ফেরারি
- মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ
- ১৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সূর্যটা প্রায় ঢলে পড়েছে। পিচঢালা রাস্তায় ঢের প্রতীক্ষায় শিপু। হরদম কল করেই যাচ্ছে। তবু ফোন তোলার নাম নেই রওজার। কী জানি, কী হলো! ধরা পড়ল না তো আবার! ভ্রু কুঁচকাল সে। বারবার চেষ্টা করে গেল অহেতুক। রাস্তার দু-ধারে সারিবদ্ধ দূর্বাঘাস। শিপু সাত-পাঁচ না ভেবে বসে পড়ল। টেনশনে হাতের মোবাইলটা নড়াচড়া করতে লাগল। ডায়ালারে হঠাৎ নখের খোঁচা পড়ল। আল জ্বলতেই নজর আটকাল রওজার মুখচ্ছবিতে। সদ্য তোলা ছবিটি। ক’দিন আগে নদী দেখতে গিয়েছিল দু’জন। কবি কবি ভাব করে তোলা রওজার সেই ছবি। বাহ, টানা টানা চোখ দুটোয় কী দারুণ দেখতে লাগছে ওকে।
না দেখে বিয়ে দুজনের। পারিবারিক সম্মতির বাইরে কিচ্ছু করার ছিল না। তবু মানিয়ে নিয়েছিল দুজনই। বাসরঘরে প্রেম। এরপর কতসব কাহিনী! এটা সেটা নিয়ে রোজ রোজ ঝামেলা। তবু দুজন দুজনকে চায়; ভালোবাসে। আলাদা হতে চায় না কখনো। কতবার যে রওজার বাবা উদ্যোগ নিলো; কিন্তু ওই সেই আগের ব্যাপার- মনও পোড়ে, সাধও জাগে!
এবার শক্ত অবস্থানে গেছেন রওজার বাবা। মেয়ের এমন হেঁয়ালিপনায় সায় দিলেন না তিনি। একেবারে ছাড়াছাড়িতে গিয়ে গড়াল ব্যাপারটা। শিপুর সে কী আকাশ-বাতাস ভারী করে কান্না! দেখার কেউ ছিল না। সবাই ওকে বোঝাল। তবু কিছুতেই রওজাকে ভুলতে পারল না। ওদিকে রওজার হাল তো আরো বেগতিক। নতুন এক ছেলের নাম্বার দেয়া হলো। তার সাথে বিয়ের তোড়জোড় চলল। শিপুকে ভুলে থাকার সব আয়োজন করা হলো। কিন্তু কিছুতেই কোনো কাজ হলো না। আহারে জীবন! শিপু-রওজার প্রেমময় যাপিত জীবন।
হঠাৎ শিপুর মোবাইলটা বেজে উঠল। ঘোরটা কেটে গেল নিমেষেই। স্ক্রিনে পরিষ্কার ভেসে উঠল রওজার ছবি। ফোন তুলল।
‘আরে, বড় ঝামেলা হয়ে গেছে। কোনোমতে আম্মুকে ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছি। এখন রিকশায়। মিনিট পাঁচেক লাগবে হয়তো। সামান্য একটুখানি দাঁড়ান।’ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক শ্বাসে কথাগুলো বলল রওজা। শিপু টিকিট ক্যান্সেল করল। টাকা ভাঙতি করে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াল। পুলিশ টহল দিচ্ছে। লোকজনের বেশ আনাগোনা আশপাশে। কেমন ভয় ভয় লাগছে। ক্রমেই গলা শুকিয়ে আসছে। জলের বোতল নিলো শিপু। এরই মধ্যে একটা রিকশা এসে দাঁড়াল।
‘আমার কাছে ভাঙতি নেই। ভাড়াটা মিটিয়ে দেন।’ তড়িঘড়ি কণ্ঠে রওজা বলল। শিপু ভাড়া মেটাল। রওজা চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইল। শিপুকে বাসের টিকিট কাটতে বলল। পশ্চিমাকাশে সূর্য ডুবি ডুবি করছে এখন। ঢাকাগামী একটা গাড়ি এসে দাঁড়াল। শিপু এগিয়ে গেল। ৮০০ টাকার দুটো টিকিট নিলো। গাড়িটা দাঁড়াবে না। ওদের হাতেও সময় নেই। পালাতে হবে। এটাই মোক্ষম মুহূর্ত। সময়ক্ষেপণ না করে চটজলদি চড়ে বসল। জানালার পর্দাগুলো ভালো করে টেনে দিলো। যেন কেউ দেখতে না পায়।
সিটে বসতেই রওজা বড় এক্সাইটেড। নিজের মাথাটা শিপুর কাঁধে সঁপে দিলো। আহা, কী দারুণ ব্যাপার! এই তো দুদিন আগে যাদের সম্পর্ক ছেদ হলো, কী করে আজ তারা একাকার হলো! ভাবতে লাগল দু’জনে। গাড়ি এগিয়ে চলছে দ্রুতবেগে। শিপু-রওজার ভাবনায় যেন কিছুতেই ছেদ পড়ল না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা