৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সবুজ ধানক্ষেত ও কাকতাড়ুয়া মন

-

শরতের শেষ বিকেল। পরিচিত সেই সুনীল আকাশে ভেসে বেড়ায় ধূসর মেঘ। সারা দিনের বিচরণ শেষে সকালের সেই প্রখর রৌদ্রোজ্জ্বল সূর্যটা পশ্চিম আকাশে। তার সোনালি আলোকচ্ছটায় বড্ড হ্রাস পেয়েছে। আপন গৃহে প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। শেষ বিকেলের এই হৃদয়জুড়ানো স্নিগ্ধ হাওয়া শরীরে লাগলেও মুহূর্তেই তার শীতলতা পৌঁছে যাচ্ছে অভ্যন্তরে। বড় রাস্তা থেকে নেমে একটু দূরেই যেন সবুজের সমুদ্র, বিশাল ধানক্ষেত। মৃদু বাতাসের সাথে অল্পবয়স্ক কচি ধানগাছগুলো মনের আনন্দে খেলছে। তরতাজা ধানগাছগুলোর সাথে ক্ষেতের আলের কচি ঘাসগুলোর যেন রয়েছে গভীর মিতালি। প্রায়ই ছুটে যাই এই সবুজ সাগরে হৃদয় জুড়ানোর জন্য। কি অপরূপ সৌন্দর্য। যেন পরম আদরে কাছে টেনে নেয় সবাইকে। আলতো করে ছুঁয়ে দেই কচি ধানগুলোকে। কচি সবুজ ধানগাছের শীষগুলো যদিও একটু খসখসে, কিন্তু নরম। যেন লজ্জা পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়। ‘এই যাও আমাকে ধরবে না একদমই।’
সবুজ সুন্দর ধানগাছগুলো যখন বাতাসে দোল খায় তখন কি যে ভালো লাগে তা প্রকাশ করার মতো নয়। ধানের চারাগুলো পরস্পর পরস্পরের গায়ে লুটিয়ে পড়ে। বাতাসের প্রকোপ কমলে আবার চলে আসে স্বস্থানে। বাতাসের তালে ধানগাছের এমন ছন্দময় দোলাচল ভীষণভাবে আন্দোলিত করে আমার মনকে। ক্ষেতের আল দিয়ে দু’হাতে দু’দিকের ধানগাছগুলো ছুঁয়ে যখন আমি বিলের মাঝখানে হেঁটে যাই, তখন তো অদ্ভুত শিহরণ জাগে মনে।

ঘন সবুজ গালিচার মতো এই মনোমুগ্ধকর ধানক্ষেতের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটি কাকতাড়ুয়া। ধানবীজ ক্ষেতে বুননের সময় তাকে দাঁড় করানো হয়েছিল। সে সঙ্গীহীন। সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গ। কারো সাথেই তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। তবে বাতাসের সাথে তার গভীর ভাব। শুধু তার সাথেই সে মনের আনন্দে এদিক-ওদিক দুলতে থাকে। যেন কথা কয়। আমার ভীষণ ইচ্ছে করে দু’হাত দু’দিকে লম্বা করে ওর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে। স্বার্থপিপাসু হিংসাপরায়ণ লোকদের সঙ্গ থেকে এই নিঃসঙ্গ কাকতাড়ুয়া জীবনই অধিক উত্তম। কোনো ঝুটঝামেলা নেই। নেই কোনো অভিযোগ কিংবা বিচ্ছেদের ভয়। কালো হাঁড়িতে সাদা চুন দিয়ে আঁকা ওর ভয়ঙ্কর মুখাবয়বও এই শান্ত স্নিগ্ধ বিকেলে ভীষণ ভালো লাগে। বারবার যেন সে বুঝিয়ে দেয়- তুমি যেমনই হও ভেঙে পড়ো না। নিজের কাজটি চালিয়ে যাও যথাযথভাবেই। নিঃসঙ্গতা কোনো আহামরি কিছু নয়। এই দেখো কত নিঃসঙ্গতার সাথে আমি পাখি তাড়িয়ে যাচ্ছি। জোছনাহীন অন্ধকার রাতেও আমি ভয় পাই না। তুমিও এমনই হও।
মন খারাপ হলেই ক্ষেতের আল দিয়ে মস্ত বড় বিলের মধ্যে চলে যেতে ইচ্ছে হয়। যত দূর চোখ যায় শুধু ধানক্ষেত আর ধানক্ষেত। তার পর দু’হাত দু’দিকে লম্বা করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। আমি নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। একাকিত্ব যার পিছু ছাড়ছেই না। কাকতাড়ুয়াই তার সব চেয়ে বড় প্রেরণা।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা উপকূলে বন্দর নির্মাণের ছবি প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র মানুষের প্রতিকার চাওয়ার কোনো জায়গা নেই : রিজভী রেলের ভাড়া না বাড়ানোর আহ্বান জাতীয় কমিটির ব্যারিস্টার খোকনের অব্যাহতিপত্র প্রত্যাহার বড়াইগ্রামে পুকুরে বিষ দিয়ে ১০ লাখ টাকার মাছ নিধন পেরুতে বাস খাদে পড়ে নিহত ২৫ ‘৭ জানুয়ারি নৌকার প্রার্থীকে জেতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি’ যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি দোয়ারাবাজারে নিখোঁজের ২ দিন পর ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার খালিস্তানিদের পাশে থাকার বার্তা ট্রুডোর, উদ্বেগ ভারতের নাজিরপুরে বাসচাপায় নিহত ১

সকল