২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তুরস্কে ১৫ জুলাইয়ের বিজয় জনগণের জন্য অনুপ্রেরণা সামরিক শাসকদের হতাশা

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের তৃতীয় বার্ষিকীতে হতাহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আঙ্কারায় প্রেসিডেন্ট ভবনের বাইরে শহীদ স্মৃতিসৌধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন রজব তাইয়েব এরদোগান : ইন্টারনেট -

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার পাশাপাশি বল্কান এবং কাকেসাশ তুর্কি পাশের অঞ্চলের জনগণ ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই একটি অলৌকিক ঘটনা দেখেছিল। এদিন একদল মানুষ একটি সেনা অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা পরাজিত করে। এটি ওই অঞ্চলের জনগণের জন্য ছিল অনুপ্রেরণার মুহূর্ত। অন্য দিকে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের জন্য ছিল ভীতিকর অবস্থার বিকাশ। তুর্কি জনগণের এই বিজয়টি ওই অঞ্চলের জনগণ স্বাগত জানিয়েছিল। কিন্তু অনেক সরকারকে এ ঘটনায় হতাশ মনে হয়েছে।
তুরস্কের মানুষ অভ্যুত্থানের সাথে আগে থেকেই পরিচিত। তারা এর আগেও বহুবার অভ্যুত্থান দেখেছে। ১৯৬০, ১৯৭১, ১৯৮০ ও ১৯৯৭ সালে দেশটি সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার মুখোমুখি হয়েছিল। এ সময় সামরিক বাহিনী সংবিধান সংরক্ষণ ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূল্যবোধ রক্ষার জন্য বেসামরিক সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল।
তিন বছর আগে আজকের দিনে আবার তুরস্কের জনগণ রাস্তায় মিলিটারি যানবাহন ও সেনাদের দেখেছিল। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই রাতে কোনো বড় কারণ ছাড়াই অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় সামরিক বাহিনীর একাংশ। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সেনাবাহিনী রাজপথে অবস্থান নেয়। অভ্যুত্থানকারী সেনারা বিমান হামলা চালালেও তা রুখে দেয় নিরস্ত্র জনতা।
দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের দল জাস্টিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) ইস্তাম্বুলের দফতরেও হানা দেন বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা। অভ্যুত্থানের শুরুতেই সেনাপ্রধান জেনারেল হুলিসিয়াকে বন্দী করা হয়। ইস্তাম্বুল সেনানিবাসের সৈনিক ও কর্মকর্তারা অভ্যুত্থান সমর্থন করেনি। নৌবাহিনীপ্রধান এবং বিশেষ বাহিনীর অধিনায়ক অভ্যুত্থান প্রয়াসের বিরোধিতা করেন। বিভিন্ন শহর ও সেনানিবাসে অভ্যুত্থানকারীরা সরকারের অনুগত সহকর্মী ও জনতার প্রতিরোধের মুখে একের পর এক আত্মসমর্পণ করতে থাকে।
এতদসত্ত্বেও এরদোগান জনগণকে রাস্তায় থাকতে বলেন। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাস্তায় অবস্থান করে। অভ্যুত্থান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কঠিন ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। তুর্কি শান্তি পরিষদ নামের বিদ্রোহী সেনাদের সংগঠনের এই অভ্যুত্থানে অন্তত ২৫১ জন নিহত এবং ২,২০০ জনের বেশি আহত হন। আঙ্কারায় তুরস্কের পার্লামেন্ট ভবন ও প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে বোমা হামলা চালানো হয়েছিল। গুলির শব্দ আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের প্রধান বিমানবন্দর থেকেও শোনা যায়। অভ্যুত্থানের পর গণগ্রেফতার শুরু করে সরকার। আটক করা হয় ৪০ হাজার মানুষকে। এর মধ্যে ১০ হাজার সেনা। দুই হাজার ৭৪৫ জন বিচারককেও আটক করা হয়। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ হাজার স্টাফকে বরখাস্ত করা হয়। ২১ হাজার শিক্ষকের লাইসেন্স বাতিল করে সরকার। সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ লোকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় তুর্কি সরকার।
আরব জনগণের অধিকাংশ তুর্কি জনগণের বিজয়কে অনুপ্রেরণা দেয়। অন্য দিকে মিসর, সুদান, লিবিয়াসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর পাশাপাশি তাদের জনগণের ওপর সামরিক শাসনের অধীনে একটি কর্তৃত্ববাদী নেতৃত্ব আরোপ করা হয়। জনগণের প্রধান ইচ্ছা হচ্ছে নাগরিক কর্তৃপক্ষের অধীনে একটি কার্যকর গণতন্ত্র থাকা। তাই ১৫ জুলাই অভ্যুত্থান চেষ্টা পরাজিত করার ক্ষেত্রে তুরস্কের সাফল্য প্রভাবশালী শক্তিগুলোর জন্য হতাশাজনক মনে হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement