০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কাশফুল

-

তিনতলায় এই কেবিনটার এসি নষ্ট। চার পাশে গুমট ভাব। পাখা চলছে পুরোদমে। তারপরও জানালা খুলে দিতে হলো। ভালোই হলো। একচিলতে সোনা রোদ ফস করে ঢুকে গেল সৌম্যের কেবিনটায়। সৌম্য হাত বাড়িয়ে দেয়, কিন্তু বিছানা পর্যন্ত রোদ আসে না। একটু নেমে জানালার পাশটায় দাঁড়িয়ে রোদ ছোঁয়া যাবে কি? রোদের নদীতে সাঁতার কাটা সাদা সাদা ফুল, প্রথম শরতের কাশফুল, ধরা যাবে কি? আম্মু তো বিছানা থেকে নামতে দেন না। ডাক্তার ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করতে হবে। একটু পরই তার আসার কথা।
গত ঈদে বাবার ছুটিতে বর্ষাটা গ্রামে ভালোই কেটেছে সৌম্যের। এখনো স্কুল নামের অবাক ভুবনটায় পা পড়েনি। তাই দিনভর ছুটি, একঘেয়ে স্বাধীনতা। বাবার কোলে করে পুকুরের ঘোলা জলে সাঁতারের প্রথম পাঠ, মাটির চুলায় দাদীর হাতে চিতই পিঠা, মুরগির ছানাদের ছিটিয়ে ছিটিয়ে খুদ খাওয়ানো, বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকার উঠোনে বসে অন্ধ কুঁজো মিলে রাক্ষস হটানো, কী দারুণ ছিল দিনগুলো। প্রতি বছর দু’বার করে গ্রামে এলেও এত দিন কিছুই বোঝার বয়স ছিল না। সাড়ে চারে এসে তাই জমে থাকা ভালো লাগাগুলো স্রোতের মতো আছড়ে পড়ে সৌম্যের কচি পৃথিবীটায়।
একটা শিশুর চোখে দেখা পৃথিবী সৌরজগতের সবচেয়ে সুন্দর গ্রহ।
বৃষ্টি এক সময় ধরে আসে। মাঠগুলো সাদা সাদা ফুলে ভরে যায়। সাদা মাঠে সৌম্য দৌড়ায়, ইচ্ছে তো উড়ে বেড়ানোর। ওই কাশফুলের মতো। কিন্তু হঠাৎ দৌড় দিতে গিয়ে বুকটা ধড়ফড় করে ওঠে। কলজেটা যেন মুখ দিয়ে বের হয়ে আসবে। চোখ দুটো অন্ধকার। মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সৌম্য।
জেগে দেখে জেলা শহরের হাসপাতালের এই কেবিনটায় বন্দী। নাকের মধ্যে প্লাস্টিকের নল দিয়ে ভুরভুর করে বাতাস ঢুকছে। বাবার কাছ থেকে জেনেছে, এই বাতাসকে অক্সিজেন বলে। হাতটা ব্যথায় টনটন করছে। কব্জির উপরের অংশে ঢুকে গেছে একটা সুই, তাতে আরেকটা নল লাগানো। এটা দিয়ে লাল লাল পানির মতো ঢুকছে, রক্ত হবে হয়তো। বঁটি দিয়ে মাছ কাটতে গিয়ে হাত কেটে গিয়েছিল আম্মুর, মাস দুয়েক আগে। দেখে ভয়ে কী কান্না সৌম্যের। আজ কিন্তু ভয় পাচ্ছে না। কেন জানি, একটুও না।
পাশে বাবাকে কী যেন বলছে সাদা জামা পরা এক মহিলা। এ রকম জামা ডাক্তাররা পরে, টিভির বিজ্ঞাপনে দেখেছে। কী বলছেন তিনি?
‘আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যে আছে পানি আর গোল গোল কণিকা। লাল কণিকা, সাদা কণিকা। এই লাল কণিকাগুলোর কাজ হচ্ছে সারা শরীরে জীবনের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন পৌঁছে দেয়া, আর দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইড বের করে দেয়া। আরো কাজ আছে অবশ্য। একটা রোগ আছে, নাম থ্যালাসেমিয়া; যখন এই কণিকাগুলো আগে আগে ভেঙে পড়ে। শরীরে রক্ত কমে যায়। সৌম্যের অনেক দিন ধরেই রক্ত খুব কমে গিয়েছিল। প্রতিদিনের দেখায় হয়তো বুঝতে পারেনি। বেশি কাজ করতে করতে হৃৎপিণ্ড হয়ে গেছে দুর্বল। হঠাৎ পরিশ্রমে আর ধকল সইতে পারেনি। তাই এ অবস্থা আর রক্ত দেয়া।’ এত কঠিন কথা সৌম্য কিছুই বোঝেনি। খুব ঘুম পাচ্ছিল। শুধু মনে হলো ডাক্তার ম্যাডাম একবার তার বিছানায় বসলেন। মাথায় হাত বুলালেন। আর কিছু মনে পড়ছে না।
এখন খুব ভালো লাগছে। নাকে বাতাসের নলটা নেই। রক্তের নলটাও নেই, তবে সুইটা আছে। একটা সাদা ফুল সৌম্যের হাতে এসে পড়ল। খুব কাছে নিয়ে দেখছে ও। একটা যেন ছোট পোকা আর তার শরীরভর্তি সাদা চুল।
আমি যদি কাশফুল হতে পারতাম তাহলে বেশ হতো। রোদের মধ্যে সারা দিন সাঁতার আর সাঁতার। নিজেকে মনে হতো পাখি কিংবা মাছ কিংবা দুষ্ট সৌম্য।
ডাক্তার ম্যাডাম এসে পড়েছেন। ‘ম্যাডাম আমি কি উঠতে পারি? সারা দিন শুয়ে থাকতে পচা লাগছে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কাশফুল ধরতে ইচ্ছে করছে আমার।’ ম্যাডাম মিষ্টি করে হাসলেন। ‘অবশ্যই পারবে সৌম্য। আজ তো তোমার ছুটি। এসো আমার সাথে। তুমি এই চেয়ারটায় বসো। দেখো, কী মিষ্টি রোদ। হাত বাড়িয়ে দাও সৌম্য।’
বিছানায় কুড়িয়ে পাওয়া কাশফুলটাকে ম্যাডামের হাতে দিলো সৌম্য। উপহার, প্রথম শরতের কাশফুল।

 


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘ প্রধানকে দ্বিতীয়বারের মতো গাজায় প্রবেশে বাধা দিলো ইসরাইল টানা তাপপ্রবাহের পর চুয়াডাঙ্গায় স্বস্তির বৃষ্টি নোয়াখালীতে অশ্লীল ছবি ফেসবুকে ছড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলবিরোধী সমাবেশ থেকে গ্রেফতার প্রায় ২৫০০ কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড দাগনভুঞা উপজেলা চার মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহ্জাদা মিয়ার জামিন হামাসের সাথে চুক্তির ব্যাপারে মিসরীয় প্রস্তাব মেনে নিন : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে ভারতে আইনি লড়াইয়ের ল’ফার্ম নিয়োগ নোয়াখালীতে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন আদমদীঘিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ আদমদিঘিতে আ’লীগ নেতার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

সকল