কাশ্মিরের লওয়ামার আত্মঘাতী হামলার আবহে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের ভারত সফর ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছে দেশটিতে।
বুধবার সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সামলান (তিনি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় এমবিএস নামে পরিচিত) এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি গভীর সমস্যা। এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে সৌদি আরব সবরকম সাহায্য করবে। ভারতের পাশে আছে সৌদি আরব। একথা বললেও পাকিস্তান, মাসুদ আজহার কিংবা পুলওয়ামার আত্মঘাতী হামলা সম্পর্কে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স কোনো মন্তব্যই করেননি।
এদিকে বুধবার কংগ্রেস সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করে জানতে চেয়েছে আগের রাতে সৌদি প্রিন্সকে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রী সব প্রোটোকল ভেঙে নিজেই হাজির হলেন কেন এয়ারপোর্টে?
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সূরযওয়ালা বলেছেন, সৌদি আরবে গিয়েও মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করেছিলেন মোদিজি। গতকালও বিমানবন্দরে সলমন নামতেই তাকে আবার আলিঙ্গন করলেন। এতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু দিনের শেষে সৌদি আরব কেন পাকিস্তান সম্পর্কে একটিও মন্তব্য করল না? ভারতে আসার আগেই তিনি পাকিস্তানে গিয়ে ইমরান খানের সঙ্গেও একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে নিজেকে পাকিস্তানেরই রাষ্ট্রদূত হিসাবে বর্ণনা করে প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে সৌদি আরবকে ভারত পাশে পায়নি সন্ত্রাসের প্রশ্নে।
উল্লেখ্য সৌদি প্রিন্সের পাকিস্তান বিরোধিতা পশ্চিম এশিয়ার কূটনীতির সমীকরণে অবশ্যই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু বুধবার সরাসরি পাকিস্তান প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেননি মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি বলেছেন, ভারত ও অন্য প্রতিবেশিদের সঙ্গে সন্ত্রাসের প্রশ্নে তারা সবরকমভাবেই পাশে থাকবে। আর সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ভারতকে সবরকমভাবে সহায়তা করা হবে। পাকিস্তানের নাম না করেও প্রধানমন্ত্রী মোদি যৌথ বিবৃতিতে স্পষ্ট পুলওয়ামার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে নিন্দা করেন। কিন্তু সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের বিবৃতিতে বলা হয় তার দেশ প্রয়োজনে গোয়েন্দা বার্তা আদানপ্রদান করবে সন্ত্রাস প্রতিরোধে। এবং সেটা শুধু ভারতের সঙ্গেই নয়, প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গেও।
তিনি বলেছেন, আমাদের সবাইকে একই সঙ্গে লড়াই করতে হবে সন্ত্রাসের মেকাবিলায়। বস্তুত সৌদি আরব ভারতের বহু পুরনো বন্ধু। তাই আরও কড়া কোনো মন্তব্য আশা করেছিল ভারত। যদিও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সময় পুলওয়ামার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন সৌদি প্রিন্সও।
যুবরাজকে স্বাগত জানাতে প্রটোকল ভাঙলেন মোদি
এনডিটিভি ও রয়টার্স
নয়াদিল্লিতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাতে সরকারি প্রটোকল ভেঙেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাধারণত বিদেশী কোনো অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রধানমন্ত্রীর বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা না। তার প্রতিনিধি হিসেবে কোনো কর্মকর্তা বা সরকারের কম গুরুত্বপূর্ণ কোনো মন্ত্রীর যাওয়ার কথা। কিন্তু মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় সৌদি যুবরাজ নয়াদিল্লির বিমানবন্দরে পৌঁছলে সেখানে উপস্থিত হয়ে মোদি তাকে স্বাগত জানান।
যুবরাজ বিমান থেকে নেমে আসার পর তাকে জড়িয়ে ধরে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়,’ টুইটারে দুই নেতার করমর্দনের একটি ছবি দিয়ে এ মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার। ‘প্রটোকল ভাঙার’ জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসাও করেছেন তিনি। এর আগে পাকিস্তান সফরেও উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স। দেশটিতে দুই দিনের সফর শেষ তিনি ভারতে যান। গত বৃহস্পতিবার কাশ্মিরের পুলওয়ামায় ভয়াবহ এক প্রাণঘাতী হামলার পর পাকিস্তানকে দায় দেয় ভারত। এ ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা চলার মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ দু’টি সফরে এলেন সৌদি যুবরাজ। এই আঞ্চলিক উত্তেজনা তার এ সফরটিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা