২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রোহিঙ্গা নির্যাতন ও বিতাড়ন নিয়ে আইসিসির তদন্ত শুরু

-

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলামদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত বা আইসিসি। হেগের এই আদালতের কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে যেভাবে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বিতাড়িত করা হয়েছে,তাতে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ সঙ্ঘটিত হয়েছে কি না- সে বিষয়ে প্রাথমিক তদন্তে হাত দিয়েছে তার দফতর।
রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য মিয়ানমারের বিচারের এখতিয়ার হেগের আন্তর্জাতিক আদালতের রয়েছে বলে সিদ্ধান্ত আসার ধারাবাহিকতায় এই তদন্ত শুরু হলো। আইসিসির এই তদন্তের পথ ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পথ খুলতে পারে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু স্থাপনায় ‘বিদ্রোহীদের’ হামলার পর রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান। সেই সাথে শুরু হয় বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল।
গত এক বছরে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কথায় উঠে এসেছে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ভয়াবহ বিবরণ। জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা মিয়ানমারের বাহিনীর ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার বলে আসছে, তাদের ওই লড়াই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে, কোনো জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে নয়। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকারের ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে জাতিসঙ্ঘ গঠিত স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনে যে ধরনের অপরাধ হয়েছে, আর যেভাবে তা ঘটানো হয়েছে, মাত্রা, ধরন এবং বিস্তৃতির দিক দিয়ে তা ‘গণহত্যার অভিপ্রায়কে’ অন্য কিছু হিসেবে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টার সমতুল্য। মঙ্গলবার জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টে গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের সেনাপ্রধান এবং জ্যেষ্ঠ পাঁচ জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি করার কথা বলা হয়েছে। ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বলেছে, রাখাইনের হত্যাযজ্ঞের হোতাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা অস্থায়ী একটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে; আর জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদকেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমার আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সদস্য না হওয়ায় সেখানে সংঘটিত অপরাধের বিচার করার সরাসরি কোনো এখতিয়ার এ আদালতের নেই। কিন্তু রোহিঙ্গারা যেহেতু মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, এভাবে তাদের বিতাড়নের বিষয়টি যেহেতু আন্তঃসীমান্ত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং বাংলাদেশ যেহেতু আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সদস্য, সেহেতু আইসিসি বিষয়টি তদন্ত ও বিচার করতে পারে কি না- সেই প্রশ্ন রেখে গত এপ্রিলে একটি আবেদন করেন ওই আদালতের প্রসিকিউটর ফারু বেনসুদা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য এবং বিভিন্ন অধিকার সংগঠনের যুক্তি শুনে আইসিসির তিন বিচারকের প্রি ট্রায়াল প্যানেল গত ৬ সেপ্টেম্বর সিদ্ধান্ত দেয়- এ বিষয়টি বিচারের এখতিয়ার আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের রয়েছে। আইসিসির ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমার সরকারের প থেকে সে সময় বলা হয়, ‘ব্যক্তিগত দুর্দশার বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে সেখানে অভিযোগ সাজানো হয়েছে, যার সাথে আইনি যুক্তির কোনো যোগাযোগ নেই, বরং আবেগের জায়গা থেকে আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।’

 

 


আরো সংবাদ



premium cement