মানিকগঞ্জে পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী মানুষ এখন ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। গত কয়েক দিনে শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভাঙন আতঙ্কে অনেকেই অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। বসতভিটা হারিয়ে এসব পরিবার আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জায়গায়। সব চেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন ও শিবালয় উপজেলার দক্ষিণ শিবালয় এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, ষাটের দশক থেকে পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ে কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন। নিয়মিত নদী ভাঙনের ফলে বর্তমানে ইউনিয়নের মোট ১৩টি মৌজার মধ্যে ১২টি মৌজাই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নিয়মিত ভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে কৃষিজমি ও বসতবাড়ি। গত ২০ বছরে ভাঙনের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়েছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। প্রতি বছর আরো দেরিতে ভাঙন শুরু হলেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে হঠাৎ নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় আকস্মিক এ ভাঙনে বিপদে পড়েছেন গ্রামীণ জনপদের মানুষেরা।
সরেজমিন দেখা যায়, কয়েকটি পরিবার তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। কেটে নিচ্ছে জমির গাছপালা। এদের কেউ কেউ একাধিকবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। তাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, অন্য কোথাও জায়গাজমি না থাকায় আপাতত অন্যের জায়গায় আাশ্রয় নিয়েছেন তারা। তারা বলেন, নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন আরো বাড়বে। তাই নদী ভাঙনরোধের স্থায়ী একটা ব্যবস্থার দাবি করেন এলাকাবাসী।
ভাঙন কবলিত কোটকান্দি গ্রামের শিরিন বেগম জানান, গত বছর তাদের বাগান বাড়ি ভাঙছে। বাগানে বড় বড় অনেক গাছপালা ছিল। গাছগুলো কেটে সরানোরও সুযোগ পাননি। যতটুকু বাকি ছিল এবার ভাঙনে তা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে ভাঙলে বাড়িই থাকবে না। কুশিয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার জানান, বর্তমানে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড থেকে আটটি বাড়ি ভেঙে গেছে। এখনো ঢেউয়ে ঢেউয়ে অনেক চাপ ভেঙে পড়ছে। এভাবে ভাঙলে আরো বাড়ি ভেঙে যাবে। তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
কুশিয়ারচর গ্রামের নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রহমানের স্ত্রী বলেন, ‘আগেও গাঙ্গে বাড়ি ভাঙ্গছে। আবারো গাঙে পানি আসতেই বাড়ি ভাইঙ্গা গেলো। এহোন কই থাকুম। দু’দিন অইলো অন্যের জায়গায় ঘর তুলছি। এ ঘরও ভাইঙ্গা যাইবার পারে। সরকার যেন ভাঙন বন্ধ করার জন্য বাঁধ দেয়।’ বারেক গাজীর স্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা ভাঙনের কবল থেকে বাঁচতে চাই। অন্যের জায়গায় ঘর উঠাইছি। পদ্মায় পানি বাড়তেছে। নিজেরা খামু কী! জায়গা কিনুম কেমনে! আমাগো সরকার যেন একটা ব্যবস্থা কইরা দেয়।’ একই এলাকার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত আরোজ প্রামাণিকের স্ত্রী বলেন, ‘পূর্বে আমাগো বাগমারা এলাকায় বাড়ি আছিল। পদ্মার ভাঙনের পর কুশিয়ারচর আইশ্যা বাড়ি করি। এই বাড়িও ভেঙে যাচ্ছে। এখন আমরা কই থাকব। তিনটি ঘর ভাইংগা অন্যের জায়গায় উঠাইছি, এখানে কতদিন থাকবার পারুম জানি না।’
শিবালয় উপজেলার শাহজাহান বিশ^াস জানান, যমুনা নদীর ভাঙনে দক্ষিণ শিবালয়ে ছোট আনুলিয়া ও অন্বয়পুর গ্রামের নদী পারের প্রায় এক হাজার ফুট এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি এমনিতেই বিগত বর্ষা থেকেই তীব্র নদী ভাঙনে হুমকির মুখে রয়েছে। ফলে গ্রামবাসীরা অনেকই আতঙ্কের মধ্যে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। প্রায় শতাধিত বাড়ি ভাঙনের শিকার হয়েছে। এদিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেন, প্রতি বছরই ভাঙতে ভাঙতে আমাদের এই ইউনিয়নটির ভৌগোলিক অবস্থানের প্রায় ৬০ শতাংশের বেশি এখন নদীতে। বাকি অংশটুকুতেও প্রতি বছর কমবেশি ভাঙছে।
এ বিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান সাহেবকে বলা হয়েছে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে রিপোর্ট দিতে। আর যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদেরও আবেদন করতে বলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে বরাদ্দ দিলেও মানিকগঞ্জে পদ্মা ভাঙনসহ ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। তবে সুখবর হলো, হরিরামপুরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ৪০০ মিটার কাজের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এ ছাড়াও বর্ষার সময় আপৎকালীন কাজ হিসেবে ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা