বছরজুড়েই বিতর্কিত ফেসবুক!
- সুমনা শারমিন
- ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০
ফেসবুকের খারাপ দিনের সূচনা চলতি বছরের শুরু থেকেই। একের পর এক তথ্য কেলেঙ্কারির কারণে চাপে রয়েছে ফেসবুক। তীব্র সমালোচনার মুখে গ্রাহক তথ্যের সুরাদানে গৃহীত নানা পদপেও কাজে দিচ্ছে না।
মার্চে ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক ও তথ্যবিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে সোস্যাল মিডিয়া প্রতিষ্ঠানটির বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়ার ঘটনা প্রকাশিত হয়। শুরুতে পাঁচ কোটি ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাতের কথা বলা হয়। তবে পরবর্তীতে ফেসবুকের প থেকে জানানো হয়, মোট ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।
ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকার একটি অ্যাপ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক, যা প্রতিষ্ঠানটির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোপনে ওই অ্যাপের মাধ্যমে কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এসব তথ্য গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হয়।
সর্বশেষ এই টানাপড়েনের মধ্যেই গত শুক্রবার আবার ৬৮ লাখ ব্যবহারকারীর তথ্য বেহাত হওয়ার কথা জানিয়েছে ফেসবুক। এবার একটি ফটো অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসে (এপিআই) ত্রুটির কারণে ফেসবুকে শেয়ার করা হয়নি, এমন ছবি তৃতীয় পরে ডেভেলপ করা অন্তত ১৫০০ অ্যাপে ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার ফেসবুক জানায়, তাদের প্লাটফর্মের একটি এপিআইতে ত্রুটির কারণে ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে শেয়ার করেননি, এমন ছবি তৃতীয় পরে অ্যাপ ডেভেলপারদের হাতে পৌঁছেছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ফটোতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন, এমন অন্তত দেড় হাজারের বেশি অ্যাপ ডেভেলপারের হাতে পৌঁছেছে এসব ছবি।
ফেসবুক কর্তৃপরে বিবৃতি অনুযায়ী, গত ১৩-২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের প্লাটফর্মের একটি অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। যে কারণে প্রায় ৮৭৬ ডেভেলপারের দেড় হাজার অ্যাপে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে ব্যবহারকারীরা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যেসব ছবি শেয়ার করেছেন, সেগুলো আক্রান্ত হয়নি। এপিআইতে ত্রুটি শনাক্তের পর ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই তা ঠিক করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন জেনারেল ডাটা প্রোটেকশন রেগুলেশন (জিডিপিআর) আইন অনুযায়ী, সোস্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রাহক তথ্য বেহাতের ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে জানাতে হবে। ফেসবুক বলছে, সাম্প্রতিক ত্রুটি শনাক্তের পর তা জনসম্মুখে প্রকাশের আগে এর প্রভাব অনুসন্ধানে তারা কিছুটা সময় নিয়েছে। তবে জিডিপিআরের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, গত ২২ নভেম্বর এ ঘটনা আইরিশ ডাটা প্রোটেকশন কমিশনকে (আইডিপিসি) জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেন, আমরা প্লাটফর্মের এপিআইতে ত্রুটি শনাক্তের পর তদন্ত শুরু করি। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় আমরা মনে করেছি এ ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপকে অবহিত করা প্রয়োজন। প্রভাব পর্যালোচনা শেষে আইডিপিসিকে জানিয়েছি।
আইডিপিসির প থেকে বলা হয়েছে, তারা ফেসবুকের সাম্প্রতিক তথ্য বেহাতের ঘটনা পর্যালোচনা শুরু করেছে। আইডিপিসির হেড অব কমিউনিকেশন্স গ্রাহাম ডুয়েল বলেন, গত ২৫ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন জিডিপিআর কার্যকর হওয়ার পর ফেসবুকের কাছ থেকে তারা একাধিক তথ্য বেহাতের ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। আমরা চলতি সপ্তাহেই এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছি।
ফেসবুকের তথ্যমতে, সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মটির এপিআই ত্রুটির কারণে ভুক্তভোগী ব্যবহারকারীদের এরই মধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া কেউ আক্রান্ত হয়েছেন কি না, তা নিজে থেকে দেখে নেয়ার টুল সরবরাহ করা হয়েছে। ফেসবুক ফটোতে প্রবেশের অনুমতি চায়, এমন তৃতীয় পরে অ্যাপ ইন্সটলের েেত্র সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অনাকাক্সিত এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে ফেসবুক কর্তৃপ।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, ব্যবসায়িক অংশীদার বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বিনিময় করে আসছে ফেসবুক। বিশ্বের জনপ্রিয়তম এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাবেক কর্মীদের সাাৎকার ও অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, মাইক্রোসফট, অ্যামাজান, নেটফিক্স, স্পটিফাই, রয়েল ব্যাংক অব কানাডার মতো ব্যবসায়িক অংশীদার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এসব তথ্য বিনিময় করেছে ফেসবুক।
২৭০ পৃষ্ঠার অভ্যন্তরীণ নথি বিশ্লেষণ করা ছাড়াও সাবেক ফেসবুক কর্মীসহ ৬০ জনেরও বেশি মানুষের সাাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। এতে বলা হয়েছে, নেটফিক্স, স্পটিফাই, রয়েল ব্যাংক অব কানাডার মতো কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজ পড়ার, লেখার ও ডিলিট করার অনুমতি দিয়েছিল ফেসবুক। গত বছর কিছু নথিকে উদ্ধৃত করে আরো বলা হয়, ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই ভার্চুয়ালভাবে তাদের সব বন্ধুদের নামের তালিকা সংগ্রহের সুযোগ পেয়েছে মাইক্রোসফটের বিং সার্চ ইঞ্জিন। এ দিকে বন্ধুদের মাধ্যমে ফেসবুক ব্যবহারকারীর নাম ও যোগাযোগের তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারতো অ্যামাজন। এই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তথ্য বিনিময়ের মধ্য দিয়ে দেড় শতাধিক কোম্পানিকে সুবিধা দিয়েছে ফেসবুক।
ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারকারীদের তথ্য বেহাত হওয়ার বিষয় সামনে আসতে থাকার বিষয়ে এরই মধ্যে মা চেয়েছেন ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুকের নিরাপত্তা ত্রুটি দূর করতে কয়েক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ফেসবুকের ব্যবসায় মডেল ও ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহারের সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, ফেসবুকের গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা বলে যাকে মনে করা হচ্ছে, তা হলো ‘আদর্শগত’। বিশ্বের অসংখ্য মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে নিরলস কাজ করে আসছে ফেসবুক। এটা ঠিক, সোস্যাল মিডিয়া সাইটটি ব্যবহারের নেতিবাচক দিকগুলোয় খুব বেশি সময় দেয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি ভাবেনি কর্তৃপ। প্রযুক্তির প্রতিটি অনুষঙ্গের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে। ফেসবুকও এর বাইরে নয়। ফেসবুক ব্যবহারের বেশ কিছু নেতিবাচক দিক এখন সামনে আসছে। বিশ্বব্যাপী এখন ফেসবুকের বিদ্যমান দুর্বলতাগুলো নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
এই পেক্ষাপটে বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর নাগরিক অধিকার রায় আরো অনেক কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছে ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গ। তিনি বলেন, আমরা জানি, এখনো আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। ফেসবুকে ব্যবহারকারীদের মৌলিক অধিকার রায় কিছু বিষয় গুরুত্বসহকারে শুনতে হবে, গভীরভাবে ভাবতে ও সমাধানের জন্য পদপে নিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা