২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্যাংকে হামলা ভাংচুর

ঝিনাইদহে সোনালী ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঝিনাইদহে সোনালী ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তা বরখাস্ত - সংগৃহীত

ঝিনাইদহে সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৭ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের দুইজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারকে মারধর, ব্যাংকের টেবিল চেয়ার ও আসবাবপত্র ভাংচুর এবং শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম অফিসের ইনচার্জ আব্দুল মজিদ এ খবর নিশ্চত করেন।

বরখাস্তকৃতরা হলেন ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকের অফিসার আক্কাচ আলী, সোনালী ব্যাংক শৈলকূপা শাখার সিনিয়র ক্যাশ অফিসার নারশেদ আলী, শেখপাড়া বাজার শাখার অফিসার হারুন উর রশিদ, একই শাখার ক্যাশ অফিসার মানবেন্দ্র, রবিনারিকেল বাড়িয়া শাখার অফিসার মন্টু কুমার ঘোষ, কালীগঞ্জ শাখার হাবিবুর রহমান ও ঝিনাইদহ প্রিন্সপাল অফিসের রোকন উদ্দীন।

সোনালী ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, গত ১ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধু পরিষদ সমর্থিত ব্যাংকাররা সৌজন্য সাক্ষাত ও নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য বসেছিল। এ সময় বহিরাগত ব্যক্তিরা সেখানে হামলা করে ব্যাংকের দুইজন সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসারসহ ম্যানেজারদের মারধর করে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সোনালী ব্যাংকের এমডি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে উল্লেখিত ৭ অফিসারকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে সোনালী ব্যাংকের অফিসার ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের নেতা আক্কাস আলী জানান, আমরা কোনো ভাবেই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত নই। ঘটনার দিন কে বা কারা ব্যাংকের অফিসার কামালকে মারধর করে। আমরা তাদের চিনিও না। পরে জানতে পারি ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে অফিসার কামালকে মারধর করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সাথে আমাদের দায়ী করে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস জানান, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ। জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামানের নির্দেশে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ সোনালী ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়ের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার (এসপিও) হুমায়ূন কবির বলেন, ১ জানুয়ারি রাত সোয়া ৭টার দিকে ১৫-১৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা হঠাৎ করে ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষে ঢুকে পড়ে এবং উপস্থিত সবাইকে মারধর করতে থাকে। এ সময় মোহাম্মদ আব্দুল মজিদকে কক্ষ থেকে বের করে আনে এবং অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার সময় ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার অন্তত ৮ জন ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার উপস্থিত ছিলেন। সোনালী ব্যাংক প্রধান শাখার অফিসার (সাবেক সিবিএ নেতা) বর্তমান স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের স্থানীয় সভাপতি আক্কাচ আলীর নেতৃত্বে এ হামলাসহ ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেন তিনি।

হামলাকারীরা তার (হুমায়ূন কবির) টেবিলের গ্লাস ভাঙচুর করেছে বলেও জানান তিনি। ঘটনার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।

অপর দিকে সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদ নেতারা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। তারা ঘটনার বিষয়ে ভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন।

সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের ঝিনাইদহ শাখার সভাপতি ও জেলা শহরের আরাবপুর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার এনামুল হক শামীম বলেন, ঘটনার দিন তারা জোনাল অফিসে ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন রাত ৭টার বেশি বাজে।

তিনি বলেন, তখন তারা দেখেন ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের সঙ্গে সাবেক সিবিএ নেতা বর্তমান স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সভাপতি আক্কাচ আলীসহ কয়েকজন বৈঠক করছেন।

এনামুল হক শামীমের ভাষায় আক্কাচ আলীরা বেরিয়ে যাওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কক্ষে যান তারা। কয়েক মিনিটের মধ্যে ৩০-৪০ জন্য হঠাৎ করে সেখানে আসে এবং উপস্থিত সবাইকে মারধর শুরু করে দেয়। সে সময় হামলাকারীরা ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেন শামীম।

পুলিশ আসার পরে হামলাকারীরা জোনাল অফিস ত্যাগ করে বলেও জানান তিনি। শামীম বলেন, সাবেক সিবিএ নেতা আক্কাচ আলীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজাররা।

আক্কাচ বদলি ও লোন বাণিজ্যের সাথে জড়িত অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন এক সঙ্গে কয়েকজন ম্যানেজারকে পেয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় আক্কাচ গং।

জেলা শহরের আরাবপুর সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার এনামুল হক শামীমের দেয়া তথ্যমতে পরিকল্পিত এ হামলার সঙ্গে বহিরাগত ছাড়াও অগ্রণী ব্যাংক স্থানীয় শাখার অফিসার্স সমিতির সাবেক সেক্রেটারি হানিফ শেখসহ কয়েকজন জড়িত রয়েছেন। তবে অজ্ঞাত কারণে তাদের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে স্বধীনতা পরিষদের নেতা আক্কাচ আলী বলেন, ঘটনার সময় তারা কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। হামলা, মারপিট ভাঙচুরের ঘটনায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি। তার ভাষায়, বিএনপিপন্থী কতিপয় অফিসার এ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বলেন, হামলা মারপিটসহ ভাঙচুরের ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে। জড়িতদের মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ৭ জন কর্মকর্তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটি ইমেজ সংকটে পড়েছে।

সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহের প্রধান শাখার ইনচার্জ (এজিএম) মো. আবদুল গাফফার বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের মধ্যকার পূর্ব বিবাদের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে।

প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহ আঞ্চলিক কার্যালয় জেলা শহরের পুরাতন ডিসি কোর্টের সমানে প্রধান শাখার তৃতীয়তলায় অবস্থিত। সেখানেই ঘটেছে এ ঘটনা।


আরো সংবাদ



premium cement