০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তাবলিগের দ্বন্দ্ব নিরসনে ৫ নির্দেশনা

তাবলিগের দ্বন্দ্ব নিরসনে ৫ নির্দেশনা - ছবি : সংগৃহীত

তাবলিগ জামাতের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে পরিপত্র জারি করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে তাবলিগের উভয় পরে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, অপপ্রচাররোধ, একে অপরের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণসহ বেশকিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিপত্রটি ইতোমধ্যে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও তাবলিগের মারকাজগুলোতে ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে।

তাবলিগ জামাত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, সম্প্রতি এ সংগঠনের মধ্যে দৃশ্যমান বিভক্তি পরিলতি হচ্ছে। ফলে শান্তিকামী সংগঠনটির দুটি গ্রুপের মধ্যে দেশের প্রায় সব এলাকায় প্রায়ই বিভক্তি ল করা যাচ্ছে যা ধর্মীয় রীতিনীতি তথা সার্বিক শান্তি-শৃংখলার অন্তরায়। তাই দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা তথা সার্বিক শান্তি-শৃংখলা নিশ্চিত করার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হলো-
১. বর্তমানে তাবলিগে বিদ্যমান দুটি পক্ষ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা পরামর্শক্রমে কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী ইজতেমা ময়দানসহ দেশের সব জেলা ও উপজেলা মারকাজে সপ্তাহের ভিন্ন ভিন্ন দিনে, তারিখে তাদের কার্যক্রম (সাপ্তাহিক বাণী ও রাতযাপন, পরামর্শ ও তালিম, মাসিক জোড় ইত্যাদি) পরিচালনা করবে। তবে কোন প চাইলে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে পরামর্শক্রমে মারকাজ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে বা জায়গাতেও তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

২. তাবলিগের আদর্শ ও চিরাচরিত রীতিনীতি অনুযায়ী কোন প অপর পরে বিরুদ্ধে কোনরূপ লিখিত বা মৌখিক অপপ্রচার চালাবে না।

৩. দেশের সকল মসজিদে আগের মতো শান্তিপূর্ণভাবে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সে লক্ষ্যে যেকোনো মসজিদে উভয় পক্ষের জামাতই যেতে পারবে। এতে কোনো পক্ষই কাউকে বাধা দিবে না। তবে একই সময়ে দুই পক্ষের দেশী ও বিদেশী জামাত একই মসজিদে অবস্থান করা যুক্তিসংগত হবে না। এ ক্ষেত্রে যে পক্ষের জামাত আগে আসবে সেই পক্ষের জামাত অবস্থান করবে। অন্য পরে জামাত পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো সুবিধাজনক মসজিদে চলে যাবে।

৪. উভয় পক্ষ তাদের ইজতেমা বা জোড় তাবলিগের দেশী-বিদেশী মুরুব্বিদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবে। এতে এক প অন্য পক্ষের কার্যক্রমে কোনোরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।

৫. কোনো এলাকায় দুপক্ষের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

আরো পড়ুন :

যা বললেন আল্লামা শফী
নিজস্ব প্রতিবেদক
 ২৯ জুলাই ২০১৮
হাটহাজারি মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফি বলেছেন, তাবলীগের তিন মুরব্বি যে উসুলে কাজ করেছেন কেয়ামত পর্যন্ত সে উসুলেই চলবে। আমরা আলেমদের কথামতো চলব। তাবলিগের কাজ করব। অন্য কারো কথা মানব না, আমল করব না। সবাই গ্রামে গ্রামে জামাত নিয়ে বের হোন। যাতে অন্য কোনো নতুন তাবলিগ শুরু হতে না পারে। মাদরাসা বন্ধ করে দিয়ে হলেও তাবলীগে বের হতে হবে।

শনিবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড সংলগ্ন ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত এক সম্মেলনে (ওজাহাতি জোড়) প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। তাবলীগের চলমান সঙ্কট নিরসন ও মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিষয়ে উলামায়ে কেরামের অবস্থান পরিস্কার করতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জামিয়া রাহমানিয়ার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুল হকের পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন মালিবাগ মাদরাসার প্রিন্সিপাল শাইখুল হাদীস আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আনওয়ার শাহ (কিশোরগঞ্জ), আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ওয়াক্কাস, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মুফতি রুহুল আমিন (গওহরডাঙ্গা), মাওলানা সাজিদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা তৈয়ব (জিরি মাদরাসা), মুফতি আব্দুল মালেক, মুফতি মনসুরুল হক, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফেজ্জী (ময়মনসিংহ), মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপর), মাওলানা আবুল কালাম,মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল আউয়াল (নারায়ণগঞ্জ), মাওলানা রফিকুর রহমান (খুলনা), মাওলানা ঈসমাইল নূরপূরী (নরসিংদী), মাওলানা আবু তাহের নদভী (পটিয়া), মাওলানা আনোয়ার হোসাইন (যাত্রাবাড়ি মাদরাসা) প্রমুখ।

সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো হলো : ১. উলামায়ে কেরাম একমত হয়েছেন, তিনটি মৌলিক কারণে- (ক) কোরআন ও হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা, (খ) তাবলীগের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে তাবলীগ ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য মেহনতকে যথা দ্বীনি শিক্ষা ও তাসাউফ ইত্যাদিকে হেয় প্রতিপন্ন করা। (গ) পূর্ববর্তী তিন আমির (মাওলানা ইলয়াস রহ., মাওলানা ইউসুফ রহ ও মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়ার কারণে বর্তমানে মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলভীকে অনুসরণ করা সম্পূর্ণভাবে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ। ২. মাওলানা মুহাম্মদ সাদ মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর রেখে যাওয়া শুরায়ী নেযামকে উপক্ষো করে নিজেই নিজেকে আমির দাবি করেছেন; যা শরিয়ত বিরোধী। তাই তার কোনোরূপ সিদ্ধান্ত-ফায়সালা বা নির্দেশ কাকরাইল তথা বাংলাদেশে বাস্তবায়িত করা যাবে না। ৩. দারুল উলুম দেওবন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, মাওলানা মুহাম্মদ সাদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ থেকে সরে গিয়ে নতুন কোনো ফেরকা গঠনের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।


এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়া মুনাসিব হবে না। অনুরূপভাবে নেযামুদ্দিন থেকে আগত কোনো জামাতকে বাংলাদেশের কোনো জেলায়/থানায় ইউনিয়নে কাজ করার সুযোগ দেয়া যাবে না। ৪. মাওলানা ইলিয়াস রহ., মাওলানা ইউসুফ রহ. ও মাওলানা এনামুল হাসান রহ-এর বাতানো পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সারা দুনিয়াতে সমাদৃত ও গৃহীত হয়েছে। তাই বাংলাদেশের তাবলিগের কাজ পূর্ববর্তী এই তিন মুরব্বির পদ্ধতিতে এবং উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু করা যাবে না। কাকরাইল, টঙ্গী ময়দান এবং জেলা মারকাযসহ সকল মারকায এই নীতিতেই পরিচালিত হবে। ৫. কাকরাইল মসজিদের যে সমস্ত শুরা সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ সাদের ভ্রান্ত আকিদা অনুসরণের আমরণ হলফনামা করেছেন যা শরিয়ত পরিপন্থী- তারা শুরার সদস্য থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্য তাদেরকে বাংলাদেশের তাবলীগের কাজে শুরা ও ফায়সাল না রাখার আহ্বান জানানো যাচ্ছে। ৬. ২০১৮-এর টঙ্গী ইজতেমায় সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে আগামী ২০১৯-এর টঙ্গী ইজতেমার জন্য নির্ধারিত তারিখ- প্রথম পর্ব ১৮, ১৯, ২০ জানুয়ারী ও দ্বিতীয পর্ব ২৫, ২৬, ২৭ জানুয়ারী এর সাথে আজকের মজমা ঐকমত্য পোষণ করছে।

সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এবং বর্তমানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে সুষ্ঠ বিশৃঙ্খলা রোধে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement