সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে : প্রধানমন্ত্রী
- নোয়াখালী সংবাদদাতা
- ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সেনাবাহিনীকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে। এর পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন সশস্ত্রবাহিনী গড়ে তোলা হবে। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ কিভাবে উন্নত হবে সে পরিকল্পনা আমরা হাতে নিয়েছি। মুজিববর্ষে দারিদ্র্যের হার ২ শতাংশ কমিয়ে আনা হবে।
তিনি গতকাল নোয়াখালীর স্বর্ণদ্বীপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন রণকৌশল মহড়া পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের দেশে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে চলেছে। জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গেলে তাদের প্রশংসা শুনতে পাই। সমরাস্ত্রের দিক থেকে তারা যেন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেভাবে আমরা তাদের গড়ে তুলেছি। সশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হিসেবে গড়ে তুলছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাহাজ্জার চরকে সেনাবাহিনী সত্যিকারার্থেই স্বর্ণদ্বীপে পরিণত করছে। আমাদের সুশৃঙ্খল ও পেশাদার সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের দেশমাতৃকার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠা স্বর্ণদ্বীপের সুপরিকল্পিত ব্যবহার দেখে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে স্বর্ণদ্বীপের প্রশিক্ষণসুবিধা সেনাবাহিনীর দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সমন্বিত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত আজকের মহড়া দেখে আপনাদের প্রতি আমার আস্থা আরো সুদৃঢ় হয়েছে। সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের প্রদর্শিত এই মহড়া সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের প্রতিফলন, যা একটি আধুনিক ও শক্তিশালী সেনাবাহিনীর উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। মহড়া অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, স্বর্ণদ্বীপ নামের এই দ্বীপটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এলাকা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রতি বছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সেনাবাহিনী সদস্যরা এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অংশ নেন। এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার সেনাসদস্য প্রশিক্ষণসুবিধা পেয়েছে। জাতিসঙ্ঘ মিশনে যাওয়ার পূর্বে প্রাক-মোতায়েন প্রশিক্ষণেও স্বর্ণদ্বীপ ব্যবহৃত হচ্ছে।
ইউএনবি জানায়, দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত করে বাংলাদেশকে আরো উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই এবং দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের হাত থেকে মুক্ত করতে চাই।’
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার স্বর্ণদ্বীপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শীতকালীন মহড়া উপলক্ষে আয়োজিত ‘প্রীতিভোজে’ (মধ্যাহ্নভোজ) বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশন এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করে। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কাজের অংশ হিসেবে সঙ্ঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশে কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই, তাদের অন্যান্য দেশের সশস্ত্রবাহিনীর সাথে কাজ করতে হয়। তাই আমরা চাই না যে তারা পিছিয়ে পড়ুক।’ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনী দেশের উন্নয়নেও ব্যাপক অবদান রাখছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় এই মহড়ার আয়োজন করে ৬৬ পদাতিক ডিভিশন। ঘণ্টাব্যাপী এই মহড়ায় যোগ দেয় নৌ ও বিমানবাহিনীর ইউনিটগুলো। তিন সশস্ত্রবাহিনীর ট্যাঙ্ক, এপিসি, মিগ যুদ্ধবিমান ও এমআই হেলিকপ্টারসহ আধুনিক বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ঘণ্টাব্যাপী এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সেনাবাহিনী এবং ‘শত্রু বাহিনীর’ মধ্যে একটি প্রতীকী যুদ্ধ প্রদর্শন করা হয়। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর জয়ের মধ্য দিয়ে অভিযানটি শেষ হয়।
সেনাবাহিনীর ২২২ পদাতিক ডিভিশনের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব সশস্ত্রবাহিনীর বিজয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন এবং পরে তিনি সশস্ত্রবাহিনীকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। এ সময় তিন বাহিনীর প্রধান, স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে স্বর্ণদ্বীপে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার (জিওসি) মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম এবং ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী। সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল মো: শামসুল হক এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ার মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীকে স্বর্ণদ্বীপের উন্নয়ন সম্পর্কে অবহিত করেন।
দ্বীপে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত তিনটি বহুমুখী সাইক্লোন শেল্টার, পরিকল্পিত বনায়ন প্রকল্প ও এক মেগাওয়াটের একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা