জিম্বাবুয়েতে শুরু জিম্বাবুয়েতে শেষ!

যাদের বিপক্ষে শুরু তাদের বিপক্ষেই হবে শেষ। যদি এই সিরিজ শেষেই মাশরাফি বিন মর্তুজা তার ক্যারিয়ারের যবনিকা টানেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই শুরুটা হয়েছিল মাশরাফির। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই হতে যাচ্ছে তার শেষ! এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল তরুণ মাশরাফির। শুধু টেস্টই নয়, ক্যারিয়ারের অভিষেক ওয়ানডে ও টি-২০ও খেলেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই। বারবার ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন, শঙ্কায় পড়েছে তার ক্যারিয়ার, তবুও মাশরাফি দমে যাননি, ফিরে এসেছেন আরও ভয়ঙ্করভাবে। তার শেষটা হতে পারে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে। যেটি হবে ৬ মার্চ।
অভিষেক টেস্টেই ৪ উইকেট শিকার করে নিজেকে চিনিয়েছিলেন মাশরাফি। এরপর একই সফরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক হয় তার। এরপর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বরাবরই বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করা এ পেসার ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশের পেস বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্যাট হাতেও দলের প্রয়োজনে ঝড় তুলেছেন তিনি। বাংলাদেশের জার্সিতে মাশরাফি ৩৬টি টেস্ট, ২১৭টি ওয়ানডে ও ৫৪টি টি-২০ খেলেছেন। টেস্টে ৭৮টি, ওয়ানডেতে ২৬৬টি ও টি-২০তে ৪২টি উইকেট শিকার করেছেন এ বোলার। ব্যাট হাতে টেস্টে করেছেন ৭৯৭ রান, ওয়ানডেতে ১৭৮৬ ও টি-২০ তে ৩৭৭ রান করার কৃতিত্ব আছে তার।
অবসর নিয়ে অনেকটাই দুই মেরুতে অবস্থান করছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা আর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবি চেয়েছিল মাশরাফিকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বিদায় দিতে। তবে বিসিবির সে চাওয়া আপাতত পূরণ করছেন না এই অধিনায়ক। অবসর নিয়েই ভাবছেন না মাশরাফি। সিলেটে ওযানডে সিরিজের পর মাশরাফি যে বিসিবির অটোমেটিক চয়েজ থাকবেন না সেটি কদিন আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল করতে পারলেই কেবল সুযোগ হবে দলে।
২০২৩ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে এখনই পরিকল্পনা সাজানো শুরু করছে বোর্ড। পাপন তার সর্বশেষ বক্তব্যে বলেছেন, জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর জাতীয় দলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি অধিনায়ক খুঁজবে তারা। ফলে অনেকটাই নিশ্চিত যে, এ সিরিজেই শেষ হচ্ছে মাশরাফির অধিনায়কত্বের অধ্যায়। তবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজের একমাত্র টেস্ট জয়ের পর পাপন বলেছেন, মাশরাফিকে অধিনায়ক রাখা হবে না এমন কথা তিনি বলেননি।
এ ছাড়া অনেকেরই ধারণা অধিনায়কত্ব হারানোর সাথে সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণাও দিতে পারেন মাশরাফি। ইতোমধ্যে নতুন বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করেছেন মাশরাফি। আর তাই ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন উঠেছে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেই মাশরাফি ইতি টানছেন ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের।
ক্রিকেটার মাশরাফিকে ইতিহাস যতটা মনে রাখবে, তার চেয়েও বেশি মনে রাখবে অধিনায়ক মাশরাফিকে। এ দেশের ইতিহাসের সেরা অধিনায়কের তকমটা নিজের করে নিয়েছেন তিনি। তার নেতৃত্বেই উত্থান ঘটেছে দেশের ক্রিকেটের। মাশরাফির অধিনায়কত্বে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্ট দু’টিতে যা বাংলাদেশের সেরা অর্জন। এ ছাড়া তার নেতৃত্বেই তিনটি এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার কৃতিত্ব রয়েছে টাইগারদের।
আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে প্রথমবার বাংলাদেশকে বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের স্বাদ দিয়েছেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বে ৮৫টি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে ৪৭টি ম্যাচেই জিতেছে টাইগাররা আর হেরেছে মাত্র ৩৬টিতে। দেশের আর কোনো অধিনায়কই ৫০ ভাগের বেশি ম্যাচ জেতাতে পারেননি।
ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখেছেন মাশরাফি। টেস্ট ও টি-২০ থেকে অবসর নিয়েছেন আগেই। খেলছেন শুধুই ওয়ানডে। সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিলেও বল হাতে সফলতার মুখ দেখেননি। বাংলাদেশও বিশ্বকাপে আশানুরূপ ফল পায়নি। এরপরই গুঞ্জন ওঠে, অবসরে যাচ্ছেন মাশরাফি। বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সিরিজ না খেলায় সে গুঞ্জন আরও তীব্র হয়। এরপর দীর্ঘ দিন ছিলেন ক্রিকেটের বাইরে। আবারো ক্রিকেটে ফিরেছেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে। আর সে সময়ই জানিয়েছেন, অবসরের চিন্তা নেই আপাতত, খেলবেন যত দিন সুযোগ পান।