০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে ৪টি জাহাজ

যমুনার নাব্যতা সঙ্কটে বেড়া পেঁচাকোলায় বাঘাবাড়ী বন্দরমুখী আটকে পড়া জাহাজ - নয়া দিগন্ত

বাঘাবাড়ী বন্দর নৌপথের বেড়ার পেঁচাকোলা ও মালদাহপাড়ার মাঝে নাব্যতা সঙ্কটে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় জ্বালানী তেল ও পণ্যবাহী ৪টি কার্গোজাহাজ যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করায় জ্বালানী তেলসহ অন্যান্য পণ্যবাহী জাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। মাঝ নদীতে লাইটারেজে করে জ্বালানী তেল ও অন্যান্য পণ্য বাঘাবাড়ী বন্দরে আনা হচ্ছে।

বাঘাবাড়ী বন্দর সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের জন্য একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এ নৌপথে জ্বালানী তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বলানী তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়।
আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ নৌপথের ১০টি পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বিসিআইসি’র বাঘাবাড়ী ট্রানজিট বাফার গুদাম সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে যোগান দেয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে বাফার গুদামগুলোতে আপদকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিসিআইসি’র বগুড়া আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, ইরি-বোরো আবাদ মওসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ১২ লাখ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় সারের বেশির ভাগই বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে আমদানি করার পর সেখান থেকে সড়ক পথে বাফারগুদামে পাঠানো হয়। বাফারগুদামগুলোতে আপদকালীন মজুদ আছে দুই লাখ ৮০ হাজার টন। যমুনা নৌরুটে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় আপদকালীন সার মজুদের কাজও বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা অফিসের একটি সূত্রে জানা যায়, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে এ নৌপথে কোথাও কোথাও ৮ থেকে ৯ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পানির স্তর কমে ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা।

বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত নৌপথের মোহনগঞ্জ, হরিরামপুর, চরসাফুল্লা, নাকালিয়া, পেঁচাকোলা, নাকালী, নগরবাড়ীসহ ডজনখানেক পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

এর মধ্যে মোহনগঞ্জ পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে মোহনগঞ্জ, হরিরামপুর ও নাকালী পয়েন্টে ডুবোচরে পণ্যবাহী জাহাজ প্রায়ই আটকা পড়ছে।

বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বাঘাবাড়ী থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের মোহনগঞ্জ, পেচাকোলা, হরিরামপুর, কল্যাণপুর, চরসাফুল্লা, চরশিবালয়, নাকালী ও রাকশাসহ ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে ৭ থেকে ৯ ফুটে দাড়িয়েছে। কয়েকটি স্থানে সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল। বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কতৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের জন্য বিআইডাব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগকে চিঠি দিয়েছে।
অন্যদিকে, বাঘাবাড়ী বন্দরমূখী রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গোজাহাজ পূর্ণলোড নিয়ে বন্দরে পৌছাতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং শুরু না করায় নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

এম.ভি চিলিং বিজয়’র মাস্টার হেলাল উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌবন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌপথের ১০টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাড়িয়েছে ৭ থেকে ৯ ফুট। সরু হয়ে গেছে নৌচ্যানেল। মোহনগঞ্জ পয়েন্টে কার্গোজাহাজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ পয়েন্টে দুটি জাহাজ পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না।

তিনি আরো বলেন, ওই পয়েন্টে জেগে উঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন চ্যানেলটি আরো সরু হয়ে যাচ্ছে। এই পয়েন্টে দ্রুত ড্রেজিং না করা হলে পণ্যবাহী ও জ্বালানী তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

বিআইডাব্লিউটিএ’র আরিচা অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই এসময় দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌপথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজিং শুরু করা হবে। জাহাজগুলো অতিরিক্ত মালামাল বহন করায় ডুবোচরে আটকা পড়ছে। এছাড়া পেঁচাকোলা ও মালদাহপাড়ার মাঝে যমুনা নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠায় নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

বিপিসি’র বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর যমুনা কোম্পানির ম্যানেজার এ কে এম জাহিদ সরোয়ার জানান, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে ৭ কোটি লিটার জ্বালানী তেল মজুদ আছে। আরো প্রায় ৭৪ লাখ লিটার ডিজেল ভর্তি ১২টি জাহাজ চিটাগাং থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের বন্দরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, নগরবাড়ীর উজানে ৪৯ লাখ লিটার জ্বালানী তেলবাহী ৪টি জাহাজ যমুনা নদীতে আটকা পড়েছে। নাব্যতা সঙ্কটে জাহাজগুলো বন্দরে আসতে পারছে না। বাধ্য হয়ে আটকে পড়া জাহাজ থেকে জ্বালানী তেল লাইটারেজে করে বাঘাবাড়ী ডিপোতে আনা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী সঙ্কটের আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement