০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মেসিদের আটকানোর রাস্তা দেখিয়ে দিলো আইসল্যান্ড!

মেসিদের আটকানোর রাস্তা দেখিয়ে দিলো আইসল্যান্ড! - ছবি : সংগৃহীত

দিনটা মেসির ছিল না। পেনাল্টি মিস!‌ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে!‌ দুটি ফ্রিকিক। একটা বেরিয়ে গেল বারের ওপর দিয়ে। অন্যটা গোলকিপারের হাতে!‌ দুটো শট নিল প্রথমার্ধে। একটা তো অল্পের জন্য গোলে গেল না। এরপর আর কী দেখে বলা যায়, দিনটা ওর ছিল?‌ কারো কারো কাছে প্রত্যাশার শেষ থাকে না। মেসিও তেমনই একজন। কিন্তু সেই মাত্রাটা প্রথম দিন অন্তত ছুঁতে পারল না। মেসির মতো বড় প্লেয়ার কোনদিকে বলটা মারবে, সেটা বুঝে ফেলবে বিপক্ষের গোলকিপার?‌ মেসির অন্য দিকে বলটা মারা উচিত ছিল। তবে কৃতিত্বটা আইসল্যান্ডের গোলকিপার হালডরসনের। আর আইসল্যান্ডেরও।

উচ্চতার মই আর শরীরের গঠন। আইসল্যান্ডের শক্তির খুঁটি। সঙ্গে ডিফেন্সে যখন–তখন দাঁড়িয়ে পড়া ১০ জন!‌ এমন দলের বিরুদ্ধে গোলমুখে ফাঁক খুঁজে পাওয়াই দায়!‌ মাঝমাঠের ওপারে যাচ্ছিলই না আইসল্যান্ড ফুটবলাররা। কাউন্টার অ্যাটাক করেছে। তবে সেই কাউন্টার অ্যাটাকে যে তিন–চারজন উঠছে, তারা বলের দখল হারালেই অদ্ভুতভাবে নিজেদের অর্ধে ফিরে আসছে। বল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার থেকেও, রক্ষণে ভিড় জমানোর ইচ্ছেটাই প্রবল!‌ নির্ঘাত এটা কোচের কোনো পরিকল্পনা। আইসল্যান্ডের ফুটবলারদের পায়ে বল পড়লে লঙ পাসে খেলেছে। তার ফলও পেয়েছে। ফিনবোগাসনের গোলে। এই গোলটা ছাড়া আইসল্যান্ডের একটাই খেলা, নিজেদের অর্ধে ভিড় জমিয়ে বসে থাকো। এই ধরনের দলের সঙ্গে খেলাটা সবসময় কঠিন। ২৫–৩০ গজ গোলের জায়গা। সেই জায়গায় মাত্রাতিরিক্ত ভিড় থাকলে, গোল মুখটা খুলবে কী করে?‌

ম্যাচে যা খেলার আর্জেন্টিনাই খেলছে। অধিকাংশ সময়। আক্রমণেও উঠেছে। বল পজেশন দেখলে আর্জেন্টিনা অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু কোনো দল যদি ঠিক করে নেয় কিছুতেই রক্ষণের ভিড় কমাবে না, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে গোল পাওয়া অসাধ্যই হয়ে যায়। আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯ মিনিটে গোলটা অসাধারণ করেছে আগুয়েরো। রোহো পাসটা বাড়িয়েছিল। আগুয়েরো জায়গা নিয়ে ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নিলেন। জালের ওপরের কোণ ঘেঁষে ঢুকল বল। মিনিট কয়েকের মধ্যে ফিনবোগাসনের গোলে সমতায় ফিরল আইসল্যান্ড। ব্যস, এটুকুই ওরা চেয়েছিল। আর গোল করার ইচ্ছেই নেই!‌ তবে আর্জেন্টিনার গোলকিপার কাবায়েরোর নড়াচড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করল ওই মুহূর্ত থেকেই। বয়সটা যে ফুটবলে একটা সমস্যা, বিশেষ করে গোলকিপারদের ক্ষেত্রে এই তথ্যটা কাবায়েরোকে দেখে অস্বীকার করা যাবে না।

যোগ্যতা অর্জন পর্বে আর্জেন্টিনাকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। রক্ষণের বাঁধুনিটা যে দলের সমস্যার মূল জট, সাম্পাওলির দলকে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দেখেও মনে হয়েছে। মেসিকে যেকোনো দল মার্কিংয়ে রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক। আইসল্যান্ড রেখেছিল ডাবল মার্কিংয়ে। কখনো কখনো ট্রিপল মার্কিংয়ে। তা সত্ত্বেও ছিটকে বেরিয়ে বেশ কয়েকবার এগোল। কিন্তু ফুটবলের সেই চিরায়িত সত্য। দিনটা সঙ্গ না দিলেই কিছুই হয় না। পেনাল্টিটা মিস করার পর মেসি বোধহয় কিছুটা হতাশও হয়ে পড়েছিলেন। হয়ত মনে মনে ভেবেছেন, আবার না সমালোচনার ঝড় ওঠে। এমনও হতে পারত, মিস করার পর ও আরো তেড়েফুঁড়ে উঠবেন। কিন্তু সেটা হলো না।

আর্জেন্টিনা ফেবারিট, এ কথা এখনো বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু আইসল্যান্ড যে ফুটবল খেলে গেল, তাতে অন্য দলগুলো আর্জেন্টিনাকে আটকানোর রাস্তাটা পেয়ে যেতে পারে। আইসল্যান্ড দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ৬–৭ মিনিট আক্রমণে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে পরে আবার সেই রক্ষণে ভিড় করল। সাইড দিয়ে বল গেলে ছয় ফুটের প্লেয়াররা পা দিয়ে বল আটকে দিচ্ছিল। ফাঁকফোকড় দেয়নি। এক মুহূর্তের জন্যও। আইসল্যান্ডের কিছু প্রতিভাবান প্লেয়ার অবশ্যই আছে। বিশেষ করে আট নম্বর বাজারনসন, সিগুয়ারোসনের কথা বলতে হবে।
আর্জেন্টিনার প্লেয়ারদের কিছু করার ছিল না, শারীরিক গঠনে এগিয়ে থাকা আইসল্যান্ডের সামনে।

মেসির মতো প্লেয়ারও জায়গা খুঁজে পেল না!‌ গোল খাব না, এই পণে আইসল্যান্ড সার্থক। ফুটবল যে খুব খারাপ খেলেছে আর্জেন্টিনা, এটা বলা যায় না। তবে আইসল্যান্ডের গোলকিপার হালডরসনের কাছে আর দলটার রক্ষণাত্মক মনোভাবের জন্য ১–১ ড্র হলো।
তাও আবার বলা যায়, মেসির কাছে এরকম পেনাল্টি আশা করা যায় না। তবে আরেকটা পেনাল্টি আর্জেন্টিনার পাওয়া উচিত ছিল। প্রথমটা পেনাল্টি হলে, ৭৭ মিনিটে পাভনকে যেভাবে বক্সে ফেলে দিয়েছিল সেভারসন, তাতে ওটাও পেনাল্টি দেয়াই যেত। রিপ্লে অনুযায়ী আরো একটা স্পট কিক হওয়ার কথা। কিন্তু রেফারি ‘‌ভার’‌ প্রযুক্তির সাহায্যই নিলেন না!‌ ‌

 


আরো সংবাদ



premium cement