২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তিন ইস্যুর সমাধান ছাড়াই শেষ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এশিয়া সফর

-

দ. কোরিয়ার সাথে সামরিক জোট নিয়ে ঝুঁকি রয়েই গেছে ; পারমাণবিক ইস্যুতে উ. কোরিয়ার সাথে সমঝোতা হয়নি ; জাপান ও দ. কোরিয়ার মধ্যে বৈরিতা নিরসনের উদ্যোগ ব্যর্থ
ষ এপি
যে তিনটি সমস্যাকে সামনে রেখে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও পেন্টাগন প্রধান মার্ক এসপার কোরিয়া উপদ্বীপ সফরে আসেন, সেই সমস্যাগুলো সমাধান ছাড়াই শেষ করলেন এশিয়া সফর। একইসাথে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ওয়াশিংটনের জোটের ভবিষ্যত নিয়ে ঝুঁকি রয়েই গেল।
পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূল করার বিষয়ে ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে উত্তর কোরিয়ার অস্বীকৃতি এই সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন এবং তর্কসাপেক্ষ ছিল। পারমাণবিক কূটনীতিতে এসপারের কোনো প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেই। তবে তিনি আশা করেছিলেন যে, উত্তরের আপত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে নির্ধারিত সামরিক মহড়া স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছিলেন সেটি পিয়ংইয়ংকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি হুমকি দিয়ে জানায়, যদি এই মাসের শেষের দিকে যৌথ সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হয় তাহলে আলোচনা বন্ধ করে দেয়া হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে মার্ক এসপার যৌথ মহড়া স্থগিত করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, মহড়া স্থগিত করাকে কোনো ছাড় হিসেবে দেখছি না। শান্তি অর্জনের জন্য এটিকে আমার বিশ্বাস অর্জনের পদক্ষেপ মনে হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ দক্ষিণ কোরিয়া ও ওয়াশিংটনের বিমান বাহিনীর সামরিক তৎপরতায় কোনো প্রভাব ফেলবে না।
তবে উত্তর কোরিয়া তাৎক্ষণিক এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রকে আগে তার শত্রুতাপূর্ণ নীতি বন্ধ করতে হবে। এটিকেই ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ং-এর মধ্যে বৈরিতার মূল কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এসপার ভিয়েতনামের রাজধানী হেনয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি উত্তরের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় হতাশ হয়েছেন। তবে পাশাপাশি শান্তি ও কূটনীতির দরজা উন্মুক্ত রাখারও কথাও বলেন এসপার।
তিনি বলেন, এখন যে সমস্যাটি দেখা যাচ্ছে, তা হল আমেরিকানরা কূটনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে ওয়াশিংটন থেকে উত্তর কোরিয়া কী চায় তা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। বর্তমান অচলাবস্থা পূর্ববর্তী উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা বহু আগে উভয়কে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
ফেডারেল অর্থায়নে অনুদানপ্রাপ্ত থিঙ্কট্যাঙ্কের উত্তর কোরিয়ান বিশ্লেষক ব্রুস বেনেট মনে করেন, উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং ১৯৫০-৫৩ সালে কোরিয়ান যুদ্ধের পর গঠিত যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা জোট ভেঙে দেয়া না হলে অন্য আর কিছুতে সন্তুষ্ট হবে না।
এ দিকে উত্তরের সাথে ঝামেলার মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে নতুন একটি বিভেদ সৃষ্টি হয় যুক্তরাষ্ট্রের। দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন করা সেনাদের ব্যয় বাবদ ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার দাবি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমানে প্রতিরক্ষা বাবদ যুক্তরাষ্ট্রকে যে অর্থ দেয় এটি তার পাঁচ গুণ। মার্ক এসপার বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় তার দেশের যে সেনা মোতায়েন রয়েছে তাদের জন্য সিউলকে অবশ্যই আরো অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে। এমনকি দাবিকৃত অর্থ না দিলে সৈন্য প্রত্যাহারেরও ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই পররাষ্ট্র দফতরের নেতৃত্বে উভয়ের আলোচনা ভেঙে যায়। সিউলের দৃষ্টিতে ওয়াশিংটন আরো অর্থ ব্যয়ের জন্য অযৌক্তিক দাবি করছে।
তৃতীয় যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন এসপার তা হলো, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মধ্য বৈরী সম্পর্ক। উভয়ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মিত্র। উভয় দেশের মধ্যে মতপার্থক্য নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও সিওল বলেছে যে, তারা এই সপ্তাহে টোকিওর সাথে একটি গোয়েন্দা-ভাগাভাগি চুক্তি থেকে সরে আসবে।
সিওলে এসপার তার জাপানি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগীদের ব্যক্তিগতভাবে এবং জনসমক্ষে বলেছিলেন, তাদের বিরোধ কেবল উত্তর কোরিয়া এবং চীনকেই উপকৃত করছে। কিন্তু তার কথায় পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন ঘটেছে বলে মনে হয় নি।


আরো সংবাদ



premium cement