর তৎপরতা চালাচ্ছে যাতে বরিশালে গাজীপুরের ভোটের পুনরাবৃত্তি না হয়। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আফজালুল করিম দাবি করেন দলের সবাই আন্তরিকভাবেই মাঠে আছে নৌকার পক্ষে।
তিনি বলেন, ‘যে চ্যালেঞ্জটা ছিল সেটা সমাধান হয়েছে। কেন্দ্র থেকে সমন্বয়ের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে সম্মিলিতভাবে কাজও হচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ বলেন, সাধারণ মানুষ তাকে গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘সর্বাত্মক মানুষ আসবে আমি আশা করি। এবং তারা আমাকে অত্যন্ত আপন মনে করে গ্রহণ করেছে এবং তারা অংশগ্রহণ করবে।’
আলোচনায় ইসলামী আন্দোলন
বরিশালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাইরে আলোচনায় আছে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম। তিনি দলের একজন প্রভাবশালী নেতা। এছাড়া ঐতিহাসিকভাবে বরিশাল অঞ্চলে ফয়জুল করীমের পারিবারিক একটা অবস্থান রয়েছে। বরিশালে বিভিন্ন স্থানে প্রচার প্রচারণা ও গণসংযোগে অনেকেই তার সাথে থাকছেন।
যদিও অতীতের ভোটের ফলাফল থেকে বোঝা যায় বরিশাল মহানগর এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের বড় কোনো ভোটব্যাংক নেই। তারপরও ভোটের মাঠে বিএনপির দলীয় প্রার্থী না থাকা আর আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকে কাজে লাগাতে চাইছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী।
হাতপাখা মার্কার প্রার্থী সৈয়দ মো: ফয়জুল করীম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা আছে এখন পর্যন্ত। আমি চাই নির্বাচন কমিশন যেন একটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়।’
ভোটের রাজনীতির সমীকরণে এবার বরিশালে একটা ত্রি-মুখী লড়াই হতে পারে বলেই অনেকের ধারণা করছে। নৌকা, হাতপাখা আর টেবিল ঘড়ি ছাড়াও লাঙ্গল মার্কায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছেন ইকবাল হোসেন, হাতি মার্কায় মো: আসাদুজ্জামান, গোলাপফুল নিয়ে জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু এবং হরিণ মার্কা নিয়ে লড়ছেন সতন্ত্র প্রার্থী আলী হোসেন হাওলাদার।
সূত্র : বিবিসি