২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গোলানে ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব দিতে ট্রাম্পের ভূমিকার নিন্দা বিভিন্ন দেশের

গোলান মালভূমিতে মাউন্ট বেন্টালের সেনাক্যাম্প থেকে দামেস্ক ও বাগদাদের কাছের দূরত্ব দেখানোর জন্য একটি সাইনপোস্ট : এএফপি -

দখলকৃত গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকার নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা করে যেকোনো উপায়ে গোলান পুনরুদ্ধারেরও সংকল্প ব্যক্ত করেছে সিরিয়া। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে গোলানের বেশির ভাগ অংশই দখল করে নেয় ইসরাইল। চার বছর পর সিরিয়া সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
বৃহস্পতিবার এক টুইটে ট্রাম্প উপত্যকাটি নিয়ে তার সুস্পষ্ট অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও ইসরাইল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও কৌশলগত কারণে উপত্যকাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ।’
১৯৮১ সালে ইসরাইল আনুষ্ঠানিকভাবে গোলানে তাদের বসতি বিস্তৃত করলেও তাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। গত বছর তেল আবিব থেকে জেরুসালেমে দূতাবাস সরিয়ে আনা ট্রাম্প প্রশাসনই শেষ পর্যন্ত গোলানে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেয়। ট্রাম্পের এই উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া, তুরস্কসহ অনেক দেশ।
ট্রাম্পের টুইটের কয়েক ঘণ্টা পর নিন্দা জানায় দামেস্ক। তারা বলে, এ অবস্থানের ভেতর দিয়ে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ‘অন্ধ পক্ষপাতিত্ব’ আবারো প্রকাশ পেয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানায়, ‘গোলান সিরিয়ার। এটি আরবদের ভূখণ্ড ছিল ও থাকবে। এ বাস্তবতার কখনোই পরিবর্তন ঘটবে না। সম্ভাব্য সব উপায়ে গোলানের পবিত্র ভূমিকে দখলমুক্ত করার ব্যাপারে সিরিয়া আরো বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ‘অবজ্ঞা’ হিসেবেও অ্যাখ্যায়িত করেছে দামেস্ক।
গোলানে ইসরাইলি দখলদারিত্বকে মার্কিনের স্বীকৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। এ সিদ্ধান্ত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সঙ্কট উসকে দিতে পারে বলেও হুঁশিয়ার করেছে আঙ্কারা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান
গতকাল শুক্রবার ইস্তাম্বুলে ওআইসির এক বৈঠকে বলেছেন ‘আমরা, মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জোট গোলানের দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয়ার বিষয়কে অনুমোদন দিতে পারি না।’ তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাবুসঅগলু এক টুইটে অধিকৃত গোলান মালভূমির ওপর ইসরাইলের দখলদারিত্বের স্বীকৃতির পক্ষে ট্রাম্পের টুইটের নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, আঞ্চলিক অখণ্ডতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক আইনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। আন্তর্জাতিক আইনের বিরুদ্ধে এ মার্কিন পদক্ষেপ এ অঞ্চলে আরো সহিংসতা ও দুর্ভোগের জন্ম দেবে।
ট্রাম্পের টুইটকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলেছে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মিত্র ইরানও। সিরিয়ায় তেহরানের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি তেল আবিবের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে বলে গত কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ করে আসছে ইসরাইল। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাশেমী বলেন, ‘গোলান যে সিরিয়ারই’ এই বাস্তবতা (যুক্তরাষ্ট্রের) অবৈধ ও অগ্রহণযোগ্য স্বীকৃতিতে বদলাবে না।’
গোলানে ইসরাইলের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে আসাদের আরেক মিত্র রাশিয়া। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান জাতিসঙ্ঘের সিদ্ধান্তের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ১৯৮১ সালের ৪৯৭ নম্বর প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গোলান মালভূমির সিরিয়ার অংশ।’
অন্য দিকে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দিলেন এমন এক সময়ে যখন ইরান সিরিয়াকে ব্যবহার করে ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চাইছে।’
এ দিকে, দশককালের মার্কিন নীতি বদলে ট্রাম্প ২০১৭ সালে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ওই শহরে সরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। তার ওই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্কটকে আরো জটিল করে তোলে। বাড়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সীমান্ত সংঘর্ষও। পূর্ব জেরুসালেমকে নিজেদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দেখা ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদও জেরুসালেম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায়।


আরো সংবাদ



premium cement