২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাকে ছেড়ে দিন, তিনি নির্বাচন করুক, দেখেন কোথায় কী দাঁড়ায়

বক্তৃতা করছেন মির্জা ফখরুল - ছবি : নয়া দিগন্ত

আওয়ামী লীগ নৌকা ইতিমধ্যেই পরাজিত হয়ে গেছে এবং জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যে কারণে এখন তারা কোর্টের হুমকি দেখায়, সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে হুমকি দেখায়। জনগণের সঙ্গে তারা নির্বাচন করতে পারবে না বলেই আজকে তারা এ সমস্ত অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। প্রিয় বন্ধুগণ ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন জাতীয় ইতিহাসে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে এদেশে গণতন্ত্র থাকবে কী থাকবে না। আমরা কি আমাদের দেয়া ভোটে আমাদের প্রতিনিধি প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবো? না কি স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদি জনগণের রায়কে উপেক্ষা করে তারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে নিবে।

এই ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে আমরা কি স্বাধীন জাতি হিসেবে টিকে থাকবো, না কি শৃংখলিত জাতি হিসেবে থাকবো? এই নির্বাচনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে আমাদের এই তরুণ যুবকেরা তারা ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে থাকবে না কি ওই শৃংখলিত অবস্থায় বন্দি হয়ে থাকবে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনেই সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে আমাদের মা বোনেরা তারা নিরাপদে দেশে বসবাস করতে পারবে, মাথা উচু করে চলতে পারবে? না কি সবসময় মাথা নিচু করে চলবে।

তিনি ২২ডিসেম্বর (শনিবার) দুপুরে সৈয়দপুর শহরের ফাইভ স্টার মাঠে ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও সৈয়দপুর পৌর মেয়র অধ্যক্ষ মো: আমজাদ হোসেন সরকারের সমর্থনে আয়োজিত নির্বাচনী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য বিলকিস ইসলাম, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর ৫ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী এজেডএম রেজওয়ানুল হক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দিনাজপুর ৪ আসনের প্রার্থী আখতারুজ্জামান মিয়া, সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি শাহিন আক্তার শাহিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সভাপতি এরশাদ হোসেন পাপ্পু, সেক্রেটারী এমএ পারভেজ লিটন, যুবদলের সেক্রেটারী তারিক আজিজ, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রওনক জাহান রিনু, পৌর জামায়াতের সেক্রেটারী শরফুদ্দিন খান, ছাত্রশিবিরের উপজেলা সভাপতি আব্দুল মুহিত প্রমুখ।

এসময় মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১০ বছরে স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদীর যে একটা পাথর আমাদের বুকের উপর চাপিয়ে রেখেছে। সেই পাথর চাপা দিয়ে আমাদের সমস্ত অস্তীত্বকে তারা ধ্বংস করে দিতে চায়। তারা আমাদের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, তারা আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। তারা রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে একে একে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আদালতের কাছে যান কোনো বিচার পাবেন না, প্রশাসনের কাছে যান সেখানে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কিছু পাবেন না। আমাদের ছেলেরা আমাদের মেয়েরা চাকরির জন্য যায়, সেখানে চাকরি দেয়া হয় না। আওয়ামী লীগ না হলে চাকরি হবে না। আওয়ামী লীগ হলেই হবে না, ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাগবে।

আজকে আওয়ামী লীগের সরকার তারা উন্নয়নের নামে নিজেদের উন্নয়ন করেছে। নিজেদের পকেট বোঝাই করেছে। জনগণের পকেট কেটেছে। এই ইলেকট্রিক বিল প্রায় ১০ গুন বাড়িয়েছে। গ্যাসের বিল বাড়িয়েছে, পানির বিল বাড়িয়েছে। তারা সব জায়গায় প্রত্যেকটা বিল বাড়িয়ে বাড়িয়ে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আপনারা দেখেন কৃষকদের কে বলেছিল বিনা পয়সায় সার দিবে। সার দিয়েছে? ৩ শ’ টাকার সার ১২ শ’ টাকা হয়েছে। ১০ টাকা কেজির চাল খাওয়াবে বলেছিল। ৪০ থেকে ৫০ টাকা চালের কেজি। প্রত্যেকটি জিনিসের দাম ৩ থেকে ৪ গুণ বেড়েছে। ক্রয়ের বাইরে চলে গেছে। দেশে কোনো নিরাপত্তা নাই। আর তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে ব্যবহার করছে যে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আওয়ামীলীগের চাকরি করে। আমি পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই- আইন শৃংখলা বাহিনীর ভাইদের আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী। আপনারা ব্যক্তিগত করার কর্মচারী কর্মকর্তা নন। আপনাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। নির্বাচনে যেন জনগণ ভোট দিতে পারে তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের কথায় যখন তখন গ্রেফতার করা যাবে না এবং শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করা যাবে না। আজকে মানুষের মুখে হাসি নাই, নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নাই। আজকে সেই তথা কথিত লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোন ব্যবস্থা নাই। মাঠই নাই তার মাঠ সমান হবে কই থেকে। নির্বাচনের তো মাঠই নাই।

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা এদেশের মানুষ। এদেশ আপনাদের। বন্ধুরা ভয় পাবেন না। আপনাদের অধিকার আদায় করে নিবেন। ৩০ ডিসেম্বর আপনারা ভোট কেন্দ্রে সকাল সকাল ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন আর ভোট শেষে ভোট গণনা করে বাড়ি ফিরবেন। এটাই আপনাদের কাজ। আপনি রক্ষা না করলে কেউ রক্ষা করে দিবে না। যারা বাধা দিবে তারাই এ দেশের শত্রু।
অনেক বড় বড় কথা বলছেন। সরকার বিচার বিভাগ, আই শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে বলছেন বিএনপি মাঠে নেই। মাঠে আছে কি না সৈয়দপুরে এসে দেখে যান। এই সৈয়দপুরে এত অত্যাচার নিপীড়নের পরও হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে। কেন?

কারণ তাদের একটি মাত্র কথা। যে গণতন্ত্রের মাতা আমাদের সকলের মাথা যিনি, সারা জীবন তার ত্যাগ স্বীকার করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। সেই মহিয়সী নারী-মহিয়সী নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যে মামলায় কারাগারে আটক করে রেখেছেন। সাহস থাকলে তাকে মুক্তি দিয়ে নির্বাচন করতে দেন না। এতো ভয় কেন তাকে মিথ্যে মামলায় আটকিয়ে রেখেছেন। তাকে ছেড়ে দিন। তিনি নির্বাচন করুক। দেখেন কোথায় কী দাঁড়ায়। সেটা আপনারা করবেন না বলেই, ১০ মাস থেকে তাকে জেলখানায় আটকে রেখেছেন। মিথ্যে মামলা দিয়ে তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দিচ্ছেন না। নেতাকর্মীদের মিথ্যে মামলায় আটকে রেখেছেন। ৯৩ হাজার মামলা দিয়েছেন, ২৪ লাখ আসামী করেছেন। সারা দেশে নজির নাই। নজিরবিহীন।

নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। নির্বাচন কমিশন আমাদের দেশে একথা রয়েছে- ঠুটো জগন্নাথ, ঢাল নেই কিচ্ছু নেই। কিছুই করতে পারেন না। কিছু বললেই চুপচাপ অসহায়দের মতো থাকে। এই তফশিলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারেনা। আমরা আগেই বলেছি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ হতে পারে না। তারপরও আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশনেত্রীর দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য। তারেক রহমান সাহেবকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। আমাদের হাজার হাজার ভাইয়েরা কারাগারে আটক আছেন। তাদেরকে মুক্ত করার জন্য। এ লড়াই গণতন্ত্রের জন্য লড়াই।

সৈয়দপুরের জনসভায় সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর ও তারাগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হন। ফলে জনসভা স্থল ফাইভ স্টার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জনসভা শেষে মির্জা ফখরুল পাশ্ববর্তী পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ এ নির্বাচনী সভায় অংশগ্রহণের জন্য রওনা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement