২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সিডরের এক যুগ পরও ঝুপড়ি ঘরে বসবাস

সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ভাণ্ডারিয়া উপজেলার উত্তর চরখালী জেলে পাড়ার বাসিন্দারা আজো ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে : নয়া দিগন্ত -

২০০৭ সালে দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলে আঘাত হানে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। সেই ঝড়ে বিশেষ করে বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি জেলার সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর হারিয়ে পথে বসেন। সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো শরীর শিউরে ওঠে। কত লাশ যে ভেসে গেছে গভীর সাগরে, স্বজনরা তাদের লাশও খুঁজে পাননি। তাদের কান্না যেন কেউ থামাতে পারছে না। সম্পদহারা, গৃহ হারাদের অনেকেই আজো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। পরিশোধ করতে পারেননি ব্যাংকঋণ। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ও রাস্তার অনেকটাই এখনো সংস্কার হয়নি।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানে সুন্দরবনে। তছনছ হয়ে যায় সুন্দরবন। সিডর সুন্দরবন আক্রমণ করে কিছুটা দুর্বল হয়ে উপকূলে আঘাত হানে। আবহাওয়াবিদরা পরে জানিয়ে ছিলেন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ এতটাই ছিল যে, প্রথমে সুন্দরবনে আঘাত না হানলে পুরো উপকূল ধ্বংস হয়ে যেত। শুধু পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নেয় ৯৭ জন। নিখোঁজ হন শত শত মানুষ। আশ্রয়হীন হন প্রায় ২০ হাজার পরিবার। মারা যায় বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু। বিধ্বস্ত হয় বেড়িবাঁধ, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপড়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে তার ছিন্ন ভিন্ন হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে প্রায় তিন মাস। টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি, পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্ট, দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত, হাটবাজার সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিডরের ১২ বছর অতিক্রান্ত হলেও ভাণ্ডারিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক শ’ পরিবার এখনো গৃহ নির্মাণ করতে পারেনি। আজো এসব পরিবার পলিথিন ও খড়কুটো-বাঁশ দিয়ে ঝুপড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। সিডরের পরপর এসব পরিবার পুনর্বাসনের সহায়তা হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা করে পেলেও তা ওই সময় অভাব অনটনে খরচ করে ফেলে। তবে গত এক যুগে কেউ কেউ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও উপকূলের অনেকই এখনো ঝুপড়ি ঘরেই বসবাস করছেন। পরে ক্ষতি কাটাতে এসব এলাকায় রাস্তাঘাট ও বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণের মতো উন্নয়নমূলক প্রকল্প হাতে নেয়া কৃষি ও পশু পালনে অনেক প্রশিক্ষণমূলক প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়। বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল বসানো ছাড়াও গ্রামের দুর্গম এলাকাগুলোতে সাইক্লোন শেল্টার তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো সারা বছর স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সিডরে ঘর হারানো চরখালী গ্রামের রাহেলা বেগম বলেন, ‘শুনছি সরকার এত ঘরবাড়ি দ্যায় কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত পেলাম না। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করছি। তিনি এখনো ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। কুলসুম বলেন, ‘মোগোরা অসহায়, মোগো কেউ খবর রাহেনা।’ এই এলাকার অভাবী পারুল, দিনমজুর দুলাল, স্বামী পরিত্যক্তা রাশিদা, নাছিমা বলেন, ‘য্যাগো আছে হেরাই সাহায্য পায়।’ উপজেলার হরিণপালা আদর্শ গ্রামের মনোয়ারা বেগমের স্বামী শাজাহানকে ভয়াল সিডর কেড়ে নেয়। সে দিন রাতের ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পশারিবুনিয়া গ্রামের আবদুল মান্নানের স্ত্রী তার নিহত ছেলেকে এখনো খুঁজে ফেরেন।
সিডরে স্বজনহারা কিছু পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভয়াবহ সিডরের ১২ বছর অতিক্রান্ত হলেও নিহত স্বজনদের কান্না থামেনি। যখনই উপকূলের মানুষ সিডরের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করে তখনই আবার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে উপকূলে। ২০০৮ সালে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস, ২০১৩ সালে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন, ২০১৫ সালে ঘূর্ণিঝড় কোমেন, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালে ঘূর্ণিঝড় মোরা, ২০১৯ সালে মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণিঝড় ফণি এবং সম্প্রতি আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। ফলে ঘুরে দাঁড়ানোর হাজার চেষ্টা করলেও উপকূলবাসী তা পেরে ওঠেনি। তারা প্রতিনিয়ত বৈরী আবহাওয়ার সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
টুকুর সাজার প্রতিবাদে ফেনীতে যুবদলের বিক্ষোভ জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র সাময়িক বরখাস্ত পেকুয়ায় হিট স্ট্রোকে একজনেরর মৃত্যু স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হুমজা ইউসুফের পদত্যাগ মঙ্গলবারও বাড়বে তাপমাত্রা, অসহনীয় হবে গরম ইতিহাসের উষ্ণতম এপ্রিল দেখল মিয়ানমার আইসিসির সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইসরাইলি কর্মকর্তারা নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু ভূমি সেক্টরে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশ বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা হামাসকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলি প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান যুক্তরাজ্যের

সকল