২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মির্জাগঞ্জে প্রথমবার সয়াবিন চাষে কৃষকের সাফল্য

মির্জাগঞ্জে প্রথমবার সয়াবিন চাষে কৃষকের সাফল্য - ছবি- নয়া দিগন্ত

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে প্রথমবার বাণিজ্যিকভাবে সয়াবিন চাষে সাফল্য পেয়েছে কৃষকরা। এ বছর তীব্র দাবদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে রবি শস্যের ফলন কম হলেও সয়াবিনের যে ফলন হয়েছে তাতেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। উপজেলায় প্রথমবার সয়াবিন চাষে সাফল্য আসায় ও পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় মির্জাগঞ্জে সয়াবিন চাষের পরিধি বাড়বে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ বলছে, সয়াবিন চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। সাধারণত পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না বললেই চলে। ফলে মির্জাগঞ্জের কৃষকরা প্রথমবার সয়াবিন চাষ করেই বাম্পার ফলন পেয়েছে। তা ছাড়া দেশে ভোজ্যতেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফলে সয়াবিন চাষ বেশ লাভজনক। এতে আগামীতে এ উপজেলায় সয়াবিনের চাষ বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

এ দিকে মির্জাগঞ্জে এবার প্রথমবারের মতো ক্যান্সার প্রতিরোধী ও স্বাস্থ্যকর সবজি ব্রকলিরও চাষ করা হয়েছে। এতেও কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়েছে কৃষকরা। এর পেছনে মির্জাগঞ্জে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আরাফাত হোসেনের উৎসাহ ও ব্যাপক সহযোগিতা ছিল বলে কৃষকরা জানিয়েছে।

মির্জাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গোলাম মোস্তফার ছেলে কৃষক মেহেদী হাসান জুয়েল ও মৃত আলেফ হাওলাদারের ছেলে কৃষক মো: হায়দার আলী এবার এক বিঘা (৩৩ শতক) করে পতিত জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রদর্শনী প্লট হিসেবে বারি সয়াবিন জাতের চাষ করেছেন। জানুয়ারির শেষ দিকে সয়াবিনের বীজ বপণ করা হয় জমিতে। ১১৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তুলেছেন তারা।

কৃষক মেহেদী হাসান জুয়েল বলেন, কৃষি অফিসারের পরামর্শে এবারই প্রথম আমি সয়াবিন চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও কীটনাশক দিয়েছে। আমি শুধু চাষাবাদ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি।

কৃষক হায়দার আলী বলেন, সয়াবিনের চাষ বেশ লাভজনক। অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম। উৎপাদন বেশি। এক বিঘা জমিতে সয়াবিন চাষে আমার খরচ হয়েছে চার হাজার টাকা। আশা করি ১০-১২ টাকার বীজ বিক্রি করতে পারবো।

জানা যায়, সয়াবিন চীনের স্থানীয় উদ্ভিদ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে এর চাষাবাদ শুরু হয়। বীজ বপণের ৯৫ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়। হেক্টর প্রতি দেড় থেকে আড়াই টন সয়াবিন উৎপাদন হয়। সয়াবিনের গাছ ৩০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু হয়। গাছের কাণ্ডে ফুল হয়। ফুল থেকে শিমের মতো ফল তথা বীজ জন্মে। এই বীজগুলোকেই সয়াবিন বলা হয়। সয়াবিন ভোজ্যতেলের প্রধান উৎস। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রবি ও খরিফ দুই মৌসুমেই সয়াবিনের বীজ বপণ করা যায়। রবি মৌসুমের পৌষ মাসে বীজ বপন করা ভালো। বর্ষা মৌসুমের শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র পর্যন্ত বীজ বপণের উপযুক্ত সময়। সয়াবিন সারিতে বা ছিটিয়ে বপণ করা যায়। তবে সারিতে বপণ করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব রবি মৌসুমে ১২ ইঞ্চি ও খরিফ মৌসুমে ১৬ ইঞ্চি রাখতে হয়। গাছ থেকে গাছের দূরত্ব দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি রাখতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: আরাফাত হোসেন বলেন, মির্জাগঞ্জে এবার প্রথম সয়াবিনের চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করেছি। আশা করি, কৃষকরা এতে লাভবান হবেন ও আগামীতে আরো অনেক কৃষক সয়াবিন চাষে আগ্রহী হবেন।

তিনি আরো বলেন, খাদ্য হিসেবে সয়াবিনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ এতে শতকরা ৪০ ভাগের অধিক আমিষ ও ২০-২২ ভাগ তেল রয়েছে। মানুষের সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধে সয়াবিনজাত প্রোটিনের কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। কচি ও শুকনো সয়াবিন বীজ সবজি ও ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। পরিণত সয়াবিন বীজ থেকে শিশুখাদ্য, সয়া দুধ, দই ও পনির, বিস্কুট ও কেকসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার তৈরি হয়ে থাকে। এ ছাড়াও পোল্ট্রি ও ফিশফিড তৈরি, রং, সাবান ও প্লাস্টিক মুদ্রণের কালি ইত্যাদি দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও সয়াবিন একটি অপরিহার্য উপাদান।


আরো সংবাদ



premium cement