২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

থেরেসার পরাজয়ে হতাশ ইইউ ব্রেক্সিট বাতিলেই সমাধান

-

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। তারা ব্রিটিশ সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে শিগগিরই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে থেকে যাওয়াকেই একমাত্র সমাধান মনে করছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক।
ইইউর সাথে আলোচনা করে তৈরি করা চুক্তি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষে ভোটাভুটিতে যান থেরেসা মে। থেরেসার উপস্থাপিত চুক্তি ৬৫০ সদস্যের পার্লামেন্টে ৪৩২-২০২ ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়। ইইউর কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদেরা হতাশা নিয়ে এর প্রতিক্রিয়া জানান। ব্রিটেনের ইতিহাসে কোনো ক্ষমতাসীন দলের নি¤œকক্ষে এটাই সবচেয়ে বড় পরাজয়। বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন থেরেসা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। চুক্তি পাসে ব্যর্থ হওয়ার খবর আসামাত্রই তিনি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় এই আস্থা ভোট হওয়ার কথা। ডোনাল্ড টাস্ক থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা ও রাজনীতিকেরা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন : পার্লামেন্টে থেরেসা মের এমন পরাজয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ব্রিটেনের উচিত হবে ইইউর সাথে থেকে যাওয়া। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, যদি ব্রেক্সিট চুক্তি অসম্ভব হয়, আবার কেউ যদি চুক্তি না হোকÑ এমনটা না চান, তাহলে শেষ পর্যন্ত একটি ইতিবাচক সমাধান বলার সাহস রয়েছে কার?
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জঁ ক্লদ ইয়ুঙ্কার সতর্ক করে বলেছেন একটি চুক্তিতে যাওয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে ব্রিটেনের জন্য। তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্রিটেনকে তার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে।’ তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যার ভোটের পর অগোছালোভাবে একটা বিচ্ছেদ হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে গেল।
ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষের প্রধান আলোচক মাইকেল বার্নিয়ার বলেন, ব্রিটেনকে তার পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখন কী করা হবে, তা ব্রিটিশ সরকারের ওপর নির্ভর করছে। ইইউ ঐক্যবদ্ধই থাকবে এবং একটি চুক্তিতে যাওয়ার জন্য দৃঢ় থাকবে।
জার্মানি : জার্মানির অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ শলত্থস তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আজ দিনটি বিষণœ দিন ইউরোপের জন্য। আমরা ভালোভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তবে মনে হচ্ছে, একটি কঠিন বিচ্ছেদ চুক্তিই সবচেয়ে আকর্ষণীয় পছন্দ হয়ে যাচ্ছে।’ ক্ষমতাসীন ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট ইউনিয়ন পার্টির নেতা অ্যানেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাওয়া এই বক্তব্যের সমর্থনে বলছেন, একটি কঠিন বিচ্ছেদ দুই পক্ষের জন্যই সবচেয়ে খারাপ হবে।
ফ্রান্স : ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মনে করেন, সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে পড়েছে ব্রিটেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, একটি পরিবর্তনের সময় অপরিহার্য। কারণ কোনো চুক্তি না হওয়া ক্ষতিকর হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরিবর্তনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনায় যেতে হবে। কারণ, ব্রিটিশরা এখন যে অবস্থায়, তাতে তারা এখন তরী ভেড়াতে বা ফিরিয়ে নিতে পারবে না।’
আয়ারল্যান্ড : এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে আয়ারল্যান্ডের সরকার জানায়, কোনো চুক্তি ছাড়াই ব্রিটেন বিচ্ছেদ করছেÑ এমন প্রস্তুতি তিনি নিতে শুরু করেছেন। ব্রেক্সিট চুক্তির বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আলোচিত ৩৯ বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতিপূরণ কিভাবে পরিশোধ করবে ব্রিটেন। এ ছাড়া ব্রিটেনে বসবাসরত জোটের অন্য দেশগুলোর প্রায় ৩২ লাখ মানুষের অবস্থান কী হবে বা ইউরোপের অন্য দেশগুলোয় থাকা ব্রিটেনের প্রায় ১৩ লাখ নাগরিকের ভবিষ্যৎ কী হবে, এগুলোও চুক্তির মধ্যে ছিল। এগুলো ছাড়া যুক্তরাজ্যভুক্ত নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ইইউতে থেকে যাওয়া আয়ারল্যান্ডকে আলাদা করতে আবার কিভাবে সীমান্ত তুলতে হবে, তার মীমাংসা করা। এ চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছরের বিতর্ক, সমঝোতা এবং দরকষাকষির সব কিছুই ব্যর্থ হয়ে গেল।
মুদ্রাবাজার : এই ঘটনার পর মুদ্রাবাজারও প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার দিনভর দর কমলেও গতকাল বুধবার ডলারের বিপরীতে বেড়েছে পাউন্ডের দর। বুধবার সকালে ডলারের বিপরীতে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেড়ে যায় পাউন্ডের দর। ২০১৮ সালে ব্রেক্সিট নিয়ে অনিশ্চয়তায় মুদ্রাটি দর হারায় প্রায় ৮ শতাংশ। ইউরোর বিপরীতেই সামান্য দর বেড়েছে পাউন্ডের।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের এই পরাজয় মুদ্রাবাজারে খুবই প্রত্যাশিত ছিল। ২০১৮ সালে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময়ই সরকারের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।
এ ঘটনায় হতাশ ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আড়াই বছর ধরে চলা এই অনিশ্চয়তা শেষ হবে বলে ধৈর্য ধরে ছিলেন তারা। এখন হতাশা ছাড়া আর কিছুই অনুভূত হচ্ছে না। কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইন্ডাস্ট্রিজ এক বিবৃতিতে জানায়, সব ব্যবসায় অনুভব করছে কোনো চুক্তি না হওয়া ভালো হয়নি। দ্রুত একটি নতুন চুক্তির পরিকল্পনা প্রয়োজন। এখনই সময় আমাদের রাজনীতিবিদদের একটি ইতিহাস তৈরি করার।
জার্মান অটো ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন ভিডিএ তাদের প্রতিক্রিয়ার জানায়, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য তার দেশকে অসহায় করেছে। এখন একটি অনিয়ন্ত্রিত বিচ্ছেদ হবে বলেই মনে হচ্ছে। কোনো চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ হলে তা মারাত্মক হবে।


আরো সংবাদ



premium cement