২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কান ও লিঙ্গ কেটে হত্যার পর শিশুকে গাছে ঝুলিয়েছে দুর্বৃত্তরা

-

মানুষে মানুষে বিরোধ-শত্রুতা থাকতে পারে। কিন্তু একটি নিষ্পাপ শিশুর কী অপরাধ? ‘কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারি নি চিৎকার, বুকের কষ্ট বুকে চাপিয়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার’ এমনটাই মনে পড়বে সবার। কারণ কতটা নিষ্ঠুর আর পাষাণ হৃদয়ের হলে একটি নিষ্পাপ শিশুকে নির্মমভাবে পরিবারের অগোচরে হত্যা করতে পারে। হত্যা করেই খান্ত হয়নি পাষণ্ড খুনিরা। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার কান ও লিঙ্গ কেটে নিয়েছে। হত্যায় ব্যবহৃত দু’টি ছুরি তার পেটে ঢুকিয়ে রেখে দিয়েছে। এর পরে লাশটি রশি দিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে কদম গাছের ডালে।
গতকাল সোমবার সকালে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে ঝুলন্ত লাশ দেখতে উৎসুক জনতার ঢল নামে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউরা গ্রামে। এই ঘটনার পর থেকে এলাকার শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, তুহিনের বাবার জমিজমা নিয়ে গ্রামের কিছু মানুষের সাথে বিরোধ আছে। এ কারণেই পরিকল্পিতভাবে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি পাড়াপ্রতিবেশী ও স্বজনেরা। আর মা মনিরা বেগম, কৃষক পিতা আব্দুল বাছিরের বুকফাটা আর্তনাদ আর আহাজারিতে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। শিশুর বাবা-মাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন সবাই আর নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখছেন আগত মানুষ, কারো কিছুই করার নেই। তবে সবার দাবি একটাইÑ এমন নৃশংস হত্যার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা।
স্থানীয় সাংবাদিক মোজাহিদ উদ্দিনসহ আরো অনেকেই জানান, নিহত শিশু তুহিনের বয়স পাঁচ বছর। সে এ বছরেই স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউপির কেজাউরা গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে। আব্দুল বাছিরের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। ঘরের দু’টি কক্ষে দুই ভাই বাছির ও মছাব্বির তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। গত রোববার রাতে তারা খাওয়া-দাওয়া শেষে সন্তানদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মধ্য রাতে ঘরের দরজা খোলা দেখে ঘুম থেকে ডেকে তোলে বাছিরের এক ভাতিজি। জেগে উঠে দেখেন তুহিন পাশে নেই। এরপর সবাইকে ডাকাডাকি করে তুহিনকে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশে রাস্তায় গিয়ে রক্ত দেখে সামনে এগিয়ে কদমগাছে নিথর তুহিনের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা বুঝতে পারছেন না, তবে যেই এ কাজ করে থাকুক তাদের শাস্তি চান উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণ।
কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গুরুত্বসহকারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানান দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে এই লোমহর্ষক ঘটনায় হতবাক সাধারণ মানুষ। খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, সিআইডি ও ডিবি পুলিশ পরিদর্শন করেন এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের পিতা আব্দুল বাছির ও তার তিন চাচাÑ মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির, জমসেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল, চাচী খয়রুন বেগম, এবং চাচাতো বোন তানিয়াকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন সাথে নিহত তুহিনের পরিবারের বিরোধ চলে আসছে। এর আগে মধুপুর গ্রামের মজিব ও কাজাউড়া গ্রামের নিলুফার হত্যাসহ একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে উপস্থিত গণমাধ্যমকে জানান, ঘটনার অনেক ক্লু পাওয়া গেছে, তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement