২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান নেই কেন!

অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান নেই কেন! - সংগৃহীত

বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর ‘জেগে উঠেছে’ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মেট্রেপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

রোববার রাত থেকে বহুতল ভবনের রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে তারা।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ এই অপরিকল্পিত অভিযান কোনো কাজে আসবে কি-না। আরো যেসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে সেখানে অভিযান হচ্ছে না কেন? এসব ভবনের সাথে জড়িত সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কি রেহাই পেয়ে যাবে? আর এই অভিযান কত দিন চলবে?

প্রথমে শুরু করে ডিএমপি। রোববার বিকেল থেকে তারা ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও বসুন্ধরা এলাকায় কমপক্ষে ৫০টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেফতার। অনেককে আবার সতর্ক করে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এই অভিযানে আগুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা আছে কি-না তা দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

অন্যদিকে, সোমবার অভিযান শুরু করেছে রাজউক। তারা ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ‘গাউছিয়া টুইন পিক’ ভবনের ১২টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিয়েছে। আর ওই ভবনের ছাদের খাবার জায়গা ভেঙ্গে ফেলেছে। ১৫তলা ভবনটিতে অফিসের অনুমোদন থাকলেও সেখানে রেস্তোরাঁ, কাপড় এবং ওষুধের দোকান দেয়া হয়েছে। আর ছাদ খোলা রাখার কথা থাকলেও সেখানে রুফটপ রেস্তোরাঁ করা হয়েছে।

সাত মসজিদ রোড এলাকায় কেয়ারি ক্রিসেন্ট ভবনও সিলগালা করে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। ওই ভবনে অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে সিটি করপোরেশনের অভিযানের আগেই খবর পেয়ে ওই ভবনের হোটেলগুলো বন্ধ করে দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য শুধু এই হোটেল রেস্তোরাঁ কেন্দ্রিক অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশন লাইসেন্স দিয়েছে। আমরা ভ্যাট-ট্যাক্স দিচ্ছি। ভবন মালিক রাজউকের অনুমোদন নিয়ে ভবন তুলেছে। রাজউক এত দিন কিছু বলেনি। আমরা তো মাত্র ভাড়া নিয়েছি। আমাদের রেস্তোরাঁর সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব আমাদের। কিন্তু ভবনের সেইফটি সিকিউরিটির দায়িত্ব তো মালিকের। আমাদের কোনো নোটিশ না দিয়েই কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? এই সব হোটেল রেস্তোরাঁকে কারা অনুমোদন দিলো? আমরা তো বহুবার বলেছি আমাদের সাথে কথা বলে অনুমোদন দেন। কিন্ত তারা তা না করে নানা সুবিধা নিয়ে অনুমোদন দিয়েছে।’

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সদস্য ঢাকায় এক হাজার এবং সারাদেশে ৬০ হাজার বলে জানান তিনি।

ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ পরিদর্শনে ঢাকায় দুই হাজার ৬০৩টি ভবন আগুনের অতি ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ১০৬টি বিপণিবিতান। অতি ঝুঁকির তাালিকায় ৮০১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩৪৫টি হাসপাতাল ও ৩২৫টি আবাসিক ভবন আছে।

রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জানান, ‘আমরা যে অভিযান শুরু করেছি তা পুলিশ পাওয়া সাপেক্ষে অব্যাহত থাকবে। আমাদের ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট আছে। তারা সবাই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। তবে অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের পুলিশ পেতে হবে।’

ঢাকার রেস্তোরাঁই কি শুধু ঝঁকিপূর্ণ ভবনে, না আরো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না আরো ঝঁকিপূর্ণ ভবন আছে। সেই সব ভবনেও আমরা অভিযান চালাব। আমরা নিরপত্তাব্যবস্থা দেখব।’

তবে তালিকায় এমন কতগুলো ভবন আছে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে মোটামুটি একটা তালিকা আছে। তবে আমরা তো তালিকা আগে প্রকাশ করব না। এটা গোপনীয় তথ্য।’

ড্যাপের সমীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার ভবনগুলোর মধ্যে ৮৮ ভাগ অবৈধ। আর বাকি ১২ ভাগ কোনো না কোনো ভাবে ব্যত্যয় করেছে। রাজউক এলাকায় মাত্র সাড়ে পাঁচ হাজার ভবনের অকুপেন্সি সার্টিফিকেট আছে।

এদিকে ডিএমপির অভিযানও চলবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জরা (ওসি) তৎপর হয়েছেন। প্রত্যেক এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ হোটেল রেস্তোরাঁকে আমরা চিঠি দিচ্ছি, সতর্ক করছি। তারপর অভিযান চালাচ্ছি।’

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা শুধু হোটেল রেস্তোরাঁ না, আমরা মূলত কোনো স্থাপনায় ঝঁকিপূর্ণ কোনো বস্তুও উপস্থিতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। যা মানুষের প্রাণহানির মতো কারণ হতে পারে। আইনে আমরা যেটুকু পারছি সেটুকু করছি। আরো অনেক অনিয়ম আছে। তা দেখার জন্য আরো সাতটি প্রতিষ্ঠান আছে। সবাই দেখলে আশা করি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

তবে এ ধরনের যে যার মতো অভিযানের সমালোচনা করেছেন নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান।

তিনি বলেন, ‘ত্রুটিপূর্ণ ভবনের তালিকা আছে। সেটা ধরে সরকারের ছয়-সাতটি সংস্থা যারা এর দায়িত্বে আছে তাদের সমন্বিত অভিযান দরকার। তা না হলে এই অভিযান তেমন কাজে আসবে না।’

তার কথা, ‘এখন শুধু রেস্তোরাঁয় অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ তো আরো অনেক ভবন আছে। সেখানে অভিযান নেই কেন? আর রেস্টুরেন্টে অভিযান চালিয়ে কর্মচারীদের আটক করা হচ্ছে। এটা অন্যায়। কারণ তারা তো কাজ করতে এসেছেন। ওই ভবনের মালিক রেস্তোরাঁ মালিক তাদের তো আটক করা হচ্ছে না। বেইলি রোডের ভবনের মালিককে তো এখনো গ্রেফতার করা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘সমস্যা অনেক বড়। সেখানে হাত দিতে হবে। এসব ভবন, হোটেলের পারমিশন কারা দিয়েছে? এখানে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তরা জড়িত। তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? তাদের বিরুদ্ধে অভিযান কবে হবে? কে চালাবে?’

ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শাহজাহান শিকদার জানান, তারাও সোমবার থেকে ধানমন্ডি এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে হোটেল-রেস্তোরাঁ, এরপর হাসপাতাল, ক্লিনিকে অভিযান চালাব। পর্যায়ক্রমে সব স্থাপনায়ই তালিকা ধরে অভিযান হবে।’

রাজউকের কাছে সর্বশেষ ঢাকায় কত ভবন তার হিসাব নেই। তবে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) আওতায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মোট ভবনের সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৪টি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের রাজনীতি ঠিক নেই বলেই অর্থনীতির ভয়ঙ্কর অবস্থা : সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন বগুড়ায় ২ বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ৫ সোনারগাঁওয়ে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায় নেপালের পানিবিদ্যুৎ কিনছে ভারত, বাংলাদেশের অগ্রগতি কতটুকু? ‘নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বিএনপি থেকে চিরতরে বহিষ্কার’ ইউক্রেনের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের বগুড়ার শেরপুর প্রেসক্লাবের পুন: সভাপতি নিমাই-সম্পাদক মান্নান হিট স্ট্রোকে পাইকগাছার ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যু মুন্সীগঞ্জে অটোরিকশার ধাক্কায় শিশু নিহত বিচারকের আসনে জয় চৌধুরী হামাস ও ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলোর মধ্যে ঐক্য আলোচনার আয়োজন করছে চীন

সকল