০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নিশিতা

-

বেশ কিছুদিন হলো নিজের ভেতর একটা অস্থিরতা কাজ করছে। কারো কাছে আমি নিজেকে ধরা দেই না। যখন মনটা খারাপ থাকে নদীর ধারে একলা বসে থাকি। আমার বাসা থেকে নদী খুব একটা দূরে নয়। সেদিন খুব আনমনা হয়ে নদীর ধারে বসে ছিলাম। হঠাৎ কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকলÑ ‘নিশিতা’। প্রথমত আমি তাকে চিনতে পারলাম না। তাই ঘাড় বাঁকিয়ে তাকালাম। দেখি, আমার পাশে দাঁড়ানো মণি হাসান। একেতো লোকটার ওপর আমার প্রচণ্ড রাগ। ওকে দেখে রাগের মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেল। কী করব আমি ভেবে পাচ্ছি না। এমন ভাব করলাম যেন আমি তাকে চিনিই না। সে যে আমার পাশে দাঁড়ানো তা-ও দেখিনি।
সে-ও বিষয়টি বুঝতে পারল। কেন আমি এমন করেছি। সে ভালো করেই জানে বিষয়টি। আমি মণিকে কিছু না বলে বাসায় চলে এলাম। মনে মনে আমারও খুব দুঃখ হলো। আবার অভিমানেও ফেটে পড়লাম। যা করেছি বেশ করেছি, এটাই ওর প্রাপ্য। তা না হলে ও আমার সাথে এমন করতে পারত! তবু মনটা ব্যথায় ভরে গেল। নিজে নিজে আক্ষেপ করতে লাগলাম, হায়! কতদিন পর লোকটা এসেছে।
বাসায় গিয়ে মণির ব্যাপারে কাউকে কিছুই বললাম না। ভেতরে ভেতরে ওর আসাতে দারুণ খুশি হলাম। মনের মধ্যে কী যে এক আলোড়ন সৃষ্টি হলো নিজেও বলতে পারব না। ভাবলাম, এবার হয়তো এতদিনের দূরত্বটা ঘুচে যাবে। মনে মনে তাই প্রতিজ্ঞা করলাম, আর না। এভাবে জীবন চলতে পারে না। সংসার জীবনে কাউকে না কাউকে তো কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়। তবেই সংসার সুখের হয়। হোক না সেটা আমার তরফ থেকে। এতে লজ্জার কী। সে আমার স্বামী। তার কাছে হেরে যদি আমি তাকে বদলে দিতে পারি তাতো আমার জন্য সম্মানের। যে যাই বলুক তাতে কী এসে যায়।
নিজের মধ্যে চেপে থাকা ক্রোধের দানবটা প্রমোদ খেলায় মেতে উঠল। কীসের সংসার তোর? তোর তো ঘরই হলো না। তাহলে কোন সুখের কথা ভাবছিস। তোর স্বামীতো তোকে স্ত্রী বলে স্বীকারই করে না। তবু আমি নিজেকে বোঝাই, হেরে যাওয়ার মাঝেও সুখ আছে, দেখ না একবার হেরে।
বহু কথার আড়ালে নিজেকে সান্ত¡না দিয়ে রাখতে চাইলাম; কিছুতেই মন বুঝতে চায় না। বারবার কেঁদে উঠে। আমাকে যদি তোমার এতই পছন্দ নয় তাহলে তুমি কেন বিয়ে করলে? চাইলে আমার থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারতে। আমি একবারও অভিযোগ করতাম না। বলতাম না ফিরিয়ে দাও আমার হারানো দিনগুলো। ফিরিয়ে দাও আমার ভালোবাসা।
কী ভেবেছিলে তুমি? আমার মাথায় হাত বুলিয়ে তোমার উদ্দেশ্য হাসিল করবে? ছি! ছি! এত নিচু মনের মানুষ তুমি! অথচ কেউই ছিল না তোমার বিপক্ষে দাঁড়ানোর। টাকাকড়ি-অর্থবিত্ত সবই একদিন তোমার হতো। এইটুকু সবুর তোমার হলো না। রাতারাতি কত বদলে গেলে তুমি। হায়রে! প্রেম।
আমি সোফার ওপর বসা। খুব মনোযোগে একটা হিন্দি সিরিয়াল দেখছিলাম। হঠাৎ মোবাইলটা বেজে উঠল। সেটটা হাতে নিয়ে দেখি মা কল করেছে। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, মা, তুমি কেমন আছো? তোমরা ভালোভাবে পৌঁছতে পেরেছ? মা হেসে বললেন, তা না হলে কী আর ফোন করি। মামণি, আমাদের জন্য চিন্তা করিস না। আজই তোর বাবা বাড়িতে ফেরার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। এদিকে যার জন্য এসেছি সেই চৌধুরী সাহেবের ছেলেই বাড়িতে নেই। কী যে করব ভেবে পাচ্ছি না। তোর বাবাকে নিয়ে পারি না। বুড়ো মানুষের এই একটাই দোষ। যা বলবে তাই করবে। তুই সাবধানে থাকিস মা। এদিকের খবর ভালো। ওরা সবাই রাজি হয়েছে। কেবল ছেলের মতামতটাই জানতে বাকি। আমি বললাম, রাখো তো তোমার ওসব কথা। আসবে কখন বলো। মা আর কিছু বলল না।
ফোন রেখে আমি রিমিকাকে ডাক দিলাম। রিমিকা আমার ডাক শুনে দ্রুত ছুটে এলো।
বলল, কী হয়েছে দিদি? আমি ওকে কিছুই বললাম না। ও বলল, তাহলে আমায় ডাকলে কেন? আসলে আমি যে ওকে কেন ডেকেছি সেকথা বলতে পারলাম না। আমি ঠিক বুঝতে পারলাম মণি এখানে আসেনি। যদি সে আসত তাহলে রিমিকার চোখে পড়ত। তবু আমি রিমিকাকে কিছু বললাম না। মনে মনে আমার ভয় হচ্ছিল ও যদি রিমিকার সামনে পড়ে তাহলে সে খবর বাবা-মায়ের কানে যাবে। রিমিকার পেটে কিছুই হজম হয় না। এর কথা ওকে বলাটাই ওর স্বভাব। এ খবর বাবা-মার কানে যাওয়া মানে লম্বা একটা নিষেধাজ্ঞা চলে আসা।
মণি সম্পর্কে বাবা-মার এই ধারণাকে কেন জানি আমারও ভয় হয়। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় বাবা-মায়ের সিদ্ধান্তই বোধহয় সঠিক। তবুও মণির জন্য মনটা কাঁদে। কখনো কখনো ভাবি পৃথিবীর কত কিছুইতো রাতারাতি বদলে যায় তাহলে এমন একটা দিন কি আমার জীবনে আসবে না যখন মণি হাসানকে আমূল বদলে দেবো। দু’চোখে স্বপ্নই দেখি। বাবা-মায়ের অপ্রিয় পাত্রটাকে নিজের প্রিয় পাত্র করে নিতে চাই। কিন্তু আজ সময়টা বড়ই খারাপ। কারো কাছে কিছু মুখ ফুটে বলতে পারি না। আর কত কষ্ট দেবো নিজের বাবা-মাকে?
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতও অনেক হয়েছে। মণি হাসানের আর কোনো খোঁজ নেই। নিজের মধ্যে একটু চিন্তা হতে লাগল। নদীপাড়ে যে মানুষটিকে দেখলাম সে কোথায় যাবে? তাহলে কি সে ফিরে গেছে? মানুষটির জন্য বড়ই মায়া হতে লাগল। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার জানালাম। এমন কী ক্ষতি হতো লোকটার সাথে একটু কথা বললে। তাহলে হয়তো সে চলে যেত না। এসব ভাবতে ভাবতে ধপাস করে বিছানায় বসে পড়লাম। চোখে ঘুম ঘুম ভাব। তাই নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমের মধ্যে খুব অসহ্যবোধ হচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেল। পাশে মোবাইল রাখা, রিংটোন বাজছে। এক হাতে চোখ মুছছি অন্য চোখে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছি। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে বারবার কল আসছে। আমি কলটি রিসিভ করলাম।
নিশিতা, কেমন আছ তুমি? জানি তুমি আমার ওপর প্রচণ্ড রেগে আছ। আসলে আমি এমন একটি মানুষ যে তোমাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারিনি। না তুমি আমার থেকে সুখ পেয়েছ, আর না তুমি তোমার বাবা-মায়ের কাছে প্রিয় হতে পেরেছ। কেবল আমার জন্যই তোমার জীবনটা বিষাদময় হয়ে উঠেছে। পারলে তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়ো। নিশিতা, তুমি কি পার না, আমাকে তোমার মতো করে নিতে? আমি আর একবার তোমার কাছে ফিরে আসতে চাই। মন-প্রাণ দিয়ে তোমাকে ভালোবাসতে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।
আমি জানতে চাইলামÑ মণি, তুমি কোথায়? আমি অনুমান করছি ও কাঁদছে। মণিকে আমার কাছে পেতে প্রচণ্ড ইচ্ছে জাগল।
বিয়ের পর আমি এমন কখনো অনুভব করিনি। এক ধরনের পাপবোধ আমার মধ্যে জেগে উঠল। আমি অস্থির হয়ে উঠলাম মণিকে পাওয়ার জন্য। একটু পরে দরজায় ঠক ঠক করে আওয়াজ হলো। ভয়ে আমি শিউরে উঠলাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম আমি তো বাসায় একা। কী করব। দরজা খুলে সামনে যাব? তাও সাহস হচ্ছে না। রিমিকার বাসা আমার বাসা থেকে একটু দূরে। ও আমার চাচার মেয়ে। রিমিকাকে আমি ডাকব তাও পারছি না। আমার ডাক রিমিকার কান পর্যন্ত পৌঁছবে না। হঠাৎ করে মনে হলো আমি তো ফোন করতে পারি।
ঠক ঠক করে আবারো সেই একই আওয়াজ। আমি ধীরে ধীরে দরজার কাছে গেলাম। এবার শুনতে পেলামÑ নিশিতা, আমি মণি। দরজাটা খোল। আমি আবারো নিশ্চিত হতে চাইলাম ও মণি ছাড়া আর কেউ নয় তো। আবার মোবাইলে কল বেজে উঠল। আমি অত্যন্ত বিরক্ত হলাম। একবার মনে হলো মোবাইলটি বন্ধ করে রাখি। বিরক্তির ভাব নিয়ে কলটি ধরলাম। একি! মা ফোন করছে।
কী হয়েছে মা! এতরাতে আবার কেন ফোন করলে?
আমরা আসছি তোর সুখের খবর নিয়ে। তুই বড় ভাগ্যবতী।
পিরোজপুর


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রিড লাইনের ত্রুটিতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ভুক্তভোগী নারী ও তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদ বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কথিত স্বামী পলাতক গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবে খতমে নবুওয়ত ঝিনাইদহ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জাতীয় গ্রিডে ত্রু‌টি, সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে নিয়মিত ২০ আসন বরাদ্দ রেকর্ড গড়ে সাদিক খান আবারো লন্ডনের মেয়র আগামী ২ মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : জিল্লুল হাকিম ফতুল্লায় ব্যবসায়ী অপহরণ, গ্রেফতার ৭ তাপদাহের কারণে গোসল করতে গিয়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু

সকল