২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় পরস্পরকে দোষারোপ যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার

রাশিয়ার ভাসমান পরমাণুচুল্লি : ফাইল ছবি -

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকির বিষয়ে বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘে একে অপরকে দোষারোপ করেছে। ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) চুক্তি লঙ্ঘনের জন্য পরস্পরকে দায়ী করার পর যুক্তরাষ্ট্র ও মস্কো চুক্তিটি পরিত্যাগ করে। তবে চীন বলেছে, তারা নতুন কোনো ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তিতে অংশ নেবে না।
জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত দিমিত্র পলিয়ানস্কি নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ওয়াশিংটনের একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানো প্রমাণ করে যে ‘অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আমেরিকা।’
যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর পর রাশিয়া এ বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছিল। কেননা, ১৯৮৭ সালের আইএনএফ চুক্তির আওতায় এমন মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিয়ানস্কি আরো বলেন, রাশিয়া অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে ‘গুরুত্বপূর্ণ সংলাপের’ জন্য রাশিয়া প্রস্তুত ছিল। অপর দিকে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করায় ইউরোপীয় দেশগুলোকে দায়ী করছে।
এদিকে তার মার্কিন প্রতিপক্ষ জোনাথন কোহেন বলেন, ‘রাশিয়া ফেডারেশন এবং চীন এখনো এমন একটি বিশ্ব পছন্দ করছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে আত্মসংযম করলেও তারা কোনো বাধা ছাড়াই তাদের অস্ত্র তৈরি অব্যাহত রাখবে।’ ফ্রান্সের উপ-রাষ্ট্রদূত অ্যান গুয়েগেন বলেছেন, নতুন অস্ত্রের লড়াইয়ে জড়ালে সেটি হবে একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ। যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক সমন্বয়কারী স্টিফেন হিকি রাশিয়াকে দোষারোপ করে বলেন, রাশিয়ার পদক্ষেপগুলো আগ্রাসনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষার জন্য এটি একটি স্পষ্ট হুমকি।
উল্লেখ্য, রাশিয়ার একটি অস্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্রে ভয়াবহ বিস্ফোরণের কয়েক সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে। মস্কোর সাথে সম্পর্কযুক্ত পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের ধারণা কেন্দ্রটিতে রাশিয়া পারমাণবিক ক্ষমতাধর ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
অস্বাভাবিক কৌশলগত অস্ত্র
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ন্যাটোর ইউরোপীয় কাউন্সিলের সদস্যÑ ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ও পোল্যান্ডের বক্তব্য নির্দেশ করছিলেন। দিমিত্র পলিয়ানস্কি বলেন, ন্যাটোর ইউরোপীয় কাউন্সিলের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধাপে ধাপে সমর্থন করে। যখন মিসাইলগুলো ইউরোপীয় শহরগুলোকে বিভিন্ন সাইট থেকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল তখন তারা বুঝতে পেরেছিল কি না সে প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের দিক থেকে এ জাতীয় পদক্ষেপের ব্যবহার প্রথম হবে না। তবে আমাদের আমেরিকান মিত্ররা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা বিষয়টিকে নমনীয় করতে চায়।
পলিয়ানস্কি ইউরোপীয়দের অনুধাবন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মার্কিন ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের কারণে আমরা সবাই একটি অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে একধাপ দূরে রয়েছি, যা কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
জোনাথন কোহেন কাউন্সিলকে বলেন, তার সময়ের আরো ভালো ব্যবহার হলো রাশিয়াকে জিজ্ঞাসা করা। আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষার জন্য যে হুমকি রয়েছে তা মোকাবেলা করতে হবে যেখানে তাদের উৎপাদিত ক্রুজ মিসাইলগুলো রয়েছে। রাশিয়াও অস্বাভাবিক কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র অনুসরণ করছে। কোহেন কাউন্সিলকে জানানো জনানোর জন্য রাশিয়াকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, শ্বেত সাগরের একটি রাশিয়ান নৌবাহিনীর পরীক্ষার জায়গায় ৪ আগস্টের বিস্ফোরণ কী কারণে হয়েছিল, এটি কোন পদ্ধতি ছিল এবং এই পদ্ধতিটি কী উদ্দেশ্যে কাজ করে।
চীনা পরমাণু সম্প্রসারণ
শ্বেত সাগরের বিস্ফোরণের পরিবর্তন ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বিবরণ, ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিস্ফোরণ ও আগুন ধরিয়ে দেয়ার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রয়াসের সাথে তুলনা করা হয়েছিল। চেরনোবিলের এই বিস্ফোরণ ছিল বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিস্ফোরণ। সামনের দিকে তাকিয়ে পলিয়ানস্কি বলেছিলেন, আইএনএফ চুক্তির অবসান দীর্ঘ পরিসরের পারমাণবিক অস্ত্রের ওপর নতুন কৌশলগত অস্ত্র কমানোর নতুন চুক্তি ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।


আরো সংবাদ



premium cement