২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নির্বাচনের সার সংক্ষেপ

সময়সীমার মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের অঙ্গীকার জনসনের

৬৫০টি আসনের মধ্যে ৬৪৯টি আসনের ফলাফল এসেছে ; কনজারভেটিভ পেয়েছে ৩৬৪ আসন এবং লেবার পার্টি পেয়েছে ২০৩ আসন; কনজারভেটিভরা গতবারের চেয়ে ৪৭টি আসন বেশি পেয়েছে। আর লেবার পার্টি ৫৯টি আসন হারিয়েছে ; সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ছিল ৩২৬টি আসনে জয় ; যুক্তরাজ্যে প্রায়
বরিস জনসন -

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন আগামী ৩১ জানুয়ারির নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের পর গতকাল শুক্রবার উল্লসিত সমর্থকদের উদ্দেশে রাখা রবক্তব্যে এ অঙ্গীকার করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে ‘যদি, কিন্তু বা হয়তোবার’ অবকাশ নেই বলে জানান তিনি। জনসন বলেন, ভোটাররা যে আস্থা রেখে ভোট দিয়েছেন তা পূরণে তিনি দিন-রাত পরিশ্রম করে যাবেন। এই নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছে তার দল।
১৯৮৭ সালের পর এটা কনজারভেটিভ দলের জন্য সবচেয়ে বড় জয় এবং ১৯৩৫ সালের পর লেবার দলের সবচেয়ে বড় পরাজয়। লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন আগামী নির্বাচনে দলের নেতৃত্বে থাকবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে তিনি এখনই পদত্যাগ করছেন না। আরো কিছু সময় দলের নেতৃত্বে থাকবেন আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। জনসন আরো বলেন, এটা আমাদের দেশের জন্য একটি নতুন সূচনা। তিনি বলেন, মানুষ পরিবর্তন চায়। আমরা তাদের পিছিয়ে দিতে পারি না এবং আমাদের এটা করা উচিত নয়।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন খুবই সাধারণ এক সেøাগানে। আর তা হচ্ছে, ‘ব্রেক্সিট সম্পন্ন কর’ (গেট ব্রেক্সিট ডান)। আর এখন নির্বাচনে জনসনের কনজারভেটিভ দল যে বড় জয় পাচ্ছে তাতে এটি স্পষ্ট যে, ব্রেক্সিটের পক্ষেই সমর্থনের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে।
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট নিয়ে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় হতাশ হয়ে পড়া ব্রিটেনবাসী এ জট কাটিয়ে দেশকে জানুয়ারির মধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের করে আনার (ব্রেক্সিট) পক্ষে জনসনকে ম্যান্ডেট দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে তারা কোনো যদি বা কিন্তুরও অবকাশ রাখেনিÑ এমনটিই দেখা যাচ্ছে এখন পর্যন্ত পাওয়া ভোটের ফলে। তাই ব্রেক্সিট এখন ঝড় পেরিয়ে বন্দরের আলো দেখছে। জনসন ক্ষমতায় ফিরলেই ইইউ থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ হওয়া এখন কয়েক সপ্তাহের ব্যাপার মাত্র।
পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং এমপিদের বিরোধিতার কারণে এ পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী জনসন আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন। এতে কাজও হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই জনসনের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার আভাস নির্ভুল বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। তার মানে জনসন খুব দ্রুতই ইইউর সাথে করা তার ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিতে পারবেন।
সেটি খুবই আশাব্যঞ্জক ব্যাপার। তবে হতাশা যে একেবারে দূর হয়ে গেল তাও নয়। কারণ, ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে এলেও অর্থাৎ, ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলেও এটি কেবল একটি প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে ব্রিটেনকে পাড়ি দিতে হবে আরো দীর্ঘ পথ। বাস্তবিকভাবে বলতে গেলে, জনসনের ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করাটা কয়েক বছরের একটি লম্বা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ব্লক হয়ে ওঠা ইইউতে ব্রিটেন প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে আছে। সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই জনসনের সামনে থাকবে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তি করার দুরূহ কাজ। বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্রিটেনের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জও তাকে মোকাবেলা করতে হবে। তার মানে ব্রেক্সিট শেষ হওয়া অনেক দূরের পথ।
ব্রিটেনকে ১১ মাসের মধ্যেই ইইউর সাথে বাণিজ্য চুক্তি করার অসাধ্য সাধন করতে হবে এবং পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও আরেকটি বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এর ওপরই নির্ভর করবে ব্রিটেনের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।
প্রধানমন্ত্রী জনসনের কনজারভেটিভ দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এত গভীরের এ বিষয়গুলো তুলে ধরেনি। একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায় সেটি জনসন কিভাবে মাত্র ১১ মাসে করবেন সে পরিকল্পনাও দেয়া হয়নি। প্রাচার চালানো হয়েছে হালকার ওপর দিয়ে। যার ফলে এখন ৩১ জানুয়ারিতে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসতে পারার আশা জেগেছে।
কিন্তু ওই দিনটির পর থেকেই ব্রিটেনের রূপান্তরকালীন সময় শুরু হবে। সে সময়ে ব্রিটেনকে আলোচনার মধ্য দিয়ে ২৭টি ইইউ রাষ্ট্রের সাথে নতুন সম্পর্ক ঠিক করে নিতে হবে। এখনকার বিধিমালার আওতায় এ প্রক্রিয়া চলতে পারে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কনজারভেটিভ দল এই রূপান্তরের জন্য ২০২০ সালের বেশি সময় না লাগানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে নির্বাচনে।
যদিও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতায় এলে জনসন এ প্রক্রিয়ার জন্য ২০২০ সালের বেশি সময়ও নিতে পারবেন। সে ক্ষমতা তার থাকবে। এখন জনসন তার নতুন রাজনৈতিক ক্ষমতা দিয়ে কী করেন সেটিই দেখা বিষয়।

নেতৃত্ব থেকে সরে যাবেন লেবার
নেতা করবিন
এদিকেব্রেক্সিটের ভাগ্য নির্ধারণী সাধারণ নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টির শোচনীয় পরাজয়ের আভাস আসার পর দলটির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তিনি পার্টির নেতৃত্বে থাকবেন না।
নর্থ লন্ডনে নিজের আসনে জয় পেলেও বুথ ফেরত জরিপে লেবার পার্টির আসন কমার পূর্বাভাস আসায় করবিন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে ফলাফল আমরা পেয়েছি, তাতে লেবার পার্টির জন্য এটা অত্যন্ত হতাশার রাত।’
হারের ইঙ্গিত আসার পর লেবার পার্টির অভ্যন্তরেও কোন্দল দেখা দেয়। দলের অনেকেই করবিনের পদত্যাগ চাইছিলেন। ২০১৫ সালে দুঃসময়ে দলের হাল ধরা প্রবীণ লেবার নেতা করবিন ভোটার, পরিবার ও বন্ধুদের নির্বাচনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘লেবারের নীতি’ এখনো জনপ্রিয়। তবু ব্রেক্সিটের পক্ষে সমর্থনের বিশাল ঢেউয়ের কাছে সেই নীতির হার হয়েছে।’ আগামী আর কোনো নির্বাচনে দলের নেতৃত্বে ‘থাকবেন না’ জানালেও করবিন বলেছেন, দলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য আলোচনার সময়টায় তিনি দায়িত্ব পালন করে যাবেন।


আরো সংবাদ



premium cement