১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা নেই

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৭
-

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা নেই বললেই চলে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারার বা কোষাধ্যক্ষই নেই। যে ক’টিতে ট্রেজারার আছেন, তার বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কৃর্তক নিযুক্ত নন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়গুলো তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দিতে আগ্রহী নয়, অথচ জবাবদিহিতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার জন্য যা অপিহার্য। আর্থিক আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্ট প্রদানে তারা সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের অডিট রিপোর্টকে ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে ‘হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশের উচ্চশিক্ষা তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সর্বশেষ ৪৪তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের কাছে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে এবং প্রতিবেদনটি জাতীয় সংসদেও উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিক বিষয়গুলো স্বচ্ছভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশনের কাছে উপস্থাপন করছে না। উল্লেখযোগ্য বেরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিরীক্ষিত বার্ষিক হিসাব বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশনে নিয়মিতভাবে দাখিল করে না। এটি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমন কার্যকলাপ বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। প্রতিবেদনে আরো মন্তব্য করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ বা ট্রেজারার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ পূরণ না করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সঠিকভাবে তাদের প্রশাসনিক, আর্থিক, অ্যাকাডেমিক ও অন্যান্য কার্যক্রম সঠিকভাবে ও সুনিপুণভাবে চলতে পারে না।
ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করা ৯০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪২টিকে আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেজারার রয়েছেন। অপর ৪৮টির কোনো কোনোটিতে ট্রেজারার থাকলেও তারা আইন অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত নন। অন্যগুলোতে ট্রেজারারই নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আর্থিক অডিট রিপোর্ট কমিশনে প্রেরণ করেছে। এর মধ্যে ১২টির অডিট ফার্মের নিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের পত্র পাওয়া যায়নি। ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি।
ইউজিসি সুপারিশ করেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর ধারা ৪৫ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত বহিঃনিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানগুলোর (সিএ ফার্ম) মধ্য থেকে সরকার কর্তৃক মনোনীত একটি ফার্ম দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষা করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু সিএ ফার্ম মনোনয়নের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, সেখানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রস্তাবিত তিনটি অডিট ফার্মের মধ্য থেকে সরকার একটি অডিট ফার্ম মনোনয়ন দেয়। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দের তালিকা থেকে একটি ফার্ম বাছাই করা হয়। এর ফলে আর্র্থিক বিষয়ে প্রকৃত তথ্য পাওয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ছে। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব না নিয়ে ইউজিসির পরামর্শ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষ কোনো ফার্ম নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিরীক্ষা করানো যায়।

 


আরো সংবাদ



premium cement