২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ম্যাক্রোঁর হুঁশিয়ারি

এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ -

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, আশা তৈরি করুন, ভয় নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির শতবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া তার ভাষণে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে এ আহ্বান জানান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনসহ ৭০ জন রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে দেয়া তার ভাষণে ম্যাক্রোঁ বলেন, জাতীয়তাবাদ হলো দেশপ্রেমের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।
১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির শতবর্ষপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে প্যারিসের আর্ক ডি ট্রায়োম্ফে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত সেনাদের সমাধিস্থলে তিনি ওই ভাষণ দেন। ওই ভাষণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যামেরিকান সিমেন্ট্রি পরিদর্শন করেন। ম্যাক্রোঁ বলেন, পুরনো সেই দানব আবার জেগে উঠেছে, বিশৃঙ্খলা ও মৃত্যুর সেই কাজ পরিপূর্ণ করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, দেশপ্রেম জাতীয়তাবাদের পুরোপুরি বিপরীত। আর জাতীয়তা হচ্ছে দেশপ্রেমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। আমাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়ার নামে এবং অন্য সব বিষয়কে উপেক্ষা করে আমরা সেসব বিষয়কে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছি, যেগুলো একটা জাতিকে মূল্যবান, জীবন্ত ও মহান করে তোলে এবং সর্বোপরি সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে।
নিরাপত্তাজনিত কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প চ্যাম্পস ইলিয়সে আলাদাভাবে পরিদর্শন করেছিলেন। অন্য দিকে ভøাদিমির পুতিন সেখানে সবার শেষে ছিলেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল ট্রাম্প ও ম্যাক্রোঁর মধ্যে দাঁড়িয়েছিলেন। যুদ্ধসমাপ্তির সেই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে ঘণ্টা বাজানো হয় এবং যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে লাল, সাদা ও নীল ধোঁয়া ছড়িয়ে দেয়। পরে ম্যাক্রোঁ নেতৃবৃন্দের সম্মানে এক মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। ট্রাম্প সুরেসনেস অ্যামেরিকান সিমেন্ট্রি অ্যান্ড মেমোরিয়াল পরিদর্শন করেন, যেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৫০০ মার্কিন সেনাকে সমাহিত করা হয়েছিল। সেখানে এক ভাষণে তিনি সমাহিত সেনাদের সাহসী অ্যামেরিকান আখ্যা দিয়ে বলেন, তারা তাদের শেষনিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়ে গেছেন। এক শতাব্দী আগে যে সভ্যতা রক্ষার জন্য তারা তাদের জীবন দিয়েছিলেন, তা সুন্দরভাবে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তবে এর আগে গত শনিবার খারাপ আবহাওয়ার জন্য প্যারিসের উত্তর-পূর্ব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্র বেলেয়াউ ওড পরিদর্শন বাতিল করায় সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট। ওই দিন ট্রাম্প ছাড়া বাকি নেতৃবৃন্দ প্যারিসে একটি শান্তি ফোরামে যোগ দেন। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মারকেল বলেন, বর্তমানে বেশির ভাগ চ্যালেঞ্জই কোনো দেশ বা জাতির জন্য একা সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে একত্রে তা সম্ভবপর। আর এ কারণেই আমাদের একটি সাধারণ নীতি প্রয়োজন। যদি ১০০ বছর আগে বিচ্ছিন্নতা কোনো সমাধান না হতে পারে, তাহলে বর্তমান বিশ্বে আন্তঃযোগাযোগের বিশ্বে তা কিভাবে সম্ভব হবে?
এ সময় জাতিসঙ্ঘ ও এর মতো যেসব প্রতিষ্ঠান এসব বৈশ্বিক সমস্যার বহুমুখী সমাধান খুঁজছে তাদের প্রশংসা করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। তিনি বলেন, পৃথিবী আরো বিশৃঙ্খল হওয়ার আগে আজকের দিনটি কি স্থায়ী শান্তি ও ঐক্যের শেষ মুহূর্তের প্রতীক হবে? এটি আমাদের ওপরই নির্ভর করে। এ দিকে ইউরোপের বাইরে বেলজিয়ামেও এ দিনটির স্মরণে হাজার হাজার মানুষ একত্র হয়েছিল।
ছয়টি সা¤্রাজ্য ও ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনে বর্তমানের প্রায় ৭০টি দেশ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। যুদ্ধে এক কোটির বেশি সেনা নিহত হয়েছিল এবং আহত হয়েছিল এর প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক সেনা। নিহত সাধারণ মানুষের সংখ্যার সঠিক কোনো হিসাব না থাকলেও ধারণা করা হয়, সংখ্যাটা ৫০ লাখ থেকে এক কোটির মধ্যে হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement