২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভালুকায় বনবিভাগের জমি দখলে নিয়ে বহুতল ভবন

ভালুকার হবিরবাড়ি মৌজার আউলাতলী রোডে বনবিভাগের জমি দখল করে নির্মাণাধীন একটি বহুতল ভবন : নয়া দিগন্ত -

ময়মনসিংহের ভালুকা ও উথুরা রেঞ্জের বিভিন্ন দাগে বনবিভাগের কয়েক কোটি টাকার জমি দখলে নিয়ে একের পর এক বহুতল ভবন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন করে একটি মহল ভেকু দিয়ে বনবিভাগের উঁচু টিলা কেটে নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাছে মাটি বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। আর এসব ব্যাপারে স্থানীয় বনবিভাগ অনেকটাই রহস্যজনক নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। ফলে সংরক্ষিত বনভূমি বিরান হয়ে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে ভালুকার বনভূমি জরিপ শুরু হয়। জরিপে বন বিভাগের ভালুকা ও উথুরা রেঞ্জের মোট ২৩ হাজার ৭৮ একর জমির মধ্যে ১৪ হাজার ৮৬৬ একর ৬৪ দশমিক ৪২ শতাংশ জমি চলে যায় জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। বর্তমানে বনভূমির নামে জমি আছে মাত্র ৮ হাজার ২১১ একর। অন্যের নামে বনের জমি চলে যাওয়ায় ২০০৮ সালে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আপত্তি দেয়া হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে গেজেট প্রকাশও বন্ধ ছিল। কিন্তু পরে জরিপ অধিদফতর রহস্যজনক কারণে হঠাৎ বিআরএস জরিপের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। যদিও পরে উক্ত বিআরএসের বিরুদ্ধেও আদালতে আপিল করা হয়েছে বলে বনবিভাগের দাবি। আর এই সুযোগেই শুরু হয় দু’টি রেঞ্জেই বনভূমি দখলের মহাযজ্ঞ।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভালুকা রেঞ্জের হবিরবাড়ি অফিসের সামনে ৮৭ নম্বর দাগে একটি প্রস্তাবিত কোম্পানি কয়েক কোটি টাকার জমি দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে বেশ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তা ছাড়া ৭২২ নম্বর দাগে বাগান কেটে জনৈক আবুল হাশেম বাড়ি নির্মাণ করছেন। অফিসের অদূরে সিডস্টোর বাজার এলাকায় ৯ নম্বর দাগে নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি এবং একই দাগে আওলাতলী রোডে আতিক নামে অপর এক ব্যক্তি পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করছেন। ১৮৫ নম্বর দাগে ঝালপাজা সড়কের পাশে আব্দুল গফুর নামে এক ব্যক্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। হবিরবাড়ি মৌজার ৮২৯ নম্বর দাগে এক প্রভাবশালী বনবিভাগের কয়েক একর জমি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পরে মাপজোকের নামে স্থানীয় বনবিভাগ নিরব ভূমিকা করেছে। মেহেরাবাড়ি মৌজার ৭৪ নম্বর দাগে প্রায় আড়াই একর জমি দখলে নিয়ে সীমানা প্রাচীরসহ বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন এক প্রভাবশালী। একই মৌজার ৬৯ দাগে মোতালেব বেপারির ছেলে মাসুদ মিয়া গড়ে তুলেছেন পোলিট্র খামার।
বাঁশিল মৌজার ১৮৭ নম্বর দাগে উকিলের ভিটা নামক স্থানে একটি আইসক্রিম কোম্পানির হয়ে সুরুজ ঢালীসহ বেশ ক’জন প্রভাবশালীর নেতৃত্বে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের বনবিভাগের জমি দখলে নিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করলে বনবিভাগ তাতে বাধা দেয়। একই মৌজার মান্দাই মার্কেটের দক্ষিণ পাশে কামরুলের নেতৃত্বে রশিদ ঢালীর ছেলে আল আমিন বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। পাড়াগাঁও মৌজার ৯৫৭ নম্বর দাগে গৌরিপুর এলাকায় হ্যানস গ্রুপ নামে এক কোম্পানি প্রায় তিন একর জমি দখলে নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশাল আকারের পুকুর কেটেছে। একই মৌজার আউলাতলী গ্রামে বনবিভাগের জমি দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক নামে জনৈক প্রভাবশালী। সিসা ফ্যাক্টরির জন্য জমিটি ভাড়া দেয়ায় এলাকাবাসী পরিবেশ দূষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন পালন করেছেন। পরে অবশ্য পরিবেশ অধিদফতর সরেজমিন অভিযান চালিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফ্যাক্টরির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
বন বিভাগের স্থানীয় বিট ইনচার্জ সাবেরুজ্জামান জানান, ডিমারকেশনের জন্য আবেদন করেই কাজ শুরু করলে তারা কাজ করতে নিষেধ করে আসেন। একই মৌজার ১২১৭ নম্বর দাগে লাবিব ফ্যাক্টরির ২ নম্বর গেট সংলগ্ন এলাকায় আলী মোহাম্মদ ভোলনসহ কয়েক ব্যক্তি নির্মাণ করছেন একাধিক বসতবাড়ি।
হবিরবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা প্রতিটি স্থাপনার সাথে বনবিভাগের অসাধু ব্যক্তিরা জড়িত এবং তারা তা থেকে মোটা অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। একাধিক অভিযোগ পেলে বন বিভাগ হয়তো কোনো কোনো স্থাপনার আংশিক ভেঙেই তাদের দায়িত্ব শেষ করে। অভিযোগে জানা যায়, বর্তমান দায়িত্বে থাকা ভালুকা রেঞ্জ কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ভালুকার বিভিন্ন বিটে কর্মরত ছিলেন। এই রেঞ্জের দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি উথুরা রেঞ্জের আঙ্গারগাড়া বিটে বেশ কয়েক বছর বিট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সেখানেও তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল।
উপজেলার বাঁশিল গ্রামে আইসক্রিম ফ্যাক্টরির হয়ে বনবিভাগের জমি দখলে নিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী স্থানীয় সুরুজ ঢালী জানান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিহাব আমীন খানসহ আরো তিন ব্যক্তি এই কাজের দায়িত্বে আছেন। তিনি শুধু দেখাশোনা করছেন মাত্র। বনবিভাগের সাথে আপস করে সীমানা নির্ধারণের পর তারা কাজ করছেন বলে তিনি জানান।
মেহেরাবাড়ি মৌজার ৭৪ নম্বর দাগে সীমানা প্রাচীরসহ বহুতল ভবন নির্মাণের ব্যাপারে হাজিরবাজার বিটের ইনচার্জ সাবেরুজ্জামান জানান, বনবিভাগের প্রায় আড়াই একর জমি দখলে নিয়ে উচ্চ আদালত থেকে নিষেধাজ্ঞা এনে প্রভাবশালীরা ওই দাগে কাজ করছেন। ফলে বনবিভাগ অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
ভালুকা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ রইচ উদ্দিন জানান, সরকারি বনভূমি রক্ষায় তারা যথাসম্ভব কাজ করে চলেছেন। বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে ইতঃপূর্বে বেশ কিছু আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। এমনকি কাজচলাকালীন শ্রমিক আটকসহ সরঞ্জামাদিও জব্দ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
কলকাতার রাস্তায় চাকরি হারানো শিক্ষকরা শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব নিয়ে এলো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যশোর কারাগারে হাজতিদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ব্যাপক আতঙ্ক চিকিৎসার জন্য ঢাকা ছাড়লেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম

সকল