২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঈদের স্মৃতি চা রা গ ল্প

-

রাশেদের মা ওগো রাশেদের মা, রাশেদ ফোন করছে একটু আগে। ফোনে বলছে ও গাড়িতে উঠছে।
তাড়াতাড়ি করে রাশেদের বিছানা সাজাও।
ওর ঘরটা ভালো করে ঝাড়– দিও।
আজ কত মাস পরে ছেলে বাড়িতে আসবে।
আলম মিয়ার মন আজ অনেক ভালো! তার একমাত্র ছেলে রাশেদ ঢাকা শহরে গার্মেন্টে চাকরি করে। সব সময় তেমন একটা ছুটি মেলে না। তাই মন চাইলেও বাড়ি আসতে পারে না। রাশেদের বাড়ি অনেক দূরে, উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলায়।
আলম মিয়া গরিব মানুষ, ছেলেটার পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। তবে অভাবের কারণে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার পরেও পড়ালেখা এগিয়ে নিতে পারেনি। বাবা- মায়ের সংসারের দুঃখ দূর করতে রাশেদ চাকরি নেয় গার্মেন্টে। অনেক দিন পরে ছেলে বাড়িতে আসবে। সালমা বেগম আজ মনের সুখে রান্না করছে!
ডাল, আলুভর্তা রাশেদের ভীষণ প্রিয়, সাথে ডিম ভাজি। একটু পরপর রাশেদ বাবা-মায়ের সাথে ফোনে কথা বলছে। এবার ঈদে অনেক দিনের ছুটি পেয়েছে রাশেদ। আর কয়েক ঘণ্টা পরে প্রিয় বাবা-মায়ের কোলে ফিরবে, আহা! কতদিন পরে গাঁয়ের সোঁদা মাটির ঘ্রাণ নাকে ভাসবে! মায়ের হাতে রান্না করা সুস্বাদু সব খাবার খাবে! পুকুর পাড়ের উত্তরের বড় আমগাছের পাকা পাকা আম পেড়ে খাবে। গ্রামের বন্ধুদের সাথে রাত জেগে আড্ডা হবে।
আরো কত কিছু ভাবছে আপন মনে বাসের জানালার কাছের সিটে বসে। একের পর এক বাস চলছেই...। রাশেদ ফোন কলে আবার কথা বলল মায়ের সাথে, আর তিন ঘণ্টা পরেই বাড়ি ফিরছে। রাশেদের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে, ভাত আর ডাল রান্না করল সালমা বেগম।
আপন মনে এগিয়ে চলছে রাশেদদের বাস।
হঠাৎ করে কিছু বুঝে ওঠার আগেই, প্রচণ্ড রকম একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বিকট শব্দ করে, রাশেদদের বাস গড়িয়ে গড়িয়ে চলে যায় খাদে। একটু পরে লোকের ভিড় জমে, গাড়ির ভেতর থেকে ভেসে আসে মানুষের করুণ আর্তনাদ। লাল-লাল তাজা রক্তের স্রোত বয়ে যায় ...। গাড়ির ভেতর থেকে একে একে টেনে হিঁচড়ে বের করা হয় অনেক জনকে। সেদিন দুর্ঘটনায় পড়ে অনেক লোকের ক্ষতি হয়। কয়েকজনের প্রাণহানিও ঘটে। টিভিতে বিশেষ বুলেটিনে বারবার দেখান হয় সেই দুর্ঘটনা। সালমা বেগমের বুকটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে ওঠে। রাশেদের ফোনে বারবার ফোন করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। সুন্দরভাবে মেয়েলি কণ্ঠে কে যেন বলে, দুঃখিত এই মহূর্তে আপনার...।
বাড়িজুড়ে কান্নার রোল পড়ে, আলম মিয়া শত চেষ্টা করেও ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারল না। দেখতে দেখতে রাত গভীর হয়ে এলে, হঠাৎ টিভির নিচে বড় বড় অক্ষরে শিরোনাম লেখা উঠল।
সড়ক দুর্ঘটনায় রাশেদ নামের একজন তরুণও মারা গেছে। আলম মিয়ার বুঝতে বাকি রইল না... ওনার ছেলে আর বেঁচে নেই।
সালমা বেগম তখনো বিলাপ করে কান্না করছে।
ছেলের জন্য, ভাত, ডাল, আলুভর্তা আর ডিম ভাজি নিয়ে অপেক্ষায় বসে আছে।
অথচ তখনো সালমা বেগম জানত না, একটু পরেই হয়তো তার ছেলে আসবে। তবে ঈদের আনন্দ ভাগ করতে নয়। সাদা কাফনে মোড়ানো একটি লাশ হয়ে। শোকাহত মন নিয়ে বিদায় জানাতে হবে সবাইকে।

সফিপুর, গাজীপুর


আরো সংবাদ



premium cement