২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সম্মানিত র‌্যাব ডিজি, প্লিজ!

সম্মানিত র‌্যাব ডিজি, প্লিজ! - ছবি : সংগ্রহ

র‌্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ যখন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার ছিলেন, তখন তাকে উদ্দেশ করে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। বিষয় ছিল- ধানমন্ডি লেককেন্দ্রিক অপরাধী চক্র এবং জনদুর্ভোগ। নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে- পুরো ধানমন্ডি লেক এলাকা পুলিশি তৎপরতায় এমনভাবে অপরাধীমুক্ত হয়েছিল, যা সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা কল্পনাও করতে পারেননি। বেনজীর আহমেদের সেদিনকার তৎপরতা এবং পরবর্তী ফলোআপের জন্য তিনি যেমন অনেক মানুষের দোয়া পেয়েছিলেন, তেমনি একজন লেখক হিসেবে আমার পাওনাও কম ছিল না। রাষ্ট্রশক্তির ক্ষমতার কেন্দ্রে যদি যোগ্যতম লোক দায়িত্বরত থাকেন, তবে সেখানে জনসেবার এক অনন্য রসায়ন সৃষ্টি হয়। আমাদের হতভাগা দেশের বহু বছরের ইতিহাসের একটি সাধারণ ঐতিহ্য হলো- এ দেশের মানুষ বড়ই কৃতজ্ঞ। তারা যদি কারো কাছ থেকে উপকৃত হন- বিশষত যদি তা হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মকর্তা অথবা জনপ্রতিনিধি কাছ থেকে, তবে জনগণ কোনো দিন তাদের ভুলে যায় নাÑ এক অপরিসীম দোয়া, কৃতজ্ঞতা এবং বিনয়মিশ্রিত ভদ্রতায় দেশবাসী তাদের উপকারীদেরকে স্মরণে রাখে।

বেনজীর আহমেদের বর্তমান পদবি তার অতীতের অন্য সব পদ-পদবির তুলনায় অধিকতর ইফেকটিভ, বর্ণাঢ্য এবং জৌলুসপূর্ণও বটে। অন্য দিকে, তার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্ব এবং প্রজ্ঞা তাকে জনসেবা দেয়া এবং জনআকাক্সক্ষা পূরণের অনন্য এক প্রান্তিকে এনে দাঁড় করিয়েছে, যা অল্পসংখ্যক রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তার কপালে জোটে। সুতরাং একজন সংবেদনশীল লেখক হিসেবে আমার মনে হচ্ছে- রাজধানী ঢাকার কয়েকটি জনদুর্ভোগ সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হয়তো সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান পাওয়া যাবে। সুতরাং সম্মানিত র‌্যাব ডিজির সুদৃষ্টি তথা ডাইরেক্ট অ্যাকশনের জন্য জনদুর্ভোগগুলো তুলে ধরা হলো-

র‌্যাব ডিজিকে প্রথমেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্পর্কে কিছু বলতে চাই। তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন পুরো উদ্যান ছিল যেন ঢাকা শহরের প্রাণ। সকাল ও সন্ধ্যায় সেখানে প্রাণের মেলা বসত। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা সব শিক্ষক সদলবলে হাঁটতেন। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে বেশ কিছু জ্ঞানপিয়াসী ছাত্রও হাঁটতেন। তারপর সন্ধ্যা হলে ছাত্র-শিক্ষকেরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কয়েকটি স্থানে গোল হয়ে বসে শিল্প-সাহিত্য-বিশ্ব রাজনীতি ও বিশ্ব মানবতা নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আড্ডা জমিয়ে তুলতেন। প্রাণবন্ত সেসব আলোচনা কখনো কখনো রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলত। ড. আহম্মদ শরীফ, ড. হুমায়ুন আজাদ, আহমদ ছফা প্রমুখ প্রতিবাদী মুক্তমনা শিক্ষক নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে প্রায়ই উদ্যানে হাঁটতেন এবং হাঁটা শেষে আড্ডা জমাতেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি যে কত বড় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে, তা বোঝার জন্য সন্ধ্যা রাতের দিকে র‌্যাব ডিজি যদি টিএসসির উল্টোদিকে অর্থাৎ শহীদ ডা. মিলন চত্বরের বিপরীতে যে গেটটি রয়েছে সেটি দিয়ে উদ্যানের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করেন তবে তিনি গা ছমছম করা এক ভয়ঙ্কর পরিবেশ এবং বেশ কিছু বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন। তিনি যদি জাতীয় চার নেতার মাজারের পাশের গেট দিয়ে ঢুকে রমনা কালীমন্দিরের সামনের পুকুর পাড়, নাট্যমঞ্চ এবং আশপাশের এলাকা দিয়ে একটু বেখেয়ালি হয়ে এদিক ওদিক তাকান এবং তার শরীরে যদি তখন র‌্যাবের পোশাক না থাকে তবে, তিনি এমন কিছু প্রস্তাব পাবেন অথবা এমন কিছু দৃশ্য দেখবেন যার ফলে লজ্জায় তার কান লাল হয়ে যেতে বাধ্য হবে। তিনি যদি একাকী থাকেন এবং একটু আধটু প্রতিবাদ অথবা ভদ্রলোক হওয়ার চেষ্টা করেন তবে তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাবেন অভদ্রতা-নোংরামি এবং নষ্টামি কাকে বলে এবং তা কত প্রকার ও কী কী?

তিনি যদি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা অথবা ৮টার দিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অথবা শিশুপার্কের পাশের গেট দিয়ে একটু ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন তবে দেশের হালনাগাদ হালহকিকত বেশি ভয়ঙ্কর নাকি ডেঙ্গু মশার কামড় বেশি ক্ষতিকর, তা অনায়াসে নিখুঁতভাবে মূল্যায়ন করতে পারবেন। এরপর তিনি শিশুপার্ক পার হয়ে ফুটপাত ধরে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত যেতে যেতে যতবার হাতের বাম দিকে তাকাবেন এতবারই তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন, রুচিবোধ এবং চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য ও নোংরামি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন। তিনি যদি দয়া করে রমনা পুলিশ কন্ট্রোল কেন্দ্রের সদর দরজার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়ান তারপর ধীরলয়ে শাহবাগ থানার দিকে হেঁটে গিয়ে থানার গেটের সামনে কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তবে তার মধ্যে এক ধরনের নষ্টানজিক কাব্য প্রতিভা নড়াচড়া শুরু করবে। সবশেষে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার উল্টোদিকের গেটটি দর্শন করে টিএসসির দিকে হাঁটলেই তার কর্তব্য স্থির করে ফেলতে পারবেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রধান সমস্যা হলো- প্রতিটি গেটকেন্দ্রিক অবৈধ দোকানপাট স্থাপন এবং সেসব দোকানের বেচাকেনার আড়ালে এমন সব কর্মকাণ্ড করা, যার জন্য ঢাকা শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী, কুখ্যাত মাদকসেবী, প্রতিতা, পতিতার দালাল ও খদ্দেরদের সরগরম উপস্থিতির কারণে পুরো পরিবেশ নগরবাসীর জন্য নরকের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। প্রতিটি গেটের সামনে এমনতর পরিবেশ থাকায় কোনো ভদ্রলোক পার্কে ঢুকতে সাহস পান না। ফলে পুরো পার্ক অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়ে যায়। অপরাধীরা সন্ধ্যার পর পার্কের মধ্যে এক অন্ধকার রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং সেই রাজত্বে মাদক সেবন, মলত্যাগ, যৌনকর্ম এবং খাদ্যগ্রহণ একই সাথে এমন সামান্তরালভাবে চালাতে থাকে, যা কোনো নিকৃষ্ট পশুরাও সাধারণত করে না।

র‌্যাব ডিজিকে এবার সোহরাওয়ার্দী উদান রেখে রাজধানীর অভিজাত এলাকার একটি অন্ধগলির মধ্যে নিয়ে যেতে চাই। গলিটির নাম নায়েম রোড। ধানমন্ডির বিখ্যাত এক নম্বর রোডের পেছনে নায়েম রোডের সাথে একসময় তিনটি সংযোগ রাস্তা ছিল। প্রথম সংযোগ ছিল এক নম্বর রোডের সাথে। দ্বিতীয় সুংযোগ কলেজ রোডের সাথে এবং তৃতীয় সংযোগ মিরপুর রোডের সাথে। প্রভাবশালী লোভী দখলদারদের কারণে দুটো সংযোগ বন্ধ হয়ে বর্তমানে কেবল মিরপুর রোডের সাথেই সংযোগটি চালু রয়েছে। ফলে ঢাকা শহরের প্রাচীন বনেদি এলাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি এখন অন্ধগলিতে পরিণত হয়েছে। এই গলিটির মধ্যে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকা কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ছাড়াও রয়েছে নায়েম নামের একটি স্বনাম ধন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান, যারা সারা বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

নায়েম রোডের তথাকথিত অন্ধগলির মধ্যে ১০-১২টি ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লট রয়েছে যা কি না ধানমন্ডি-নিউমার্কেট তৈরি হওয়ার আগেই কেনা হয়েছিল। অভিজাত সেই প্লটগুলোতে বহুতল ভবন বানিয়ে বর্তমানে প্রায় আড়াই শ’ পরিবার বসবাস করছে। এই গলির সাথে রয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের বিশাল সীমানাপ্রাচীর, যা কিনা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গলিটি দিনের বেলায় অত্যন্ত ব্যস্ত এবং সরগরম থাকে। কিন্তু সন্ধ্যার পর রীতিমতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। বাহিরাগত মাস্তান-নেশাখোর এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীরা সদলবলে নিজেদের গাড়ি অথবা মোটরসাইকেলে সন্ধ্যার পরপরই পুরো গলিপথ দখল করে নেয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত নিজেদের কর্মকাণ্ড চালাতে থাকে। তাদের ভয়ে নায়েম রোডের বাসিন্দা এবং ঢাকা কলেজ-টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, নায়েম গভঃ ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকেরা সন্ধ্যার পর চলাফেরা করতে ভয় পান। ইতিমধ্যে অনেকে নাজেহাল এবং মারধরের শিকার পর্যন্ত হয়েছেন।

নায়েম রোডের বিভিন্ন স্থানে মাস্তানেরা বেশ কয়েকটি চা-সিগরেটের দোকান বসিয়ে নিয়েছে। এসব দোকানে চা সিগারেট ছাড়াও আরো কী সব পাওয়া যায়, তা নিশ্চয় আপনার অজানা নয়। মাস্তানের ভয়ে ওইসব অবৈধ দোকানদারের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতেও সাহস পায় না। মাদক, সন্ত্রাস এবং মাস্তানদের রক্তচক্ষুর কারণে নায়েম নামক অন্ধগলিতে সন্ধ্যার পর কবরস্থানের মতো গা ছমছম করা রাক্ষুসে পরিবেশ বিরাজ করে। তারা সুযোগ পেলেই বিভিন্ন অপ্রীতিকর এবং সহিংস ঘটনা ঘটায়। কয়েক দিন আগে মহল্লার আদি বাসিন্দা জিং জিয়াং চাইনিজ রেস্টুরেন্ট গ্রুপের মালিকের মেয়ের জামাই শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসে মাস্তানদের হাতে মারধরের শিকার হন। সাম্প্রতিক সময়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের লোকজন মাস্তানদের হাতে নিগৃহীত হন। কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর পুলিশে অভিযোগ করলে পুলিশ এসে দোকানগুলো বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সপ্তাহখানেক পর অজানা কারণে দোকানগুলো ফের চালু হয়ে যায় এবং দুষ্কর্মের হোতারা স্বদম্ভে ফিরে এসে নতুন উদ্যমে তাণ্ডব শুরু করে দেয়।

র‌্যাবের ডিজি মহোদয় যদি দয়া করে নায়েম রোডের অবৈধ দোকানগুলো চিরতরে বন্ধ করে দেন এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধী চক্রের শাস্ত বিধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তবে ঢাকা কলেজের ত্রিশ হাজার মেধাবী ছাত্র এবং তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকা, নায়েমের হাজার হাজার প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং তাদের প্রশিক্ষকেরা, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষকা মিলে লক্ষাধিক অসহায় বনিআদম জাহেলদের জাহেলিপনা থেকে বেঁচে যায়।

আমরা আজকের নিবন্ধের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। র‌্যাব ডিজিকে আরেকটি বিরক্তিকর এবং ক্ষেত্র বিশেষে অবমাননাকর জনদুর্ভোগের কথা বলে আজকের প্রসঙ্গের ইতি টানব। র‌্যাব ডিজি যদি বেলা ১১টা-১২টার দিকে সংসদ ভবনের সামনের মণিপুরীপাড়া সড়কটি দিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে যান অথবা রমনা পার্কের সামনের রাস্তা দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট পার হয়ে মৎস্য ভবনের উল্টো দিকের ট্রাফিক সিগন্যালে আটকা পড়েন তবে হিজড়াদের অত্যাচার যে কতটা অবমাননাকর হতে পারে তার বাস্তব নমুনা দেখতে পাবেন। তারা গাড়িতে বসা মহিলা বা পুরুষ যাত্রীর সাথে এক ধরনের আচরণ করে, আবার রিকশা-হোন্ডা অথবা সিএনজি স্কুটারের যাত্রীদের সাথে ভিন্ন আচরণে অতিষ্ঠ করে তোলে। প্যান্ট শার্ট পরা লোকজন, পাজামা-পাঞ্জামি পরা হুজুর প্রকৃতির যাত্রী অথবা নারী যাত্রীদের সাথে তারা বাহারি বদমায়েশি আচরণে আশপাশের লোকজনকে তামশা দেখায় কিন্তু যার সাথে তারা খারাপ আচরণ করে সে বোঝে কত ধানে কত চাল উৎপন্ন হয়।
হিজড়াদের বিরক্তিকর আচরণের কয়েকটি উদাহরণ দিলেই আপনি পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন। তারা যখন কোনো গাড়ির যাত্রীকে টার্গেট করে তখন সজোরে গাড়ির দরজার গ্লাসে চাপড়িয়ে চাঁদা দাবি করতে থাকে। কেউ না দিলে অথবা তাদের কথায় ভ্রূক্ষেপ না করে গ্লাস না খুললে হিজড়ারা অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে থু থু ছিটিয়ে গাড়ির দরজার গ্লাস অথবা উইন্ডশিটে নিজেদের ক্ষোভের বাহ্যিক প্রকাশ ঘটায়। তারা যদি কোনো পাজামা-পাঞ্জাবি পরা রিকশা যাত্রীকে পায় তবে প্রথমেই যাত্রীর রানের ওপর হাত রেখে হালকাভাবে সুরসুরি দিতে দিতে হাতটি যাত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে নিয়ে যেতে থাকে এবং সাথে চলতে থাকে যৌন সুরসুরিমূলক অপমানকর টিপ্পনি। কেউ যদি পাঁচ টাকা দশ টাকা দিয়ে রেহাই পেতে চায় তবে হিজড়ারা টিপ্পনি কেটে বলে তোমার মোচাটা এত বড় আর টাকা দিলা এত কম। রিকশার যাত্রী যদি কোনো সম্ভ্রান্ত ভদ্র মহিলা অথবা সুন্দরী যুবতী হন তবে হিজড়ারা টাকা আদায়ের চেয়ে ইভটিজিংকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে অপরাধমূলক আচরণ শুরু করে দেয়।

প্রিয় র‌্যাব ডিজি! আমি হিজড়াদের অপতৎপরতার নমুনা বর্ণনা করতে গিয়ে দুটো স্পটের কথা বললাম, আপনি অবশ্যই জানেন যে, মহানগরীর কোথায় কোথায় হিজড়াদের তৎপরতা রয়েছে। আপনি এ কথাও জানেন যে, কারা হিজড়াদের মদদ দেয় এবং কারা হিজড়াদের কাছ থেকে নিয়মিত বখরা নিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হিজড়াদের অপকর্মের অভয়ারণ্য হিসেবে লিজ দেয়। আপনি হয়তো পুরো সমস্যা রাতারাতি দূর করতে পারবেন না- তবে ইচ্ছে করলে দুই-চারটি স্পটে কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অপরাধীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পারেন, যা অব্যাহত থাকলে হিজড়াসংক্রান্ত জনদুর্ভোগ অবশ্যই কমবে।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য


আরো সংবাদ



premium cement