০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত ডিম-মুরগি উৎপাদনে ব্যাপক অগ্রগতি

-

বিগত কয়েক বছরে অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত নিরাপদ মুরগির গোশত ও ডিম উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়েছে দেশীয় পোলট্রি শিল্প। সরকার আইন করে পোলট্রি ও মাছের খাবারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, অ্যান্টিবায়োটিকের দায়িত্বহীন ব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতের রুল জারি হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিগত কয়েক বছরে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। তা ছাড়া পোলট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে নিরাপদ পোলট্রি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা নিরাপদ পোলট্রি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
‘জার্নি অব সেইফ পোলট্রি প্রোডাকশন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড রোল অব মিডিয়া’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে গতকাল এ তথ্য উঠে আসে। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজন করে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। বৈঠকে মিডিয়া প্যানেলে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, আরটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক লুৎফর রহমান, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত এবং এসএ টিভির বার্তা সম্পাদক সালাহউদ্দীন বাবলু। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার, পোলট্রি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো: মকবুল হোসেন, অধ্যাপক ড. শওকত আলী, অধ্যাপক ড. এস সি দাস, অধ্যাপক ড. কে এম এস ইসলাম প্রমুখ।
ব্রয়লার মুরগির গোশত ও ডিম নিয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মধ্যেই এমন কিছু খবর আসে, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত করে জানিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে এমনই একটি খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যমুনা টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সুশান্ত সিনহা। তিনি জানান, অপর একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন শিক্ষকের গবেষণা ও সাক্ষাৎকার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনিও রিপোর্ট করার জন্য জনৈক শিক্ষকের কাছে যান। কিন্তু তার সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে বাংলাদেশের পোলট্রি ফিড নিয়ে গবেষণার দাবি করলেও দুই শতাধিক নিবন্ধিত কোম্পানির কোনোটির স্যাম্পল নিয়ে গবেষণা করেননি তিনি। শুধু তা-ই নয়, কোন কোন উপকরণ দিয়ে পোলট্রি ফিড তৈরি হয় সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই ওই অধ্যাপকের। তিনি তার গবেষণাকর্মে মাত্র দু’টি মুরগি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এ ধরনের একটি গবেষণায় ৫০০ থেকে কয়েক হাজার মুরগির ওপর গবেষণা হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. ইলিয়াস হোসেন। তা ছাড়া ওই গবেষণাটির গবেষণা পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন উপস্থিত একাধিক পোলট্রি বিজ্ঞানী ও গবেষক। বৈঠকের সঞ্চালক সরকারের সাবেক তথ্য কমিশনার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, পোলট্রি ফিড কিংবা মানবদেহে এর প্রভাব নিয়ে কোনো গবেষণা না করা সত্ত্বেও দেশীয় পোলট্রি ফিড নিয়ে যে বক্তব্য জনৈক অধ্যাপক গণমাধ্যমকে দিয়েছেন, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অপেশাদারিত্বের লক্ষণ।
ওয়ার্ল্ড’স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হাসান তার প্রেজেন্টেশনে জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে প্রায় তিন হাজার মেট্রিক টন এজিপি অলটারনেটিভ এডিটিভস (এএএ) দেশে আমদানি হয়েছে এবং প্রায় তিন দশমিক চার মিলিয়ন টন মুরগি ও মাছের খাবার তৈরিতে তা ব্যবহৃত হয়েছে, যা দেশে উৎপাদিত মোট ফিডের প্রায় ৮০ শতাংশ। মাহাবুব বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকমুক্ত ফিড উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে তিনি বলেন, নিরাপদ ডিম ও গোশত উৎপাদনে ফিড একটি অন্যতম নিয়ামক হলেও নানাভাবেই এতে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। যেমনÑ জবাই, প্রসেস ও স্টোরেজ করার সময়, এমনকি রান্নার সময়ও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই এক দিকে যেমন নজরদারি বাড়ানো, আইন ও নীতিমালা প্রয়োগে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে আরো বেশি কঠোর হতে হবে, অন্য দিকে তেমনি ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।
গণমাধ্যমের কর্মকর্তারা বলেন, তথ্যের প্রাপ্যতা ও দ্বিমুখী প্রবাহের অভাবে অনেক সময় কিছু সারফেস রিপোর্ট প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তাই বস্তুনিষ্ঠতার স্বার্থেই তথ্যের দ্বিমুখী প্রবাহ বাড়াতে হবে। তবে কোনো একটি উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য ক্রস চেক করা সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বের অংশ। তারা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোনো সংবাদ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া থাকলে তা স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত। এতে সংবাদমাধ্যম সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। পোলট্রি খাতে অথেনটিক রিসার্চের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দেশীয় মুরগির উন্নতজাত নিয়েও গবেষণার কথা বলেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর খালেদা ইসলাম বলেন, দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ এবং পুষ্টিসূচকের উন্নতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে পোলট্রি শিল্প। তিনি বলেন, ব্রয়লার গোশত ও পোলট্রির ডিম স্বাস্থ্যসম্মত এবং বিশ্বজুড়েই হোয়াইট মিট খাওয়ার পরিমাণ বাড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement