২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতিসঙ্ঘে ইমরান খানের চার দফা

-

২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, দিনটি ছিল শুক্রবার। সময় তখন রাত ৮টা বেজে ৩৫ মিনিট পার হয়ে গেছে। বছরের অন্যান্য শুক্রবারের এই সময়টিতে আমি যা করি, সে রাতেও তেমনটি করছিলাম। অর্থাৎ রাতের খাবার টেবিলে পরিবেশনের জন্য জীবনসঙ্গিনীকে বারবার তাগিদ দিচ্ছিলাম। সে রাতের রসনার ঘ্রাণ নেয়ার পাশাপাশি ইউটিউবে কী যেন দেখছিলাম। ঠিক সেই সময়ে ইউটিউবে দেখতে পেলাম, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে তার ভাষণ সরাসরি প্রচারের জন্য সিগন্যাল দিতে আরম্ভ করেছে।

আমি খানিকটা এলোমেলো মনে কী যেন ভাবলাম- তারপর ইমরান খানের ভাষণ শুনতে শুরু করলাম। তার ভাষণের শুরুটা শোনামাত্র আমি বুঝলাম যে, তিনি হয়তো এমন কিছু বলবেন যা ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে এর আগে কেউ বলেননি। তিনি ধীর লয়ে এবং অত্যন্ত সাবলীলভাবে রাজসিক ভঙ্গিমায় হেঁটে যখন বক্তৃতা মঞ্চের দিকে আসছিলেন, তখন তার অঙ্গভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ এবং মুখের অভিব্যক্তি জানান দিচ্ছিল, মানবজাতির ইতিহাসের অন্যতম যোদ্ধা জাতি হিসেবে পরিচিত পাঠান বংশের ঐতিহ্য এবার বিশ্বমঞ্চ কাঁপাবে। তিনি বক্তব্য শুরু করলেন বিসমিল্লাহ অর্থাৎ পরম করুণাময় এবং অপার দয়ালু আল্লাহর নামে। তার বক্তব্যের দ্বিতীয় বাক্যটি ছিল সূরা আল ফাহিতার চতুর্থ নম্বর আয়াতÑ ইয়া কানা বুদু ওয়া ইয়া কানাস তায়িন অর্থাৎ আমরা কেবল তোমারই গোলামি করি এবং কেবল তোমারই সাহায্য কামনা করি! ইমরান খানের বক্তব্যের শুরুতে তিনি যেভাবে কুল কায়েনাতের মালিক আল্লাহর প্রশংসা এবং আল্লাহর প্রতি তার নির্ভরতার বিষয়টি উপস্থাপন করলেন তা দেখে এবং শোনে আমার শরীরের রক্ত গরম হয়ে গেল।

আমার পঞ্চ ইদ্রিয় একসাথে সজাগ হয়ে উঠল। পেটের ক্ষুধার তাগিদ এবং জীবনসঙ্গিনীর পরিবেশিত খাবার উপেক্ষা করে আমি ইমরানের বক্তব্য শোনার জন্য পড়ার টেবিলে গিয়ে সংরক্ষিত চেয়ারে বসে একজন ক্ষুধার্ত ছাত্রের মতো পুরো পঞ্চাশ মিনিট বাইশ সেকেন্ড ধরে গভীর মনোযোগ দিয়ে বক্তব্যটি শুনলাম। তার বক্তব্যের সারমর্ম- বক্তব্যের মধ্যে নিহিত অলৌকিক শক্তিমত্তা, দিকনির্দেশনা, আবেগ-আকাক্সক্ষা-আকুতি ইত্যাদি দেখে আমার চিন্তার জগতে এমন আলোড়ন শুরু হলো, যার প্রতিক্রিয়ায় সারাটা রাত এক ধরনের অস্থিরতার মধ্যে কাটালাম।

প্রধানমন্ত্রী ইমরান তার বক্তব্যে চারটি দফা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরলেন, যার গুরুত্ব বর্তমানে কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না এবং তার উপস্থাপিত দফাগুলোর কারণে পুরো পৃথিবী উত্তাল হয়ে পড়েছে- পৃথিবীবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, কিন্তু সমাধানের ব্যাপারে কারো কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা পাচ্ছিল না। তিনি তার উপস্থাপিত চারটি দফার মধ্যে বৈশ্বিক আবহাওয়া, পানিবণ্টন, ভারত-পাকিস্তান দ্বি-পাক্ষীয় সমস্যা, যুদ্ধের দামামা, ইসলামোফোরিয়া, দ্বীন ইসলাম ও ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, ইসলামী ঐতিহ্য, উম্মতে মোহাম্মদীর মানবিক বৈশিষ্ট্য, কুরআন-হাদিসের দর্শন, রাসূল সা:-এর মর্যাদা, পশ্চিমা দুনিয়ার খ্রিষ্ট ও ইহুদিবাদে আক্রান্ত মানুষের মনমানসিককতা, হিটলার মুসোলিনির নাৎসিবাদ-ফ্যাসিবাদ, ভারতের নরেন্দ্র মোদির আরএসএস অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ইতিহাস এবং এই তিনজন লোকের মতাদর্শ ও বিশ্বাসের প্রতিক্রিয়ার কারণে ত্রিশের দশকের দুনিয়া এবং বর্তমানের দুনিয়ায় কিভাবে ঘৃণার বীজ বাড়তে বাড়তে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিষবৃক্ষে রূপান্তরিত হচ্ছে, তা চমৎকারভাবে তুলে ধরেন।

ইমরান তার বক্তব্যে পশ্চিমা ধনতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার নির্দয় এবং সীমাহীন অনৈতিক রাষ্ট্রীয় লোভ; মানুষের মধ্যকার তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার প্রবৃত্তি এবং ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের সম্পর্কে নেতিবাচক ঘৃণার মনোভাবের বিষয়গুলো যেভাবে উপস্থাপন করেন তা আমি আমার জীবনে কোনোদিন দেখিওনি কিংবা শুনিওনি। পুরো বক্তব্যে ইমরান খান যেসব শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করেছেন তা কেবল অতি উঁচু মার্গের শিক্ষিত এবং চিন্তাশীল রাষ্ট্রনায়কের পক্ষেই সম্ভব। তিনি বক্তব্য দিতে গিয়ে যেভাবে আবেগকে প্রকাশ করেছেন, তা কেবল বিবেকবান সাহসী ও সংবেদনশীল সেনাপতির পক্ষেই সম্ভব। তিনি নির্ভীকভাবে যেসব কথা বলেছেন, তা কেবল সেইসব লোকের পক্ষেই সম্ভব যারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো সাহায্যকারী এবং সিদ্ধান্তদাতা মাবুদ নেই এবং সবারই উচিত একমাত্র তারই ইবাদত ও বন্দেগি করা।

এবারের জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে ইমরানের ভাষণ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এ কারণে যে, সাম্প্রতিক দুনিয়ার তাবৎ রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে এশিয়া মহাদেশকে কেন্দ্র করে এবং সেই এশিয়ার রাজনীতির প্রধানতম কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক শক্তিটির নাম পাকিস্তান। পাকিস্তান চীনের সাথে থাকার কারণে ভারত চীন বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটি উচ্চারণ করতে পারছে না। আফগান সমস্যার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয় রাষ্ট্রই পরস্পরের সাথে পাল্লা দিয়ে পাকিস্তানের সাথে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। এই দুই পরাশক্তি তাদের সর্বোত্তম বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন এবং নেভিগেশন প্রযুক্তি পাকিস্তানকে দিয়ে দিয়েছে। ফলে পাকিস্তানের যুদ্ধাস্ত্রের ভাণ্ডার এখন তাদের শত্রুদের জন্য ভয়ঙ্কর নিদ্রা হরণকারী উপাদানে পরিণত হয়েছে।

চীন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে পাকিস্তানের অন্য দু’টি কৌশলগত বন্ধুরাষ্ট্র হলো ইরান এবং সৌদি আরব। বিশ্ব রাজনীতি এবং বিশ্ব কূটনীতির তিনটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ কেবল পাকিস্তানই সৃষ্টি করতে পেরেছে, যা অন্য কোনো দেশ কল্পনাও করতে পারে না। তারা একই সাথে চীন ও আমেরিকার কৌশলগত অংশীদার। অন্য দিকে, দা কুমড়া সম্পর্কের ইরান ও সৌদি আরব উভয় রাষ্ট্রই পাকিস্তানের কৌশলগত অংশীদার। এ ছাড়া আমেরিকা ও রাশিয়া এই দুই পরাশক্তির সাথে সমান্তরাল কৌশলগত অংশীদারিত্ব একমাত্র পাকিস্তান ছাড়া অন্য কোনো রাষ্ট্রের নেই।

আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় পাকিস্তানের উল্লিখিত কৌশলগত সামরিক অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি মালয়েশিয়া এবং তুরস্কের সাথে নীতি-নৈতিকতা ধর্মীয়বোধ, মানবতা এবং ইসলামাইজেশনের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ ব্যক্তিক্রমী এক ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। মুসলিম দুনিয়ার সুপার পাওয়ার হিসেবে দুই-তিন বছর ধরে পাকিস্তান সাম্রাজ্যবাদী সুপার পাওয়ার দেশগুলোর দাম্ভিকতা লোভ এবং জুলুম অত্যাচারের মনোভাব পরিহার করে কেবল মানবিকতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং নীতি-নৈতিকতার ওপর ভিত্তি করে সব মুসলিম রাষ্ট্র, মজলুম মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং দ্বীন ইসলামের ওপর যে সহমর্মিতা দেখিয়ে যাচ্ছে তাতে দেশটির প্রতি বিশ্ববাসীর অতীত দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি, দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের বিগত সত্তর বছরের ধারাবাহিক সফলতা, বিচার বিভাগের যুগান্তকারী ধারাবাহিক ভূমিকা, শক্তিশালী বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের যুগপৎ ভূমিকার কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, যুদ্ধবিগ্রহ, অভ্যন্তরীণ গোলযোগ, জঙ্গিবাদ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সুদীর্ঘকালের সামরিক শাসন সত্ত্বেও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল।

এরই ধারাবাহিকতায় ইমরান খানের মতো ক্যারিশম্যাটিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষিত সজ্জন, সংগ্রামী গণতান্ত্রিক মনমানসিকতার নেতা যখন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হলেন তখন পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে একের পর এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে থাকল, যার ধারাবাহিকতায় তার সাম্প্রতিক ভাষণ নিয়ে বিশ্বময় আলোচনার ঝড় উঠেছে।

জাতিসঙ্ঘের সেদিনের ভাষণে ইমরান খান এমন কী কথা বলেছিলেন, যার কারণে আমার মতো ঘুমকাতুরে ভোজনবিলাসী পেটুক খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুমের কথা ভুলে গিয়ে তার ভাষণে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছিলাম! আমার মনে হয়, তিনি আমার চিন্তাচেতনা এবং বিশ্বাস-ভালোবাসার স্থানগুলোকে ব্যাপক ঝাঁকুনি দিতে পেরেছিলেন। তিনি আমার না বলা কথাগুলোকে বিশ্বের দরবারে বলতে পেরেছিলেন এবং আমার কষ্ট-বেদনা-হতাশা ও ক্ষোভের ওপর আসা-আশাক্সক্ষা এবং স্বপ্নের পরশ বুলিয়ে প্রশান্তির মলম লাগাতে পেরেছিলেন। তিনি যখন বলছিলেন যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে দুর্নীতিবাজরা টাকা-পয়সা বিভিন্নভাবে লোপাট করে পশ্চিমা দুনিয়ায় যায়, তখন সেই দেশগুলো কেন তাদের জামাই আদরে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নাগরিকত্ব দেয়। তৃতীয় বিশ্বের চোর-ডাকাত, লুটেরা এবং দেশদ্রোহীরা কিভাবে শত শত বিলিয়ন ডলার নিজ নিজ দেশ থেকে পাচার করে ধনী দেশগুলোর অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলছে এবং তৃতীয় বিশ্বকে দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর বানিয়ে একটি অসম পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর অর্থনীতি চালু করছে!

ইমরান খান তার ভাষণে অর্থপাচার বা মানি লন্ডারিং সম্পর্কে পশ্চিমাদের দ্বিমুখী নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে একটি পয়সা লেনদেন হলে তারা অর্থপাচারের জিকির তুলে পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অথচ কেউ যদি কোনো দেশে সর্বনাশের দাবানল সৃষ্টি করে পশ্চিমা দেশে অর্থপাচার করে তবে সেটা কোনো অন্যায় হয় না। তিনি বিশ্বব্যাপী আবহাওয়ার পরিবর্তন, অভিন্ন নদীসমূহের পানি বণ্টনের সমস্যা। বড় বড় নদীর উৎসমূলে অর্থাৎ পর্বতচূড়ায় আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে পানির প্রবাহে ভারসাম্যহীনতা, নদী তীরসমূহে বহুবিধ দূষণ, সমুদ্র দূষণ ইত্যাদি নিয়ে ব্যতিক্রমী তথ্য-উপাত্তসহ নিজের বক্তব্য, মতামত ও সুপারিশগুলো তুলে ধরেন। তিনি কোনো দেশকে এককভাবে দায়ী না করে অথবা কাউকে সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য দাদাগিরি করার অনুরোধ না জানিয়ে জাতিসঙ্ঘকে সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়নপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানান।

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তেজনা, পাকিস্তান-আফগানিস্তান সমস্যা এবং তালেবান-আলকায়েদা-জঙ্গিবাদ ইত্যাদি প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইমরান খান তার সেন্স অব হিউমার, মেধাদীপ্ত উপস্থাপনা ও প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত সব দর্শককে সম্মোহিত করে তোলেন। তিনি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপির সৃষ্টি হয়েছে আরএসএস থেকে। আরএসএসের মূলমন্ত্র হলো হিন্দুদের শ্রেষ্ঠত্ব, কর্তৃত্ব ও প্রভূত্ব সৃষ্টি করা এবং ভারতবর্ষের অতীতকালের শাসক মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের ঘৃণা করা। আরএসএসের নীতি নির্ধারকেরা হিটলারের নাৎসিবাদ ও মুসোলিনীর ফ্যাসিবাদের আদলে সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে এবং তারা নাৎসিদের জাতীয় পোশাক ব্রাউন শার্টের অনুকরণে একই রঙের পোশাক পরিধান করে।

ভারতীয় আরএসএস এবং তাদের বংশবদ বিজেপি পশ্চিমাদের ইসলামোফোবিয়াকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে নিজ দেশে মুসলিম নিধন চালাচ্ছে- কাশ্মিরে ইতিহাসের ভয়াবহতম নৃশংতা চালাচ্ছে এবং সব কিছুর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আরো একটি যুদ্ধ বাধার পাঁয়তারা করছে। আরএসএসের বাই প্রডাক্ট নরেন্দ্র মোদি হিটলারের গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারের আদলে দেশে বিদেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে সবরকম প্রপাগান্ডা চালিয়ে ইসলামোফোবিয়াকে আরো উসকে দিচ্ছেন। ইমরান খান কাশ্মির সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে বিশ্বকে জানান যে, আজ পঞ্চান্ন দিন ধরে ৯ লাখ ভারতীয় সৈন্য কার্ফু দিয়ে ৮০ লাখ কাশ্মিরি মুসলমানকে পশুর মতো বন্দী করে রেখেছে এবং সেখানে ভারতীয় সৈন্যরা কাশ্মিরি মা-বোন এবং ভাইদের সাথে কী আচরণ করছে তা বিশ্ববাসীকে জানতে দিচ্ছে না।

ভারত এক দিকে কাশ্মিরি মুসলমানদের সব অধিকার হরণ করে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা চালাচ্ছে; অন্য দিকে কাশ্মির ইস্যুর সাথে ইসলামোফোবিয়া যোগ করে পশ্চিমাদের ঘৃণাকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ বাধানোর জন্য পাঁয়তারা করছেন।

ইমরান খান ভারতের প্রতি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পাকিস্তান আক্রান্ত হলে তারা যুদ্ধের মাধ্যমেই তার জবাব দেবেন। তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেন যে, ইসলামের মহত্ব, ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা, ইসলাম ধর্মের ভিত্তিতে এবং মুসলমানেরা প্রায় এক হাজার বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যুগান্তকারী রাষ্ট্রব্যবস্থা, ইতিহাস সৃষ্টিকারী সুশাসন স্থাপন, কিংবদন্তির ন্যায়বিচার, সাক্ষী সহমর্মিতা এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের সে ভুরি ভুরি উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছে সেগুলোর মূলে রয়েছে কুরআন-হাদিসভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনার মূলমন্ত্র যার শুরুটা হয়েছিল মদিনা রাষ্ট্রের মাধ্যমে। তিনি আল্লাহর রাসূল সা:-এর সম্মান মর্যাদা এবং তাঁকে ঘিরে বিশ্বের একশত ত্রিশ কোটি মুসলমানের আবেগ অনুভূতি এবং ভালোবাসার ধরন বোঝাতে গিয়ে বলেন যে, মুসলমানরা তাদের নবীকে হৃদয়ে ধারণ করে। ফলে নবীকে নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত লাগে। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী শারীরিক আঘাত সহ্য করা যায়- কিন্তু হৃদয়ের আঘাত কেউ সহ্য করতে পারে না। সুতরাং রাসূল সা: সম্পর্কে মুসলমানদের আবেগ বুঝতে হলে হৃদয়বান হতে হবে। ইমরান খান আরো অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, যা আলোচনা করতে গেলে রীতিমতো মহাকাব্য হয়ে যাবে। মহান আল্লাহর দরবারে ইমরান খানের জন্য দোয়ার আর্জি জানিয়ে এ লেখায় ইতি টানছি।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement