৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


করোনা ভাইরাসে চীনে ৪১ জনের মৃত্যু দেশজুড়ে মাস্ক সঙ্কট

হংকংয়ের চন্দ্র নববর্ষের প্রথম দিন মুখোশ পরে লোকেরা ওয়াং তাই সাইন মন্দির পরিদর্শনে আসেন হএএফপি   -

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন বিপদ দেখা দিয়েছে চীনে। ভাইরাস আতঙ্কে মানুষ ব্যাপক হারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার কেনার কারণে এসব জিনিসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চীনে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২৮৭ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ৪১ জন মারা গেছেন। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে হুট করেই চাহিদা বেড়ে গেছে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ, থার্মোমিটারের মতো চিকিৎসাসামগ্রীর। এরই মধ্যে দেশটিতে তাওবাও-জেডি ডটকমের মতো পণ্য কেনার অনলাইন সাইটগুলোতেও স্টক শেষ হয়ে গেছে মাস্ক-হ্যান্ড স্যানিটাইজারের।
গত সপ্তাহে মাত্র দুই দিনে প্রায় আট কোটি মাস্ক বিক্রি করেছে আলিবাবার মালিকানাধীন তাওবাও। জানুয়ারির ১৯ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে জেডি ডটকম মাস্ক বিক্রি করেছে অন্তত ১২ কোটি ৬০ লাখ পিস। এ ছাড়া তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারের স্টকও শেষ হয়ে গেছে। বিক্রি বেড়েছে থার্মোমিটার, চশমাসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগের বিভিন্ন ওষুধেরও।
এই সঙ্কট মোকাবেলায় বেশির ভাগ মাস্ক কারখানাগুলো চীনা নববর্ষ উপলক্ষে ছুটিতে থাকা কর্মীদের ডেকে পাঠিয়েছে। অনেক কারখানায় উৎপাদন বাড়াতে দিন-রাত কাজ চলছে। তাওবাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রেতাদের জানিয়েছে, এই সঙ্কট সাময়িক। দেশজুড়ে শিগগিরই তাদের স্টক আবার পূরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্রেতাদের উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এমন পরিস্থিতিতে মাস্কের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। যদিও জেডি ডটকম ক্রেতাদের আশ্বস্ত করেছে, এমন দুর্যোগের মুহূর্তে তারা কিছুতেই পণ্যের দাম বাড়াবে না। তবে স্টকই যদি না থাকে, সে ক্ষেত্রে সীমিত দাম কতটুকু উপকার করবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। শুধু চীনই নয়, প্রতিবেশী দেশ জাপান-থাইল্যান্ডেও চিকিৎসাসামগ্রীর স্টকের অবস্থাও অনেকটা একই। দ্য স্ট্রেইট টাইমস জানিয়েছে, একজন সর্বোচ্চ ১০টি মাস্ক কিনতে পারবে বলে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে ম্যাকাও। আবার অনেক দেশই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়তে থাকায় নিজেদের মজুদ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। নিজ দেশের নাগরিকদের সুরক্ষায় তাইওয়ান আগামী এক মাসের জন্য মাস্ক রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষদের থেকে দূরে থাকাই মাস্কের চেয়ে ভালো বিকল্প হতে পারে। এজন্য উহানের লোকজন থেকে মার্কিন নাগরিকদের দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এশিয়ায় করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে ধারণার চেয়েও অনেক বেশি ভয়ঙ্করভাবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সামান্য হাঁচি, কাশি, কফের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস।
ভাইরাসের উৎপত্তিকেন্দ্রে ৪৫০ সামরিক মেডিক্যাল স্টাফ মোতায়েন : এএফপি জানায়, চীন তাদের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া মধ্যাঞ্চলীয় একটি নগরীতে ৪৫০ সামরিক মেডিক্যাল স্টাফ মোতায়েন করেছে। এসব স্টাফের মধ্যে অনেকেরই সার্স বা ইবোলা ভাইরাস মোকাবেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দেশটিতে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ইতোমধ্যে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, এসব সামরিক স্টাফকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত বেশি সংখ্যক রোগী যেসব হাসপাতালে রয়েছে সেখানে পাঠানো হবে। তারা শুক্রবার রাতে সামরিক হেলিকপ্টারে করে উহান নগরীতে পৌঁছে। নাটকীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপের পর এমন পদক্ষেপ নেয়া হলো।
মহামারি ঠেকাতে ১০ দিনে হাজার বেডের হাসপাতাল নির্মাণ : মহামারি ঠেকাতে ১০ দিনে হাজার বেডের হাসপাতাল নির্মাণ করছে চীন। আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহান সেন্ট্রাল সিটিতে নতুন হাসপাতাল বানাচ্ছে প্রশাসন। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, ৩ ফেব্রুয়ারি নতুন হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হবে। প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, উহান সেন্ট্রাল সিটিতে হাসপাতাল নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে কয়েক ডজন ট্রাক। এর সাথে রয়েছে মাটি খোঁড়ার যন্ত্র। হাসপাতালের আয়তন হবে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার। তাতে একই সাথে হাজার রোগীর চিকিৎসা হতে পারবে।


আরো সংবাদ



premium cement