২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যুক্তরাষ্ট্রের ২৯ পণ্যে ভারতের শুল্কবৃদ্ধি কার্যকর

জিএসপি বাতিলের প্রতিশোধ
-

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা ২৯ পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ গতকাল রোববার থেকে কার্যকর করেছে ভারত। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। ২৯ পণ্যের মধ্যে রয়েছে কাজুবাদাম, আখরোট ও ডাল। মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করবে দিল্লি, প্রাথমিকভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রায় এক বছর পর এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিছু ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর ওয়াশিংটনের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত।
এ শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বোঝা বাড়বে ২২ কোটি থেকে ২৯ কোটি ডলার। ২০১৮ সালের একই পরিমাণ বোঝা ভারতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল ওয়াশিংটন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, শুল্ক আরোপ নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর মধ্যে বৈঠকের ১০ দিন আগে শুল্ক বাড়াল দিল্লি। মোদির নতুন সরকার গঠন করার পর এটি হতে যাচ্ছে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক। দিল্লির সরকারি সূত্র জানিয়েছে, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত মার্কিন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছে ভারত সরকার।
আগে ভারত বেশ কয়েকবার প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের কথা বললেও দুই দেশ সমঝোতায় পৌঁছতে পারে, এমন প্রত্যাশায় বারবার পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। গত সপ্তাহে জয়শঙ্কর, বাণিজ্যমন্ত্রী পিয়ুষ গয়াল ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের মধ্যে বাণিজ্য বিবাদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
কাজুবাদাম, আখরোট, ডালসহ যে ২৯টি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে, সেটার সিদ্ধান্ত আসলে নেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালের জুনে। কারণ গত বছরের মার্চে ভারতীয় অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের পর উচ্চতর আমদানি শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্তের কথা জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারত বারবার এ উচ্চতর শুল্ক থেকে ছাড় পেতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করে এলেও ওয়াশিংটন সাড়া দেয়নি।
এরপর দুই দেশের মধ্যে প্রায় এক বছর ধরে আলোচনা চলছে, এ সময় ভারত শুল্ক আরোপ বাস্তবায়ন কয়েকবার পিছিয়ে দেয়। তবে এ আলোচনার সাথে ভারতকে জিএসপি সুবিধার আওতায় কিছু পণ্যে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধা দেয়ার বিষয়টির সুরাহা হয়নি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয়, ভারত জিএসপির যোগ্য কিনা, তা তারা খতিয়ে দেখবে এবং চলতি বছরের জুনে এ সুবিধা উঠিয়ে নেবে।
ট্রাম্প বারবার অভিযোগ করে এসেছেন, ভারতে খুব বেশি উচ্চ শুল্ক আরোপ করা রয়েছে। এ বক্তব্যের সমর্থনে তিনি হার্লি ডেভিডসনের মোটরসাইকেলের ওপর দিল্লির শুল্ক আরোপের বিষয়টি টেনে এনেছেন। বাণিজ্য বিবাদে ক্রমেই জড়িয়ে পড়ছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর মার্কিন শুল্ক নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে ভারত। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, পম্পেওর সাথে জয়শঙ্করের বৈঠক এবং ওসাকায় জি২০ সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার বৈঠকের পর ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য বিবাদ নিরসনে ফের আলোচনা শুরু করবে। অন্যান্য যেসব পণ্যে শুল্ক বাড়বে সেগুলো হলোÑ লোহা ও ইস্পাত পণ্য, আপেল, নাশপাতি, স্টেইনলেস স্টিলের কিছু পণ্য, কিছু শঙ্কর ইস্পাত পণ্য, টিউব ও পাইপ ফিটিংস, স্ক্রু, বোল্ট ও রিপিট। দেশটির বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা সরকারের এ পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ধর বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা জবাব দিতেই হতো ভারতকে। প্রত্যাশা ছিল একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে, কিন্তু সেটা ঘটেনি। তবে এ শুল্ক আরোপের কারণে দেশে কাজুবাদাম ও আপেলের মতো পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, এমন অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
ট্রেড প্রমোশন কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার (টিপিসিআই) চেয়ারম্যান মোহিত সিঙ্গালা বলেন, ভারত শুল্ক কার্যকর করলে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের সুবিধা কমবে। ভারত একটি বিশাল বাজার এবং দেশটির অর্থনৈতিক ভিত্তি অত্যন্ত মজবুত। জিএসপি বাতিল তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না, কেননা ভারতের রফতানিকারকেরা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত।


আরো সংবাদ



premium cement