১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

একসাথে চার সন্তান, উৎসবের পিঠে উৎকণ্ঠা

এক সাথে চার সন্তান প্রসব করেন মিরা বেগম - নয়া দিগন্ত

শত কষ্টের মধ্যেও সারাক্ষণ বাড়িতে উৎসবের আমেজ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর সাগরকে নিয়ে বিরাজ করছে এই উৎসবমুখর পরিবেশ। নানীর কোলে যমুনা, খালা নিয়ে বসে আছেন পদ্মাকে, মায়ের কোলে আছে মেঘনা আর আরেক নানীর কোলে সাগর। চলছে তাদের সেবা-যত্ন। কোনো কিছুরই কমতি নেই। মিরা খাতুনের গর্ভে একসাথে জন্ম নেয়া এই চারটি শিশু লালন-পালন করা তাদের কাছে যেন কোনো বিষয়ই নয়।

কিন্তু সমস্যা একটাই, আর তা হলো প্রতিদিন দুধ আর ওষুধ মিলিয়ে প্রয়োজন হাজার টাকা, যা শিশু চারটির নানা দিনমজুর অলিয়ার রহমানের পক্ষে জোগাড় করা কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। শিশুদের বাবা মাহবুবুর রহমানও একটি বেসরকারি কোম্পানির সরবরাহকারীর কাজ করেন। তার আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে।

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা আর সাগর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামের মাহবুবুর রহমান সবুজের চার সন্তান। সবুজের স্ত্রী একই উপজেলার তৈলকুপি গ্রামের অলিয়ার রহমানের একমাত্র কন্যা মিরা বেগম (২২)। তার গর্ভে গত ২৩ নভেম্বর তাদের জন্ম। সুস্থ অবস্থায় বর্তমানে মা আর শিশুরা তৈলকুপি গ্রামেই অবস্থান করছে।

রোববার সরেজমিন তৈলকুপি গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অলিয়ার রহমানের বাড়িতে উৎসবের আমেজ। নানী বিনা বেগম শিশু যমুনার শরীরে তেল মালিশ করছেন। খালা মিনা বেগম শিশু পদ্মাকে কোলে নিয়ে পায়চারী করে চলেছেন। মা মিরা বেগম শিশু মেঘনাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন। আরেক নানী তাসলিমা বেগম শিশু সাগরকে কোলে নিয়ে কান্না থামাবার চেষ্টা করছেন। ফ্লাক্সে করে গরম পানি নিয়ে এসেছেন অজপা বেগম। দুধ তৈরি করে সবাইকে খাওয়াতে হবে। বাড়িতে এ সময় উপস্থিত আছেন আরো পাঁচ-ছয়জন। যারা শিশুদের দেখতে এসেছেন। সংবাদকর্মী পরিচয় দেয়ার পর সবাই শিশুদের দেখানোর জন্য প্রতিনিধির দিকেও এগিয়ে আসেন।

মা মিরা বেগম জানান, ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর প্রথম সন্তান গর্ভে এলে তারা স্বামী-স্ত্রী খুবই খুশি ছিলেন। মাঝে মধ্যেই দু’জন পরিকল্পনা করতেন কি নাম রাখবেন। ছেলে হলে কি বানাবেন, আর মেয়ে হলে কি হবে। এভাবে তিন মাস কেটে যাওয়ার পর তার শরীর দ্রুত বাড়তে থাকায় একদিন চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, মিরা বেগম একসাথে তিনটি শিশুর জন্ম দেবে। চিকিৎসকের এই কথায় তারা হতবাক হয়ে পড়েন। কিছুদিন পর আবারো পরীক্ষা করে জানান, তিনটি নয় শিশু জন্ম নেবে চারটি। তখন দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে শিশুরা বাঁচবে কিনা, তার (মা’র) কোনো ক্ষতি হবে কি না। এই চিন্তার মধ্যেই দিন কাটতে থাকে তাদের। এক সময় ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মিরা বেগমের চারটি শিশুর জন্ম হয়। প্রথম দিকে শিশুরা একটু বেশি হালকা থাকলেও বর্তমানে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
মিরা জানান, এখন তার সন্তানদের দেখাশোনা করার জন্য বাড়িতে সব সময় লোকজন ডাকতে হচ্ছে। শিশুদের নানী-খালারা এসে সময় দিচ্ছেন। রাতে চারজন চারটি শিশু নিয়ে ঘুমান। তবে মা হিসেবে তাকে সবার দেখভাল করতে হয়। এদের কাউকে দত্তক দেয়ার ইচ্ছা আছে কিনা জানতে চাইলে মিরা বেগম জানান, গর্ভের সন্তান কখনো কাউকে দেয়া যায়?

মিরা বেগমের মা বিনা বেগম জানান, তার স্বামী অলিয়ার রহমান অন্যের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। এই কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। মাঠে তাদের চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। এই শিশুদের বর্তমানে প্রতিদিন ৭০০ টাকার কৌটার দুধ প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ওষুধসহ আরো প্রয়োজন ৩০০ টাকার। তা ছাড়া বাড়িতে সারাক্ষণ বাড়তি লোকজন থাকায় খরচ বেড়েছে। তাই চিন্তা শিশুদের বাঁচিয়ে রাখবেন কিভাবে।

শিশুদের বাবা মাহবুবুর রহমান জানান, এক সাথে চার সন্তান নিয়ে তিনি বেশি চিন্তিত নন। চিন্তা তাদের কিভাবে লালন পালন করবেন। তিনি মাত্র আট হাজার টাকার বেতনে কাজ করেন। এই টাকা আর শ্বশুরের আয় দিয়ে এদের বাঁচানো খুবই কষ্টকর।


আরো সংবাদ



premium cement