২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কুয়াশা ভেজা সেই রাত!

-

এখনো কুয়াশা ভেজা রাতগুলোতে পেছনের স্মৃতিগুলো বারবার উঁকি দিয়ে আমাকে অস্তিত্বের জানান দেয়। আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক বাড়ি পড়েই নিলাদের বাড়ি। কিশোরের মোহটা আমার নিলাকে ঘিরেই তৈরি হয়েছিল। নিলা বয়সে আমার থেকে দুই বছরের ছোট ছিল। ভালো লাগার কথা তাকে কখনো বলা হয়ে ওঠেনি। তবে নিলা আমার চোখের চাহনি আর মনের আকুতি বুঝতে পারত। আমরা যখন মুখোমুখি হতাম তখন সে নিজেও ভীষণ লাজুক লতা হয়ে যেত।
এভাবে ভাবনার আকাশে বিচরণ করতে করতে আমাদের অনুভূতিগুলো প্রখর থেকে আরো প্রখর হয়ে উঠেছিল। দিন, দিন কাছে যাওয়ার জন্য আমাদের অনুভূতিগুলো শুধু ছটফট করে অস্থির হয়ে উঠত। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য মায়া শক্তির প্রভাবে আমরা তেমন কাছে যেতে পারতাম না। তবে আড়চোখে একজন আরেকজনকে দেখার প্রতিযোগিতা থেমে থাকত না। কিশোর পেরিয়ে যখন যৌবনে পদার্পণ করলাম এই মন তখন পুরোপুরি নিলার প্রেমে পাগল সৈনিকের মতো এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছিল। নিলার অনুভূতিও সেরকম হয়ে উঠেছিল বুঝতে পেরেছিলাম। তবে সব কিছু অপ্রকাশিতই রয়ে গিয়েছিল।
আমি একজন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র মাত্র। নিলা পরিপূর্ণভাবে বিয়ের পাত্রী হয়ে ওঠার সব যোগ্যতা অর্জন করে নিলো। এ সমাজের রীতি অনুযায়ী প্রতিনিয়ত তার বিয়ের ঘর আসা শুরু হলো। একদা পাকা কথাও হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এসব শুনে শুনে আমার কণ্ঠ শুধু রোধ হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা যেন আমার নেই। নিলা সে সময় ঘর থেকে কম বের হওয়া শুরু করল। বের হতো না বললেই চলে। প্রথার আইন তার ওপর সব ধারা মোতাবেক কার্যকর করা হয়েছিল।
তবুও অনেক চেষ্টার পর এক মিনিট সময় পেয়েছিলাম কিছু বলার জন্য। সে রাতে চার পাশ ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল। আমি আর নিলা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। একজনের নিঃশ্বাসের শব্দ আরেকজনকে যেন আঘাত করে যাচ্ছিল! আমি নীরবতা ভেঙে জানতে চাইলাম,
Ñএভাবে ছেড়ে যেতে পারবে?
Ñকিইবা করার আছে?
Ñচলো আমরা প্রতিবাদ করি। আমাদের অধিকারের কথা জানান দিই!
Ñএই সমাজের সাথে, সমাজের মানুষের সাথে আমরা পেরে উঠব না।
Ñতা হলে বিয়ে ভেঙে দাও! আমি ক্ষোভ ঝাড়লাম।
Ñকতকাল এভাবে টিকতে পারব? বলেই নিলা চলে গেল।
আমার জন্য বেঁধে রাখা এক মিনিটও শেষ হয়ে গেল। কুয়াশাসিক্ত রাতে শীতের আমেজের মাঝেও আমি ঘামছিলাম। প্রকৃতি আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারল না। যেদিন নিলা লাল শাড়িতে চলে যচ্ছিলÑ সে রাতও আকাশ কুয়াশায় ঘেরা ছিল।হ


আরো সংবাদ



premium cement