২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ট্রাম্প কি বন্ধু হারা হয়ে গেছেন?

ডোনাল্ড ট্রাম্প - ফাইল ছবি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ঘরে বাইরে প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে। বিশ্বরাজনীতির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পারদের মাত্রা এখন তলানিতে। হঠাৎ করে কেউ যদি প্রশ্ন করেন- আমেরিকানদের প্রিয় দেশ কোনটি? উত্তর আসবে- ইসরাইল, এরপর হয়তো বলবে দক্ষিণ কোরিয়া বা অস্ট্রেলিয়া। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অনেক বন্ধু রাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ, তুরস্ক, পাকিস্তান, সিরিয়া ও চীন যে অর্থে মিত্র, সে অর্থে তারা আর মিত্র নয়। সৌদি আরব আমেরিকার মিত্র ও কৌশলগত বন্ধু দেশ। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমেরিকা সহায়তা না দিলে সৌদি বাদশাহ সালমান দুই সপ্তাহও টিকবেন না’। এতে সালমান ও যুবরাজ ক্ষেপে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়েছেন। রিপাবলিকান ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই সাতটি মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এটি এক অভ্যাস যে, তিনি ভীতি প্রদর্শন আর আইনকে অবজ্ঞা করে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে চান। এহেন আচরণে বহু দিনের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন। এ দিকে, ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিকে ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’গুলোর একটি বিবেচনা করা হয়। সেটি পর্যন্ত ট্রাম্প একতরফাভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। অথচ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই এ চুক্তি সই করা হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছিলেন, আমেরিকার শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক, বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নিয়ে সুদীর্ঘ আলোচনার পর ইরানের সাথে পরমাণু সমঝোতা চুক্তিতে সই করেছিল ওয়াশিংটন। সেই সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অর্থ, ইউরোপীয় ঘনিষ্ঠ মিত্রদের হাতছাড়া করা। এখন কার্যত এটাই হয়েছে। আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেরুসালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা অংশগ্রহণ করেননি। ইসরাইলে বিভিন্ন দেশের ৮৬ রাষ্ট্রদূতের মধ্যে মাত্র ৩০ জন এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকের প্রতিনিধিরা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। ইইউর বাকি প্রতিনিধিরা প্রত্যাখ্যান করেছেন আমন্ত্রণ। রাশিয়া, মিসর ও মেক্সিকোর প্রতিনিধিরাও থাকেননি মার্কিন দূতাবাসের উদ্বোধনকালে। ইসরাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রেডম্যান বলেছেন, জেরুসালেমে দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ইসরাইলের সাথে স্বার্থের কারণে নেয়া হয়নি; বরং যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে। গত ৬ ডিসেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সব নিন্দা প্রতিবাদ ও আন্তর্জাতিক আইন-কানুন উপেক্ষা করে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করে সেখানে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নিয়েছেন।

জেরুসালেমে ইসরাইলের রাজধানী স্থানান্তর নিয়ে জাতিসঙ্ঘ ভোটাভুটিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মাত্র সাত ভোট দিয়েছে পক্ষে এবং এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল ১২৮ রাষ্ট্র। এরপরও ট্রাম্প বিশ্ববাসী ও মুসলিম জনগোষ্ঠীর সেন্টিমেন্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দূতাবাস জেরুসালেমে নিয়ে গেলেন। এতেও তিনি আন্তর্জাতিকভাবে হেয় হয়েছেন। হয়েছেন সঙ্গী হারা।

আমেরিকার শীর্ষপর্যায়ের প্রায় ২০০ জন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ভোট দিয়েছেন। ‘প্রেসিডেন্টস অ্যান্ড এক্সিকিউটিভ পলিটিক্স প্রেসিডেনসিয়াল গ্রেটনেস’ জরিপ ২০১৮ সালের ফলাফল অনুযায়ী, সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট হলেন এই ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে গৃহযুদ্ধে জড়িত করা সাবেক প্রেসিডেন্ট জেমস বুকাননের থেকেও নিচে ট্রাম্প। বুকাননের স্কোর ১০০ তে মাত্র ১২.৩৪, ট্রাম্প আরো নিচে!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমসে এক উপসম্পাদকীয় নিবন্ধে মার্কিন প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একজন ‘অস্থিরমতি’ ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে বলছেন, তাকে হোয়াইট হাউজ থেকে সরাতে কেবিনেট সদস্যদের মধ্যেই একটি ‘নীরব প্রতিরোধ’ চলছে। তারই ফল সম্প্রতি মধ্যবর্তী নির্বাচনে পাওয়া গেছে। পূর্ববতী প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে প্রতিনিধি পরিষদে বিরোধী দল রিপাবলিকানদের রমরমা অবস্থা ছিল। অথচ ট্রাম্পের আমলে তা পুরোপুরি ডেমোক্র্যাটদের হাতে চলে গেল। ওই নিবন্ধে আরো বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘অনৈতিক’ ও ‘আবেগতাড়িত’ আচরণের কারণে অপরিণামদর্শী নানা সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে মার্কিন প্রশাসনকে। ট্রাম্পের সাফ কথা, নিউ ইয়র্ক টাইমস তাকে পছন্দ করে না এবং তিনিও তাদের পছন্দ করেন না। ‘তারা খুবই অসৎ মানুষ।’ সাংবাদিকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রায়ই অপর্যাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।

ট্রাম্প পররাষ্ট্রনীতিতে ‘বলপ্রয়োগ’ করে থাকেন। সেটা ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, ন্যাটো জোটের সেনা মোতায়েন বা প্রত্যাহার, বাণিজ্যনীতি- যা কিছু হোক না কেন। ট্রাম্পের কোনো কোনো কাজ পুরো চিন্তাধারা ও প্রক্রিয়াকে আঘাত করে।

ওয়াশিংটন ও মস্কো একসাথে কাজ করলে বিশ্বের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অগ্রগতি হবে- এটি বাস্তব কথা। কিন্তু এ কেবল দুই দেশের হাতেই রয়েছে ১৩ হাজার পরমাণু অস্ত্র। তারা নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো ক্ষমতার অধিকারী। নিজ স্বার্থের বিপরীত হলে কোনো সিদ্ধান্তকে তারা কখনো বাস্তবের আলো দেখাবে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘দুইজন দুইজনার’ এই তত্ত্ব অচল ও ক্ষণস্থায়ী। ডোনাল্ড ট্রাম্প কখনো রোষে ফেটে পড়েন। তিনি গরম ও উল্টা কথা বলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। তার কথায় যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, তুরস্ক, পাকিস্তান ও কাতার অনেক বিষয়ে আস্থা হারিয়েছে। তিনি এমন কথাও বলেছেন- প্রয়োজনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসঙ্ঘ ও ন্যাটো জোটকে ‘ব্লক’ করে দেবেন। ন্যাটো সদস্যদের ঠিকমতো খরচ প্রদান না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের ‘নিরাপত্তার জন্য’ কাজ করবেন না। তিনি চিরাচরিত বন্ধুদের মন্দ বলে থাকেন। ইউরোপকে ‘শত্রু’ বলে অভিহিত করেছেন। জার্মানির সাথে রাশিয়ার বিরাট ধরনের গ্যাস ও তেল ব্যবসা রয়েছে। ট্রাম্প মত প্রকাশ করেন, ‘জার্মানি রাশিয়াকে বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার প্রদান করছে। এর বিহিত হওয়া উচিত।’ তিনি আরো বলেন, ‘জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা একজন সুপার স্টার। তবে সেটা উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়ার আগ পর্যন্ত।’

আরো বলেছেন, ‘নির্বাচনে মার্কেলকে কেউ হারাতে না পারলেও উদ্বাস্তুরা তাকে হারিয়ে দিয়েছে।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘খুব অসৎ’ ও ‘দুর্বল চিত্তের’ মানুষ বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন। কাতারে আমেরিকার সবচেয়ে বড় আঞ্চলিক সেনা ঘাঁটি রয়েছে। তারপরও কাতারকে তিনি ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। এটাও সত্য যে, ওই সেনা ঘাঁটির সেনারাই মাত্র কয়েক ঘণ্টায় কাতার দখল করে নিতে পারে। এই ভীতি থেকে ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার সাথেও কাতার কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করেছে। ১৯৫০ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার ‘প্রাণের বন্ধু।’ কমিউনিটি উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়াকেও শাসিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে মুক্ত বাজার বাণিজ্যের চুক্তি স্বাক্ষর করবেন না, যতক্ষণ উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে সুরাহা না হচ্ছে।’

ট্রাম্পের রাজনৈতিক পদক্ষেপে বিশ্ব মঞ্চ থেকে যেন ছিটকে পড়ছে আমেরিকা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন থেকে তিনি সদস্য পদ প্রত্যাহার করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) ট্রেড ডিল। এই চুক্তিতে ১১টি দেশ অন্তর্ভুক্ত এর মধ্যে রয়েছে- শক্তিশালী চীন, জাপান, মেক্সিকো এবং কানাডা। ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকেও সরে আসেন। পূর্বসূরি ওবামা এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ট্রাম্প ইউনেস্কো ও জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সংস্থা থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে এনেছেন। তিনি মনে করেন ইউনেস্কোতে শুধু চাঁদা দেয়া ছাড়া আমেরিকার জন্য আর কোনো কাজ নেই। তিনি অনেক সংস্থাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যেকোনো সময় আমেরিকা, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অরগানাইজেশন (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা), নাফটা (নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) এবং ন্যাটো থেকে পদত্যাগ করতে পারে। এসব ঘোষণায় ও কর্মকাণ্ডে দেশে-বিদেশে ট্রাম্প প্রশাসন বিপুল সমালোচনায় পড়েছে।

ট্রাম্পকে যারা ছেড়ে গেছেন এবং ট্রাম্প যাদের বিদায় দিয়েছেন তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ও রিপাবলিকানদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা রয়েছেন। যেমন- ডেভিড সুলকিন, ম্যাকমাস্টার, রেক্স টিলারসন, গ্যরি কোহেন, রব পটার, স্টিভ বেনন প্রমুখ। তিনজন শীর্ষ স্থানীয় মহিলা ট্রাম্পকে ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে- আছেন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অ্যাডভাইজার দিনা পাওয়েল। ইনি তিন দশক ধরে কাজ করছিলেন। অজ্ঞাত কারণে তিনি পদত্যাগ করেন। অ্যাকটিং অ্যাটর্নি জেনারেল শেলি ইয়ট মাত্র ১১ দিন ট্রাম্পের সাথে কাজ করেছিলেন।

কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন কেউ তা বলতে পারে না। হোপ হিক কমিউনিকেশন ডাইরেক্টর, সুন্দরী ও লাবণ্যময়ী। তিনিও ইস্তফা দিয়েছেন এবং এর কারণও জানা যায়নি। কিছুদিন আগে ভূমি ও খনিজসম্পদমন্ত্রী রায়ান জিঙ্ক পদত্যাগ করেছেন। সম্প্রতি সিরিয়া থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহারসংক্রান্ত বিরোধে ট্রাম্পের ‘আদর্শ সৈনিক’ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস এবং আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিযুক্ত মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা ব্রেট ম্যাকগুর্ক পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ ২২ জানুয়ারি ইউরোপ ও ইউরো এশিয়াবিষয়ক কূটনীতিক, সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েস মিশেল পদত্যাগ করেছেন। যারা পদ ছেড়েছেন, সবাই শীর্ষ কর্মকর্তা। জুনিয়র ও স্টাফদের তালিকা আরো বড়। সব মিলিয়ে শতাধিক কর্মকর্তা ট্রাম্পকে ছেড়ে গেছেন। বলা হচ্ছে- আগামী দিনগুলোতে আরো অনেক কর্মকর্তা ট্রাম্প থেকে বিদায় নেবেন।

সিএনএন পরিবেশিত এক খবরে প্রকাশ, জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এতে দেখা যায়- প্রেসিডেন্টের কাজের প্রতি সমর্থনের হার কমে মাত্র ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নেয়া জরিপেও একই চিত্র উঠে এসেছে।

পররাষ্ট্রনীতি ও বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের ইইউ বিরোধী সিদ্ধান্তে ইইউ নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ইউরোপে নতুন কর ও শুল্ক বসানোর কথায় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লদ জাঙ্কার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক শক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শক্তিশালী পররাষ্ট্র নীতির মাধ্যমে ইইউকে অবশ্যই একটি শক্তিধর ‘আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়’ হিসেবে দাঁড় করাতে হবে। পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে বৈরিতাহীনতার শর্তকে বিলোপ করার প্রস্তাবও করেছেন তিনি। এতে ২৮ সদস্য দেশ একমত না হলেও সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। বাণিজ্য শুল্ক ও জলবায়ু পরিবর্তন চুক্তির মতো বিভিন্ন বিষয় এবং ইরানের পরমাণু চুক্তি প্রশ্নে ব্রাসেলস ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা দেয়ায় জাঙ্কার বলেছেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইইউর আরো শক্তিশালী ভূমিকা গ্রহণের উপযুক্ত সময় এখনই। ইউরোকে বিশ্ব মুদ্রা হিসেবে এগিয়ে নিতে ইইউকে আরো শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরোপকে তার জ্বালানির ৮০ শতাংশ মূল্য ডলারে শোধ করতে হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তারা তাদের জ্বালানির মাত্র দুই শতাংশ আমদানি করে থাকে।’ এদিকে, ট্রাম্প যুক্তরাজ্যের ব্রেক্সিটের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে ছেড়ে দিচ্ছে, এটা ভালো কথা।’

দু’টি মহাযুদ্ধ ইউরোপ থেকেই শুরু হয়েছিল। এজন্য ইউরোপীয়ানরা চায় না, আরো একটি মহাযুদ্ধ ইউরোপের মাটিতেই সঙ্ঘটিত হোক। এ জন্য তারা সজাগ। কিন্তু ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির কারণে সীমান্ত সঙ্কটে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সম্প্রতি প্যারিসে গঠিত হয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনাবাহিনীর জোট। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ একটি ‘প্রকৃত ইউরোপীয় সেনাবাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে এ জোট গঠিত হলো। এ জোট মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর জোটের সাথে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে কি না, বলা যাচ্ছে না। এ বাহিনীর মূল নিয়ন্ত্রণে জার্মানিকে রাখতে চায় ফ্রান্স।

ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন এ উদ্যোগ প্রায় ৭০ বছরেরও বেশি বয়সের মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাটোর সাথে ‘দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করবে না’ বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতায় ইউরোপের উদ্বেগের আংশিক প্রতিক্রিয়া এ জোট। জার্মানির সাথে কয়েক মাস ধরে আলোচনার পর ইউরোপিয়ান ইন্টারভেনশন ইনিশিয়েটিভ প্যারিসে আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করল। নতুন জোটকে জার্মানি, বেলজিয়াম, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও পর্তুগাল স্বাগত জানিয়েছে। কেউ কেউ নিবন্ধ লিখে প্রকাশ করেছেন- কিভাবে ট্রাম্পের হাত থেকে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিকে রক্ষা করা যায়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক চুক্তি বা বিশ্ব ফোরামের কোনো তোয়াক্কা করেন না। আমেরিকার ঐতিহ্য ও রাজনীতির ধারার সাথে তার মতবাদ বা ডকট্রিন অনেক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক। তথাপি তিনি একজন ‘জাতীয়তাবাদী’। আমেরিকার সামরিক শক্তি ও ডলারের শক্তিতে তিনি তুষ্ট বলে মনে হয়। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে এ দু’টি ক্ষেত্রে আমেরিকা আরো ক্ষমতাশালী হোক, এজন্য তিনি সচেষ্ট। 
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার


আরো সংবাদ



premium cement