২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

থাই সরকারের সাথে দক্ষিণের স্বাধীনতাকামীদের গোপন বৈঠক

বৈঠকের ব্যাপারে জানাতে রাজি হয়নি থাই সরকার ; হ আনুষ্ঠানিক শান্তি আলোচনা প্রাথমিক অবস্থায়- বিআরএন
-

থাইল্যান্ডের মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণের প্রধান সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ ‘বরিশান রেভোলুসি ন্যাশিউনাল’ (বিআরএন) বলেছে যে, তারা নতুন থাই সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে প্রথম বৈঠক করেছে এবং একটি আনুষ্ঠানিক ‘শান্তি আলোচনা’ আয়োজনের শর্ত হিসেবে কিছু দাবি পেশ করেছে।
মূলত বৌদ্ধপ্রধান দেশটির মালয়-ভাষী অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী গ্রুপ বিআরএনের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছরেূপ্রায় সাত হাজার মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে এবং কয়েক দশক ধরে গ্রুপটি বিক্ষিপ্তভাবে তাদের প্রসার ঘটিয়েছে। থাই সামরিক বাহিনী এবং সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিম বিদ্রোহীদের মধ্যে গত প্রায় দুই দশক ধরে সংঘাত চলছে।
বিআরএনের কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা গত শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্থানে থাই প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। সাক্ষাতে তারা সশস্ত্র বিদ্রোহের সাথে যোগসূত্র রয়েছে এমন সন্দেহে আটক সব ব্যক্তির মুক্তি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি পেশ করেছে। এটি আনুষ্ঠানিক আলোচনার দিকে অগ্রগতির একটি ধাপ হতে পারে বলে কর্মকর্তারা বলেছেন। প্রক্রিয়াটি একেবারেই প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে বলেও জানান তারা।
বিআরএনের সিনিয়র সদস্য পাক ফকির রয়টার্সকে বলেছেন, ‘সরকারিভাবে শান্তি আলোচনা যদি ভোজ হয় তবে এই গোপন বৈঠকগুলো ভোজের গরুটিকে রান্নাঘরে আনার মতো, কিন্তু এখনো গরুটিকে জবাই করা হয়নি।’ থাই সরকারকে পিচ্ছিল আইল মাছের সাথে তুলনা করেন ফকির। দক্ষিণের সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সাথে শান্তি সংলাপে থাই সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেয়া জেনারেল উডমচাই থমসরোট এ বৈঠকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিআরএন সরকারের সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ না নিলেও সাবেক সামরিক সরকারের প্রধান প্রায়ুথ চান-ওচার সাথে কমপক্ষে দু’বার যোগাযোগ করেছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় রয়ে গেছেন সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলে নেয়া প্রায়ুথ। যদিও বিরোধীরা দাবি করেছে যে, নির্বাচনটি ত্রুটিযুক্ত ছিল।
বিআরএনের সাথে অতীতের যোগাযোগগুলো কখনই আনুষ্ঠানিক আলোচনার মুখ দেখেনি এবং বিদ্রোহী দলটি ইয়ালা, পট্টনি এবং নারথিওয়াত প্রদেশের স্বাধীনতার দাবিতে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। এ অঞ্চলগুলো ১৯০৯ সালে সিয়ামের রাজত্বকে সংযুক্ত করার আগে একটি স্বাধীন মালয় সুলতানিয়ার অংশ ছিল। ফকির বলেন, ‘বেশ কয়েকটি সামরিকভাবে তুলনামূলক কম সক্রিয় দক্ষিণী দল সরকারের সাথে আলোচনা করেছে। আমাদের সমস্যার মূল কারণ ঔপনিবেশিকরণ এবং বিষয়টি অতীতের আলোচনায় কখনও স্পর্শ করা হয়নি।’
ফকির জানান, ২১ আগস্ট ব্যাংককে একের পর এক ছোট ছোট বোমা হামলার পেছনে তার দলের সংশ্লিষ্টতা ছিল না। যদিও বিআরএন সাধারণত সুনির্দিষ্টভাবে কোনো হামলার দায় স্বীকার করে না আবার অস্বীকারও করে না। ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তা শীর্ষ সম্মেলন’ চলাকালে ওই বোমা হামলার ঘটনা সরকারকে বিব্রত করেছে। হামলায় চারজন আহত হন এবং ঘটনার পর দক্ষিণ থেকে দু’জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। ফকির বলেন, ‘আমরা দক্ষিণের তিনটি প্রদেশের বাইরে আক্রমণ করব না কারণ আমরা সন্ত্রাসী তকমা গায়ে লাগাতে চাই না। আমাদের নিজস্ব অঞ্চল আছে, আমরা কেন তা থেকে বেরিয়ে আসব? এর পেছনে অবশ্যই অন্য কারো হাত রয়েছে।’
দক্ষিণাঞ্চলীয়দের গ্রেফতার করা সত্ত্বেও সরকার এ-ও বলেছে, এই হামলার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাত থাকতে পারে। যদিও রাজনৈতিক দলগুলো এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং কোনো গ্রুপই দায় স্বীকার করেনি। গত মাসে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আটক আবদুল্লাহ ইসামুস নামে এক ব্যক্তিকে সামরিক বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে এতটাই মারধর করা হয়েছিল যে তিনি কোমায় চলে যান। এ খবর প্রকাশ পেলে দক্ষিণে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। তবে সেনাবাহিনী বলেছে যে, আবদুল্লাহকে নির্যাতনের কোনো প্রমাণ নেই। থাই সেনাবাহিনীর সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় অংশ নেয়া কয়েকটি দলকে প্রতিনিধিত্বকারী আম্ব্রেলা গ্রুপ ‘মারা পাত্তানি’ আবদুল্লাহের মামলার আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। যদিও থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী সে আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।


আরো সংবাদ



premium cement