৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


যে কৌশলে সফলতা পেয়েছে আইসল্যান্ড

মেসির পায়ে বল গেলে চার-পাঁচজন দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে সামনে - ছবি : সংগ্রহ

বিশ্বকাপ অভিষেকেই দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছে ইউরোপের ছোট্ট দেশ আইসল্যান্ড। শিরোপা প্রত্যাশী আর্জেন্টিনার সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে দলটি। শক্তিমত্ত্বার বিচারে আর্জেন্টিনার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আইসল্যান্ড। শনিবারের ম্যাচে তারা মাঠেও নেমেছিলো আন্ডারডগ হয়ে।

আর নিজেদের অবস্থান মাথায় রেখেই দলটি নির্ধারণ করেছিলো খেলার কৌশল। আইসল্যান্ডের প্রধান কৌশল ছিলো রক্ষণাত্মক খেলা, আর সুযোগ বুঝে আক্রমণে যাওয়া। সেই কৌশলেই তারা পিছিয়ে পড়েও আবার খেলায় ফিরেছে।

প্রথমার্ধের ১৯ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরোর গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা, তবে সেটি বেশিক্ষণ থাকেনি। মাত্র চার মিনিট পর গোল শোধ করে আইসল্যান্ড। এরপর জয়সূচক গোলের জন্য যত মরিয়া হয়েছে আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড ততই ঢুকে গেছে খোলসের মধ্যে। পুরো রক্ষণাত্মক খেলা শুরু করে দলটি। সমতা ধরে রাখাই ছিলো তাদের প্রধান লক্ষ্য। তাই যে করেই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডদের ঠেকাতে তৎপর ছিলো পুরো দল। প্রায় সময়ই দেখা গেছে নয় জন খেলোয়াড় সাড়িবন্ধ হয়ে দাড়িয়েছে নিজেদের ডিবক্সের সামনে। আর এ কারণেই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা বল নিয়ে ঢুকতে পারেনি।

মেসিরা বল নিয়ে ঢুকতে গেলেই সামনে এসে দাড়িয়েছে তিন চারজন আইসল্যান্ডার। আর্জেন্টিনার অনেকগুলো শট আইসল্যান্ডের খেলোয়াড়দের গায়ে লেগে ফিরে এসেছে। যার কারণে আক্রমণের পর আক্রমণ করেও গোল আদায় করতে পারেনি মেসি বাহিনী।

এ তো গেল খেলার শেষ ৪০ মিনিটের কথা। খেলার শুরু থেকেও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছেন আইসল্যান্ড। আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসিই ছিলো তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এটা মাথায় রেখে সব সময় মেসিকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছে তারা। মেসির চারপাশে সব সময় কড়া পাহাড়ায় ছিলো দুই-তিনজন খেলোয়াড়। আর মেসির পায়ে বল গেলে তো চার পাঁচজন দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছে সামনে।

অবশ্য মেসির দুর্বলতাও ছিলো। পেনাল্টি মিস করেছেন, ফ্রি-কিকগুলো মেরেছেন যত্রতত্র। তবু আইসল্যান্ডের রক্ষণাত্মক কৌশল ও মেসিকে কড়া পাহারায় রাখার কৌশলই তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট পেতে সাহায্য করেছে।

আরো পড়ুন :

বিশ্বকাপ অভিষেকেই চমক আইসল্যান্ডের
এবারের বিশ্বকাপের প্রথম অঘটনের জন্ম দিলো ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ড। শিরোপা প্রত্যাশী আর্জেন্টিনাকে কোন নবাগত দল জয় বঞ্চিত রাখলে তাকে তো অঘটনই বলা উচিত। রাশিয়া বিশ্বকাপের তৃতীয় দিনে শনিবার আর্জেন্টিনার সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছে আইসল্যান্ড। এর ফলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই পয়েন্ট হারাতে হলো লিওনেল মেসির দলকে।

এই ম্যাচের দুই অংশে দুই রকম চিত্র। প্রথম ষাট মিনিটে আর্জেন্টিনা অপেক্ষাকৃত ভালো ফুটবল খেললেও আইসল্যান্ডও প্রায়ই হানা দিয়েছে তাদের গোলপোস্টে। আর্জেন্টিনা একটি আক্রমণ করলে পরমূহুর্তেই পাল্টা আক্রমণ করেছে। খেলা ফলাফলও বলছে তাই। আর্জেন্টিনা ১৯ মিনিটে গোল করার মাত্র চার মিনিটের মাথায় সমতা এনেছে এবারই প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে আসা দলটি।

আর দ্বিতীয় অংশটির চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। এই অংশে আর্জেন্টিনা যেন হয়ে উঠেছিলো আহত বাঘ। ম্যাচের শুরুতে এগিয়ে গিয়েও লিড ধরে রাখতে না পারার দুঃখ ভুলতে অলআউট আক্রমণ করে মেসি এন্ড কোং। একের পর এক আক্রমণে দিশেহারা হয়ে যায় আইসল্যান্ডের ডিফেন্স। পুরো দলই এসময় ডিফেন্সে এসে গোলপোস্ট সামলাতে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা বল নিয়ে আক্রমণে গেলেই সামনে এসে দাড়িয়ে কয়েকজন আইসল্যান্ডার। ডি-বক্স আটকে দাড়িয়ে থাকে পুরো দল। ৬৩ মিনিটে মেসির শটে যখন মাথা ছোঁয়াতে যাবে আগুয়েরো তখনই তাকে ধাক্কা দেয় এ আইসল্যান্ডার। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় বাম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মেসির শট রুখে দেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক হ্যালডারসন। পেনাল্টি মিস করার পর আরো বেড়ে যায় আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধার। আর সেটা ঠেকাতে রক্ষণ আরো শক্ত করে আইসল্যান্ড।

মেসি বাহিনীকে বল নিয়ে প্রবেশের সুযোগই তারা দিতে চায়নি। তবে এত কড়া প্রহরা মধ্যেও কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিলো আর্জেন্টিনা। ৮৭ মিনিটে বাম প্রান্ত দিয়ে পাভোনের শটে পা ছোয়াতে ব্যর্থ হয় মাত্রই মাঠে নামা হিগুইয়েন। ৮৮ মিনিটে ম্যাসচেরানোর বুলেট গতির শটও রুখে দেয় গোলরক্ষক। ৯৪ মিনিটে বেনেগার একই ধরনের বিদ্যুৎ গতির শট রুখে দেয় আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক।

মোট কথা শেষ আধা ঘণ্টায় একের পর এক আক্রমণ করেও গোলের দেখা পায়নি মেসিরা। এসময় রেফারির কয়েকটি সিদ্ধান্তও আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে যায়। ৭৭ মিনিটে আর্জেন্টাই ফরোয়ার্ড পাভোনেকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেয় আইসল্যান্ডের বোডভারসন। এর দুই মিনিট আগে আরেক আগুয়েরোর ক্রস বক্সের মধ্যেই হাতে লাগে এক ডিফেন্ডারের; কিন্তু রেফারি এখানেও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি আর্জেন্টিনার পক্ষে।

মেসির পেনাল্টি মিস ও তিনটি ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে না পারাও পুড়িয়েছে আর্জেন্টিনাকে। যে কয়েকটি শট নিয়েছেন মেসি সেগুলোও খুব বেশি বিপজ্জনক ছিলো না আইসল্যান্ডের জন্য।

এর আগে অবশ্য ম্যাচের প্রথম ষাট মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সাথে সমানতালে লড়াই করছে নতুন দল আইসল্যান্ড। প্রথমার্ধ শেষ হয়েছে ১-১ গোলে। ১৯ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরো আর্জেন্টিনার পক্ষে গোল করেন, চার মিনিট পরই কাউন্টার অ্যাটাকে গোল শোধ করে আইসল্যান্ড।

বল দখল ও আক্রমণ তৈরির দিক থেকে আর্জেন্টিনা অনেকাংশে এগিয়ে থাকলেও আইসল্যান্ড মাঝে মধ্যেই পাল্টা আক্রমণ করেছে পুরো প্রথমার্ধে।
খেলার চার মিনিটের সময় মেসির ফ্রি-কিকে পা ছোয়াতে ব্যর্থ হয়েছেন নিকোলাস ওটামেন্ডি। সাইড বারের পাশ দিয়ে চলে যায় বল। অষ্টম মিনিটে আরেকটি সুযোগ তৈরি হয়েছিলো আর্জেন্টিনার, আর নবম মিনিটে পরপর দুটো সুযোগ তৈরি করেও গোল আদায় করতে পারেনি আইসল্যান্ড।

১৭ ও ২১তম মিনিটে মেসির দুটি দূর পাল্লার শট রুখে দিয়েছেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক। ১৯তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে নেয়া মার্কোস রোহোর শট ডিবস্কে আগুয়েরোর পায়ে আসে। সামান্য জায়গা করে নিয়ে বাম পায়ের শটে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলটি করেন আগুয়েরো। তবে মেসির দল এই লিড ধরে রাখতে পেরেছে মাত্র চার মিনিটি।

২৩ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে আক্রমণে ওঠে আইসল্যান্ড। জিলফি সিগার্ডসনের ক্রস কোন মনে ঠেকিয়ে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরো। তবে বক্সের বাইরে যেন এমন বলের জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন আলফ্রেড ফিনবোগাসন। জোরালো শটে বল জালে জড়ান তিনি। খেলায় সমতা আসে এই গোলে।
শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে মেসি বাহিনীকে। আর আইসল্যান্ড তাদের বিশ্বকাপ অভিষেক ম্যাচেই জন্ম দিলো অঘটনের।


আরো সংবাদ



premium cement