২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আপনার তথ্য যাচ্ছে তৃতীয় পক্ষের কাছে

-

জিমেইল ব্যবহারকারীদের ইনবক্সকে বহিরাগত সফটওয়্যার ডেভেলপারদের জন্য উন্মুক্ত রেখেছে গুগল। ফলে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপাররা জিমেইল ব্যবহারকারীদের ইনবক্স স্ক্যানের সুযোগ পাচ্ছে। গুগল ছাড়াও ফেসবুকের সঙ্গে অন্তত ৬০টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তথ্যবিনিময় চুক্তি রয়েছে। ১০ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফেসবুক তথ্যবিনিময় চুক্তিতে আবদ্ধ আছে। ফলে সম্মতি ছাড়াই এসব কোম্পানি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্যের সঙ্গে তাদের বন্ধুদের তথ্যও পাচ্ছে। ফলে এখন প্রমাণিত গুগল ও ফেসবুক প্রতিনিয়ত আপনার আমার তথ্য বিক্রি করছে তৃতীয় পক্ষের কাছে। লিখেছেন সুমনা শারমিন

গ্রাহক তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা নিয়ে গুগল সব সময় ব্যবহারকারীদের আশ্বস্ত করলেও জিমেইল ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্টে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ডেভেলপারদের প্রবেশাধিকার দিচ্ছে। ব্যবহারকারীদের অনুমতি ছাড়াই অন্যজনের কাছে তাদের মেইল পড়ার অনুমতি চলে যাওয়ার বিষয়টি শুনতে হতো অবাক লাগলেও এ বিষয়ে জিমেইলের মূল প্রতিষ্ঠান গুগলের ভাষ্যে এমন চর্চা তাদের নীতিমালাবিরোধী নয়। তবে ১৪০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেইলিং সেবাটির ক্ষেত্রে এমন চর্চাতে অবাক হয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৭ সালে জিমেইল ব্যবহারকারীর ইনবক্সে তৃতীয় পক্ষের স্ক্যানিং বন্ধ করতে অঙ্গীকার করলেও প্রতিষ্ঠানটি এখনো তা বন্ধ করেনি। এ বিষয়ে গুগল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেসব জিমেইল ব্যবহারকারী তাদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট স্ক্যানের জন্য অনুমতি দিয়েছেন, শুধু তাদের তথ্যে প্রবেশাধিকার পেয়েছে বহিরাগত অ্যাপ ডেভেলপাররা। এ ছাড়া যেসব গ্রাহক শপিং প্রাইস কম্পারিজন ও অটোমেটেড ট্রাভেল-ইশিনেরারি প্ল্যানারের মতো ই-মেইলভিত্তিক সেবার জন্য সাইন আপ করেছেন, তাদের তথ্যে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে গুগল।
জিমেইল ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো বা গ্রহণ করা মেইলগুলো মাঝে মধ্যে থার্ড-পার্টি অ্যাপ নির্মাতারা পড়তে পারছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওয়েব জায়ান্ট গুগল। এ ক্ষেত্রে শুধু মেশিনই নয়, মানুষও এ সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নিজেদের অ্যাকাউন্টের সঙ্গে থার্ড-পার্টি অ্যাপ যুক্ত করে রেখেছেন এমন ব্যবহারকারীরা হয়তো না জেনেই তাদের মেসেজ অন্য মানুষকে পড়ার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন, বলা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
গুগল জিমেইলে সঙ্গে বিভিন্ন থার্ড-পার্টি অ্যাপ যুক্ত করতে দেয়। এসব বাইরের সেবা বা অ্যাপ যুক্ত করার সময় ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অনুমতি চাওয়া হয়। অনুমতির বিষয়গুলোর মধ্যে প্রায়ই আপনার ইমেইল পড়া, পাঠানো, মোছা আর ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা চাওয়া হয়। আর প্রায় ক্ষেত্রেই পুরো শর্ত না পড়েই অনুমতি দিয়ে দেন গ্রাহক। এ ছাড়াও গুগলের নিজস্ব কর্মীরা নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে ই-মেইল পড়ে থাকেন, যেমন নিরাপত্তা ত্রুটি বা অপব্যবহার নিয়ে তদন্ত। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের অনুমতি নিয়ে নেয়।
জিমেইল ছাড়াও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে রয়েছে ফেসবুকের তথ্যবিনিময় চুক্তি। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস, ধর্ম ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যামাজন, অ্যাপল, ব্ল্যাকবেরি, এইচটিসি, মাইক্রোসফট, স্যামসাং ছাড়াও চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি আলিবাবা, হুয়াওয়ে, লেনোভো ও অপোর মতো প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এনার্জি অ্যান্ড কমার্স কমিটিকে ফেসবুক জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ৫২টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গ্রাহকদের তথ্য শেয়ার করেছে। তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৮টির সঙ্গে চুক্তির ইতি টেনেছে। সাতটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ জুলাইয়ে শেষ হচ্ছে। আগস্টে আরো একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। অ্যাপল, অ্যামাজন ও টবির সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে অক্টোবরের পর।
কয়েক বছর ধরে চীনা প্রতিষ্ঠানের নেটওয়ার্কিং সরঞ্জাম ও মোবাইল ডিভাইস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন গোয়েন্দাদের দাবি, চীনা কোম্পানিটির টেলিকম সরঞ্জাম বা ডিভাইস ব্যবহার করলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। এ তালিকায় রয়েছে হুয়াওয়ে টেকনোলজিস ও জেডটিই করপোরেশনের নাম। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীন সরকারের সঙ্গে প্রতিষ্ঠান দু’টির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের টেলিকম সরঞ্জাম বা ডিভাইস ব্যবহার করলে মার্কিনিদের ওপর গোয়েন্দাগিরির সুযোগ পাবে চীন।
শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো গ্রাহক তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে চাপের মুখে পড়েছে। বিভিন্ন পক্ষ থেকে এসব কোম্পানির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে দাবি উঠেছে। থার্ড পার্টির সাথে এসব কোম্পানিকে তথ্য শেয়ার না করতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement