২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া মাহফিল

চামড়া শিল্প ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার : ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির মিলাদ ও দোয়া মাহফিল হনয়া দিগন্ত -

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশকে পরনির্ভরশীল করার চক্রান্তে সরকার সর্বাধিক ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, চামড়া শিল্পের মাধ্যমে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। কিন্তু এই সরকার সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে পরিকল্পিতভাবে। একসময় পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে, আজকে ধ্বংস করা হচ্ছে চামড়া শিল্পকে।
গতকাল শুক্রবার সকালে এক দোয়া মাহফিলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সুদূরপ্রসারী যে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করার সেই কাজ বহুদূর এই সরকার এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারা শুধু জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে তাই-ই নয়, এ দেশকে পরনির্ভরশীল করার জন্য সেই চক্রান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে। দোয়া মাহফিলে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও দীর্ঘজীবন কামনা করে বিশেষ মুনাজাতে শরিক হন নেতাকর্মীরা।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তার রোগমুক্তি ও সুস্থতা কামনায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে বিএনপি। ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপি এই কর্মসূচি পালন করছে। এ ছাড়া বাদ আসর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সেখানে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন স্টাফ উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দী। অসুস্থতার জন্য কয়েক মাস ধরে তিনি রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে।
দোয়া মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য : ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শিরিন সুলতানা, ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান ইশরাক হোসেন, নিপুন রায় চৌধুরী, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, অঙ্গসংগঠনের আনোয়ার হোসাইন, সাইফুল আলম নিরব, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, গোলাম সরোয়ার, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, আবুল কালাম আজাদ, এস এম জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের আর্থসমাজিক উন্নয়নে খালেদা জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকে খালেদা জিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে তারা কারাগারে আটক করে রেখেছে। কারণ তিনি যদি বাইরে থাকতেন তা হলে দেশের অর্থনীতিকে যে পরনির্ভরশীল করে ফেলা হচ্ছে, অর্থনীতিকে ফোকলা করে ফেলা হচ্ছেÑ সেটি সম্ভব হতো না।
জন্মদিনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য জীবন তুলে ধরে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হচ্ছে রাজপথে। তিনি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে জনগণকে সংগঠিত করেছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, একজন গৃহবধূ যিনি রাজনীতি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিলেন। যখন তার ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে তখন তিনি সেই দায়িত্বকে সত্যিকার অর্থেই বাস্তবায়িত করবার জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। এই নেত্রী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু কারাবরণই করেননি, তার সবচেয়ে প্রিয়জনদেরকে হারিয়েছেন। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতের পরে যখন সবাই মনে করেছিল বিশেষ করে যারা মনে করছিল যে, এবার বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবেÑ এটি আর দাঁড়াতে পারবে না। তখন আমাদের এই মহীয়সী মহিলা বিএনপির পতাকাকে তুলে নিয়ে জনগণকে সংগঠিত করবার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছিলেন।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে একে একে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা হয়েছে বিচার বিভাগের। আজকে বিচার বিভাগের যে স্বাধীনতা, সেই স্বাধীনতা একেবারেই নেই। এই ফ্যাসিস্ট সরকার, অনির্বাচিত সরকার, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন সরকার তারা আজকে বিচারব্যবস্থাকে করায়ত্ত করে সব নির্যাতন-নিপীড়ন কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ দেশের রাজনৈতিক কর্মী-গণতান্ত্রিক কর্মীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। সেই একইভাবে দেশনেত্রীকে তারা আজকে কারাগারে আটকিয়ে রেখেছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া শুধু আন্দোলনই করেননি, ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম করে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে তিনি জনগণের একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং সেই সরকার প্রতিষ্ঠা করার পরে তিনি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য কাজ করেছেন। তিনি শুধু দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই করেননি, তিনি বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যেতে একটি একটি করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরো বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা অনেক কথা বলেন। উন্নয়নের ফুলঝুরি দেখান। কিন্তু প্রতিটি উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করে গেছেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার পর উন্নয়নের ধাপগুলো এগিয়ে নিয়ে গেছেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের যত উন্নয়ন দেখা যায় তার ভিত্তি বিএনপি সরকারগুলোর আমলেই হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ এই দেশে একদলীয় বাকশাল প্রবর্তন করেছিল। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান তো বটেই, অর্থনীতিকে তারা অচল করে ফেলেছিল।
খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে গুলশান কার্যালয়ে গতকাল বিকেলে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বেগম জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা করে বিশেষ দোয়া মুনাজাত করা হয়। দোয়ায় অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, আলতাফ হোসেন, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুল কাইয়ুম, সুজাউদ্দিন, বিজনকান্তি সরকার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মাসুদ তালুকদার, শামা ওবায়েদ, আউয়াল খান, রিয়াজ উদ্দিন নসু, ফাহিমা নাসরিন মুন্নী, তাবিদ আউয়াল, আহসান উল্লাহ হাসান, ইশরাক হোসেন, আনোয়ার হোসেন, শিমুল বিশ্বাস, এ বি এম আব্দুস সাত্তার, কর্নেল ইসহাক প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement