৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে

-

মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কের পাশে রাজনগর উপজেলার গয়ঘর গ্রামের এক বাঁশ বাগানে নিরাপদ আশ্রয়ে বক পাখিরা। ভোর বিহানে পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙার পরিবেশ সব গ্রামে এখন আর নেই। বন-বাদর উজাড় ও ঝোপঝাড় কমে যাওয়ায় পাখ-পাখালি প্রায় বিপন্ন। তবে উড়ন্ত পাখির দুরন্ত খেয়ালে এখনো কোথাও কোথাও পাখি বাসা বাঁধে, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় দেখা যায় পাখিরা মানুষের প্রতিবেশী হয়ে আছে।
পাখির এমন একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো রাজনগর উপজেলার মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কের পাশে গয়ঘর গ্রামের মাসুক মিয়া ও তার প্রতিবেশী সন্তুষ দেবের বাড়ি। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই পাখির বিষ্টা আর গায়ের আষ্টে গন্ধ। বাঁশ বনের নিচে গিয়ে দেখা যায় পাখির বিষ্টায় কচুপাতা ও সবুজ ঘাস সাদা হয়ে রয়েছে।
বাড়ির গৃহিণী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘পাখিরা এখানে নিরাপদে আছে, গন্ধ হলেও আমাদের ভলো লাগে। দিন-রাত পাখিরা কিচিরমিচির করে। পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে। আমাদের বাড়ি যেন পাখির মেলা। সকাল হলে পাখিরা উড়ে যায়। সন্ধ্যা হলে ফিরে আসতে থাকে। আমার প্রবাসী ছেলেরা প্রবাস থেকে ফোন করে পাখির খবরাখবর নেয়।’
বাড়ির মালিক মানিক মিয়া বলেন, ‘প্রথম প্রথম পাখির গায়ের গন্ধ খারাপ লাগলেও এখন ভালো লাগে। পাখির কলকাকলিতে মন ভরে। কিছু পাখি সারা দিন বাসায় থাকে। প্রতিটি বাঁশে ছয়-সাতটি বাসা রয়েছে। এর মধ্যে দুই দফা বাচ্চা দিয়েছে। পাখিরা প্রতিবেশীর মতো সকালে আমাদের হাঁস-মোরগের সাথে উঠানের মাটিতে চলাফেরা করে।’
পড়ন্ত বিকেলে পাখিবাড়ির পশ্চিমের বাঁশবনের কাছে গেলে দেখা মেলে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক পাখির। বাঁশঝাড়ের সবুজ পাতার নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে পাখিগুলো। মাঝে মধ্যে কালো রঙের পানকৌড়িরাও বাঁশঝাড়ের চূড়ায় বসছে। বর্ষার মেঘ ভরা আকাশ থেকে নামছে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির ফাঁকে রোদের ঝিলিকে সবুজ বাঁশঝাড় যেন ছোপ ছোপ সাদা রঙে লেপ্টে রয়েছে। বেলা যত পড়ছে পাখিরা কাছের মাঠ থেকে ওড়াউড়ি করে নীড়ে ফিরছে। আর বাসায় থাকা বাচ্চাগুলোর কিচিমিচির বাড়ছে। কোনটি ডানা ঝাপটিয়ে বাচ্চাদের মুখে খাবার দিচ্ছে।
পাশের বাড়ির সন্তুষ দেব বললেন, ‘তিন বছর ধরে পাখিরা আশ্রয় নিয়েছে। যদিও গাছপালা তরুলতার ক্ষতি হয় তবুও আমরা পাখি তাড়ায় না। আমাদের বাড়িতে সারা বছরই পাখি থাকে। তবে বৈশাখ মাস থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিরা আসে। এ সময় পাখি বাসা বুনে বাচ্চা ফোটায়। বাচ্চারা উড়াল দেয়া শিখে ফেললে আশ্বিনে আস্তে আস্তে চলে যায়। বক ছাড়াও আছে পানকৌড়ি, শালিক, ঘুঘুসহ বিভিন্ন জাতের দেশীয় পাখি।
শিক্ষিকা তামান্না বেগম বলেন, ‘আমরা পাখিদের বিরক্ত করি না। কেউ শিকার করতে এলে বাড়ির সবাই মিলে বাধা দিই। আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে রেখেছি শিকারিরা যেন ব্যাঘাত না করে।
প্রাইভেট টিউশনি করতে আসা শিক্ষিকা শিখা রানী ভট্টাচার্য বললেন, পাখি তার নিরাপদ আশ্রয় খুঁজেই বসবাস করতে থাকে। প্রতিদিন বিকেল বেলা এসে একবার পাখি দেখি। ভালো লাগে আনন্দ পাই। পথচারী সাজু মিয়া বললেন, আসা-যাওয়ার পথে পাখি দেখি, আনন্দ পাই। প্রতিবেশী হাসনা বেগম বললেন, রাস্তার পাশে বাড়ি থাকায় অনেক সময় কুলাউড়া, বড়লেখা থেকে শিকারিরা পাখি শিকার করতে আসে। আমরা এলাকার লোকদের নিয়ে তাদের প্রতিরোধ করি। পাখি মারতে দিই না। পাখির ডাকে আমাদের ঘুম ভাঙে। পাখির সাথেই আমাদের বসবাস।
পাখি বাড়ি নিয়ে কথা হয় রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আছে। কোনো শিকারি এলে আমি জানামাত্র আইনি ব্যবস্থা নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement