২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনের আবেগ আজ ক্ষত কেন

-

‘সমাজের আবেগ আজ ক্ষত কেন?’ স্থূল তর্কে সোশ্যাল মিডিয়া আজকাল রমরমা। এসব তর্কগুলো, বিষয়গুলো কী তা নিশ্চয় আমার তুলে ধরার অপেক্ষা রাখে না। আর লেইট পারসন নামে একটা লিস্ট থাকে, আমি বারবার তার দলে। ফোর জি স্পিড ইন্টারনেট টেন জি স্পিড হয়ে মুহূর্তের মধ্যেই জানান দিয়ে আসে পুরো পৃথিবী। দিন ক’দিন পর একটা পুরনো তারিখ নিয়ে চোখে ধরা দেয় আমি আর আমার মতো কিছু মানুষের। কিছুটা কৌতূহল, কিছুটা রাগ অথবা কিছুটা বিরক্ত কিংবা সময় কাটিয়ে দেয়ার নেশায় সব আলস্য ঢেলে দেই এসব ভাইরাল ভিডিও অবলীলায় দেখতে। কতজনের কত কমেন্টস, আমি নিরপেক্ষ, কমেন্টস ঝাড়ি না। সস্তাজনের সস্তা কমেন্টস, আমার আলস্য মন তা করতে চায় না।। অনেকে হয়তো বলে বসবেন, এটা কী বললাম? কত নামীদামি সেলিব্রেটি রয়েছেন তারাও কি হালকা তর্কে রমরমা! যুক্তিবিদ্যার যুক্তি দাঁড় করিয়ে হয়তো আমাকে ঠিক প্যাঁচে ফেলে দেবেন। কিন্তু মশাই, আমি আগেই তো বলেছি, আমি আলস্য ব্যক্তি।
সত্যি বলতে কি, যাচ্ছে তাই লোকে ভরে গেছে সোশ্যাল মিডিয়া। হাতেগোনা আছেন ক’জন ভালো মানুষ, গুণী মানুষ। হয়তো কারোর মনে প্রশ্ন হচ্ছেÑ দেশের মানুষ দেশের সম্মানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সুতরাং যাই করুক দেশমাতার গর্ভেই এরা রবে। আর খারাপ বলে এ দেশের খারাপের সংখ্যা বাড়িয়ে লাভ কী? এ দেশে তো আমরাও আছি। হ্যাঁ থাকি। ওই যে বললাম, ভালোরা আছে বলেই মন্দ লোকের প্রকাশ। কিন্তু তা বলে বলতে বাধা নেই মন্দরাই চুঁঁইছে আকাশ।
আসলে দোষটা তাদের নয়। দোষ সমাজের আবেগের। চোখের। মানুষ তার জন্ম থেকেই নিজের অজান্তেই বেদনা, কষ্ট, দুঃখ, পরাজয়, ঘৃণা আর ঘৃণিত জিনিসকে বেশি প্রাধান্য দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তার দরুন মানুষ ভালোটাকে টপকে মন্দটাকে কাছে টানে।
মানুষের আবেগ যতদিন পরিবর্তন হবে না ততদিন সমাজের আবেগেরও পরিবর্তন হবে না। আজকাল ভাইরাল ভাইরাল খেলায় মেতেছে কুরুচিপূর্ণ আবেগ। মাত্র ছয় অক্ষরের শব্দ (ঠধরৎধষ) ভাইরাল ৯ বর্ণের সেলিব্রেটি (ঈবষবনৎরঃু) শব্দটিকে খুন করেছে। করোনার মতোই ভয়াবহ এ ভাইরাল শব্দটি। সেলিব্রেটি অর্থ দাঁড়ায়Ñ কীর্তি, যশ, খ্যাতি। যা ভালো কাজের দিকনির্দেশ করার মডেল হয়।
অপর দিকে, ভাইরাল অর্থ দাঁড়ায়Ñ বৈরাগ্য যা অনলাইন বিপণনের উত্থান। এর অব্যয়রূপ হয় দুষ্ট, দূষিত। তার প্রমাণ আমরা নিজ চোখেই দেখে যাচ্ছি। ব্যতিক্রম বলে একটা কথা থাকে। সে সুবাদে দু-একটা ঘটনা আসলেই ঘটনা। সেলিব্রেটি হতে কারোর ৩০ বছর আর ভাইরালে কাউকে করে দিচ্ছে মাত্র ৩০ মিনিটে। তার জন্য প্রখ্যাত না বিখ্যাত? প্রতিভাশীল না উদ্যোক্তা তা ম্যাটার না। ম্যাটার হলো ফেসবুকে লাইভে এসে যত অকারেন্স হবে তত ভাইরাল, তত সেলিব্রেটি! আর চিল যুগে এসব সেলিব্রেটিরা প্রতিনিয়ত সুগন্ধযুক্ত মসলায় রোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়া টানা হেঁচড়া করছে। হাতকে কন্ট্রোল করতে না পারলে রূপকথার গল্প লিখুন আমার মতো।
খ্যাতির প্রচার হোক কিন্তু অপখ্যাতির প্রচার নয়।
আরোগ্য লাভ করুক আমাদের মন।

 


আরো সংবাদ



premium cement