২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আবারো একজোটের সংসদ

-

দশম সংসদের মতো নবগঠিত একাদশ জাতীয় সংসদও ‘একজোটের সংসদ’ হলো। এর ফলে সংসদীয় গণতন্ত্রের বিকাশ ও সৌন্দর্যে যে ব্যত্যয় বিরাজ করছিল, তা আর ঘুচল না। এই প্রলম্বিত সংসদীয় ব্যবস্থা তথা এই পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থার মূল চেতনা বহুমতের সমন্বয় ও চিন্তার সংমিশ্রণে রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার সুফল থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত থেকে গেল। সংসদীয় ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনায় বিরোধী দলের ভূমিকা রাখার যে সুযোগ, সেটিও কার্যত থাকল না। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রের এই সঙ্কট শুধু সাম্প্রতিককালের নয়। এই পদ্ধতির শাসনব্যবস্থার প্রতি রাজনীতিবিদেরা মৌখিক সমর্থন ব্যক্ত করে থাকেন বটে। কিন্তু বাস্তবে তাদের ভূমিকায় সংসদীয় গণতন্ত্রের ব্যাপারে জোরালো সমর্থন ও প্রতিশ্রুতি অনুভব করা যায়নি। তাত্ত্বিকভাবে এটি স্বীকৃত যে, সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অর্থ হচ্ছে- দেশের রাজনীতির মূল প্রাণকেন্দ্র পার্লামেন্ট বা সংসদ। বাংলাদেশে এটা তত্ত্ব হিসেবে থেকে গেছে, বাস্তবে তা রূপ নিতে পারেনি। সংসদ কখনই আদর্শিক অবস্থানে না থাকার পেছনে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতার পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত ভূমিকারও ঘাটতি রয়েছে।

দশম সংসদের মতোই একাদশ জাতীয় সংসদও একজোটের সংসদ হলো। এর ফলে সংসদীয় গণতন্ত্র বিকাশের যে ব্যত্যয় ছিল, তা আর ঘুচছে না। এটা প্রলম্বিত হওয়ায় সংসদীয় ব্যবস্থা তথা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল চেতনা বহুমতের সমন্বয় ও চিন্তার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার সুফলতা থেকে দেশ বঞ্চিত থেকে গেল। সংসদীয় গণতন্ত্রের এই সঙ্কট শুধু সাম্প্রতিককালের নয়। আমাদের দেশের রাজনীতিকদের এই শাসন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ও প্রতিশ্রুতির অভাব থাকার কারণেই সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিকব্যবস্থা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাংবিধানিকভাবে এ ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত সংসদীয় কোনো পথে এগিয়ে আসতে পারেনি। মাঝে এই ব্যবস্থা পাল্টে ফেলা হয়েছিল। সংসদীয় ব্যবস্থার মূল চেতনার প্রতি দেশের রাজনীতিকদের প্রতিশ্রুতির অভাবের সাথে সাথে সংসদ কার্যকর করার ক্ষেত্রে যোগ্য পার্লামেন্টারিয়ানদের ঘাটতিও লক্ষ করা যায়।

সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি উত্তম দিক হচ্ছে, সরকারের জবাবদিহিতা গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় কাজে নির্বাহী ওই বিভাগের যে ভুলত্রুটি তা ধরে তাদের সঠিকপথে পরিচালিত করা। সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীদের দায়িত্বে বিষয় অবহিত হওয়ার জন্য সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে প্রচুর বিধি-বিধান রয়েছে। দশম সংসদে এসব বিধি-বিধানের আশ্রয় নিয়ে সরকারের কাজের জবাবদিহিতা করা হয়নি। এই সংসদের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, এর একটা মৌলিক কারণ হচ্ছে যারা সরকার চালাচ্ছেন আর যারা তাদের কাজের সমালোচনা করবেন, তারা হবেন ভিন্ন ভিন্ন দল ও জেটের। তারা সবাই যেহেতু একজোটের বা এক দলের, তাই এর জবাবদিহি কিভাবে হবে?

এই সঙ্কট একটি মুখ্য বিষয়। আর একাদশ সংসদেও এই সমস্যা থেকে যাচ্ছে। এর আগে নবম সংসদও আংশিকভাবে এবং দশম সংসদ পুরোপুরি এ রকমই ছিল। সদ্য নির্বাচিত একাদশ সংসদেও যদি সরকারের প্রতিপক্ষের কোনো অবস্থান না থাকে, তবে এই শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টি হবে হতাশার। রাষ্ট্রে তিন অঙ্গের একটি যদি সচল না থাকে তবে অন্য অঙ্গগুলোতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। আইনসভায় সরকারের যদি সুষ্ঠু জবাবদিহি না হয়, তবে সরকারের আচার আচরণে স্বাভাবিকভাবেই স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ ঘটবে। অথচ গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে যোজন দূরত্ব বিরাজ করে। আর বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ। এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম আন্দোলন করেছে। মানুষের এই গণতন্ত্র প্রীতিকে বারবার পুঁজি করে রাজনীতিকেরা ক্ষমতায় গেছেন বটে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে আজো গণতন্ত্র মরীচিকা হয়ে আছে এবং তা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে।


বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ প্রায় সর্বোতভাবে একজোটের হওয়ায় তা গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে বিদেশী মিডিয়ায় আশঙ্কা করা হয়েছে। এবার সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮টিতেই বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। জোটের প্রার্থীরা ৯৬ শতাংশ মার্জিনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে; যা কিনা নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সাধারণভাবে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রধান বিরোধীদলীয় জোটের নেতা ড. কামাল হোসেন এ নির্বাচনে হাজারো অনিয়মের কথা উল্লেখ করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেছেন।

কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচনের দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ না হওয়ায় ভোট পড়েছে অনেক। ভোটারদের অনুপস্থিতির সুযোগে জাল ভোট দেয়া হয়েছে বেশুমার। এ কারণেই মহাজোট প্রার্থীরা বিপুল মার্জিনে জয় পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নির্বাচন ছিল অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু ভোটের ফল দেখা গেল সব একতরফা। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি কিন্তু এমন ছিল না যে ভোটের ফলাফল এমন হবে। জনমতের পরিপ্রেক্ষিতে এই ফলাফল তাদের সাথে বস্তুত তামাশা করার শামিল। এবারের সংসদের ভোটের ব্যাপারে দেশে ও বিদেশে একটি ইতিবাচক আশাবাদ ছিল। বিশেষ করে সরকারি মহল থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছিল যে, তারা যেনতেনভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হতে চান না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, এই বক্তব্যের প্রায় পুরোটাই অসত্যবচন।

এখন দেশের যে অবস্থা তা একদলীয় সরকারের মতো এবং এতে দলীয়করণ সর্বগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। এদিকে রাষ্ট্র বন্দী হয়ে পড়ছে স্বার্থশিকারীদের হাতে। আমলাতন্ত্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের চেয়ে দলীয় আনুগত্য প্রবল হয়ে উঠছে। তারা জনগণের কল্যাণ এবং ন্যায়বোধে পরিচালিত হওয়ার চেয়ে অসৎ রাজনীতিকদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে পড়েছে। সাংবিধানিক নির্দেশনা হচ্ছে, সব নাগরিক রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়ানুগ আচরণ লাভ করবেন। কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বর্তমানে এটা দুরাশা হয়ে পড়েছে। দলীয় আনুগত্যের বিবেচনায় মানুষ এখন বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। বেকার তরুণ সমাজের হাতে কাজ দেয়ার বিষয়টি মানুষের একটি মুখ্য অধিকার। কিন্তু সে সুযোগ সৃষ্টি করতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। যা কিছু সামান্য সরকারি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে, সেখানে নিয়েগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক রঙের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। এসব প্রশ্নের জবাব কার কাছ থেকে পাওয়া যাবে?

একাদশ সংসদ নির্বাচনে যে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, এর তদন্ত ও সুরাহা করার আহ্বান জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক সমাজ থেকে। জাতিসঙ্ঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ এই আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্বে আমাদের নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, তা দূর করার জন্য কার্যকর তদন্ত খুবই জরুরি। কেননা গত সংসদের নির্বাচন নিয়ে গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি ছিল। এখন যদি এই সংসদের নির্বাচন নিয়েও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্ন থেকে যায়, তবে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হবে। ইতোপূর্বে সরকারের পক্ষ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি ছিল, তারা যেনতেন নির্বাচন চান না। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতির বাস্তব অনুশীলন দেখতে না পাওয়ায় এবং এখন যদি এর কোনো বিহিত ব্যবস্থা না হয়, তাহলে সরকারের প্রতি আস্থার যে অভাব রয়েছে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। সরকারের প্রতি যদি মানুষের আস্থাহীনতা বজায় থাকে, সে সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

সরকার যদি গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হয় এবং দেশকে স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত করতে চায় তবে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সহযোগিতা কামনা করতে হবে। এমন সহযোগিতা পেতে হলে তাদের অতীত ভূমিকা ও আচরণ সংশোধন করে নিতে হবে। সরকার তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির প্রতি আগে থেকে যে হামলা-মামলার পথ অনুসরণ করে এসেছে, তা থেকে সরে আসতে হবেই। বিএনপির এক নেতা সংবাদপত্রের কাছে বলেছেন, সারা দেশে তাদের অন্তত ২১ হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। এদের জেলে রেখে যদি সরকার বিএনপির সহযোগিতা চায়, তা কখনো পাওয়া সম্ভব হবে না। দেশে যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা সরকারকে দূর করতে হবে। সরকারকে মনে রাখা উচিত, নতুন আইনসভায় কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই। এ ছাড়াও সরকারের ভুলত্রুটির সমালোচনার জন্য গত সংসদে কোনো প্রতিপক্ষ ছিল না। এবারো অবস্থাটা একই। সেজন্য সংসদের বাইরে যে বিরোধী দল রয়েছে, সরকারকে ঠিক পথে চলার জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

বাইরের প্রতিপক্ষ যাতে কাক্সিক্ষত ভূমিকা রাখতে সুযোগ ও পরিবেশ পায়, সরকারকেই তা প্রস্তুত করতে হবে। আইনসভায় বিরোধী পক্ষ না থাকলে জবাবদিহিতার যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়, তার অন্যতম পরিণতি হচ্ছে দুর্নীতির প্রসার। এখন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়ে দেশকে রসাতলে নিয়ে যাচ্ছে এবং মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এর প্রতিবিধান হওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের বিজয়কে নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জনগণের ভূমিকা নিতান্ত গৌণ। এবার ভোটকেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। অথচ নির্বাচন শেষে দেখা গেল ভোটের বাক্সে উপচে পড়া ভোট। এটা সম্ভব হয়েছে দলের ক্যাডারদের কারসাজিতে। নির্বাচনে এমন আশ্চর্যজনক বিজয়ের জন্য অবশ্য সরকারকে তাদের ‘পুরস্কৃত’ করতে হবে। এসব নিবেদিতপ্রাণ কর্মীকে খুশি করা কোনো বৈধ পথে সম্ভব নয়। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তা করতে হবে। এতে দেশে যে অনিয়মের স্রোত প্রবাহিত, তা আরো গতিবেগ পাবে। বৈধ ব্যবসায়ীরা যে পথে চলছেন, তখন সে পথ আরো সঙ্কুচিত হবে। ক্যাডাররা নতুন এবং অভিজ্ঞতাহীন।

ফলে তাদের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। আর এদের মধ্যে অনেকেই কাজ পাওয়ার কাগজপত্র অর্থের বিনিময়ে অভিজ্ঞদের কাছে হস্তান্তর করবে। এতে নির্মাণ কাজের মান ভালো হবে না এবং সরকারের ব্যয় বাড়বে। এর ফলে জনগণের ঘাড়ে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপবে। প্রতিটি দল ও জোট নির্বাচনে জনগণের কাছে নির্বাচনী ইশতেহারে অনেক সুবচন উচ্চারণ করে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের পর বিজয়ী হয়ে তারা এসব ওয়াদার ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দেয় না। কথার কথা হিসেবে তা গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। এর হয়তো একটা কারণ হতে পারে। তা হলো, তারা জনগণের ভোটেরও তোয়াক্কা না করে অর্থ বলে পেশিশক্তির বলে বিজয়ী হয়েছে। তাই আগামী দিনে ভোট পাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বোধ নেই। যে পেশিশক্তির ওপর নির্ভর করে তারা জয় পেয়েছে, তাদের দিকে নজর দেয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব হিসেবে ওরা গ্রহণ করে নেবে। দেশের ক্ষমতাসীনদের সামগ্রিক চিন্তা থেকে মানুষের এই প্রত্যয়ই জন্মেছে যে, তারা এখন রাজনীতিকে জনসেবা হিসেবে নয়, বরং একটা পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
ndigantababor@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement