২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আন্দোলনই খালেদা জিয়ার মুক্তির পথ : শপথ নেবেন না নির্বাচিতরা

খালেদা জিয়া : তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে অতিথিরা : নয়া দিগন্ত -

‘খালেদা জিয়া : তৃতীয় বিশ্বের কণ্ঠস্বর’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আবারো বলেছেন, বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন না। দলীয় এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনও হবে না। নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়ার মতো ‘আপসহীন’ হওয়ার আহবান জানিয়ে শীর্ষ নেতারা বলেন, নেত্রী জেলে থাকুন আর বাইরে থাকুন তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বর্তমান সরকার তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে। তাকে মুক্ত করতে হলে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
‘শত নাগরিক’ কমিটির উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এই প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ও কবি আবদুল হাই শিকদার সম্পাদিত এই গ্রন্থটি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের ওপর লেখা। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর বিএনপির হাল ধরতে রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। তার দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনের সংগ্রামী ইতিহাস এই গ্রন্থে নিখুঁতভাবে প্রকাশ পেয়েছে। বইটির লেখকরা হলেন- ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, ড. হাসান মোহাম্মদ, ড. আবদুল লতিফ মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, আবদুল হাই শিকদার, ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন, ড. মাহফুজ পারভেজ, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ড. ফজলুল হক সৈকত, কাজী মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি রয়টার্সের সাংবাদিক এম মাহাবুবুর রহমান। ৮৬০ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে বুক এভিনিউ, দাম ২ হাজার টাকা।
অনুষ্ঠানে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আপনাদের অনুরোধ করতে চাই, হতাশ হবেন না, হতাশার কথা শুনতে চাই না। বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যায়নি, যারা বলেন বিএনপি নিঃশেষ হয়ে গেছে আমি কোনো দিনই তাদের সাথে একমত নই। বিএনপি প্রতি সঙ্কটের মুহূর্তে উঠে দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়িয়েছে জনগণকে সাথে নিয়ে। কারণ বিএনপি হচ্ছে এদেশের মানুষের জনগণের দল। এটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। বার বার চেষ্টা হয়েছে এই দলকে ভেঙে ফেলার, বার বার চেষ্টা হয়েছে এই দলকে নিশ্চিহ্ন করার। এবারো দেশনেত্রী কারাগারে একটি মাত্র কারণে যে, বিএনপিকে নিঃশেষ করা, রাজনীতিকে ধ্বংস করা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া। আমি বলতে চাই, এটা সম্ভব হবে না, হতে পারে না। কারণ বিএনপি ও দেশনেত্রীর রাজনীতি হলো এদেশের মানুষের রাজনীতি।
মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের নেত্রী জেলে থাকুন আর বাইরে থাকুন তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা, তিনিই আমাদের নেতৃত্ব দিয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করবেন ইনশাআল্লাহ। আমরা জানি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ যা আমি আপনাদের বলে বুঝাতে পারব না। তিনি এখন হুইল চেয়ার ছাড়া হাঁটতেও পারেন না। তারপরও এতটুকু মনোবল তিনি হারাননি। এই মনোবল আমাদের মাঝে সঞ্চারিত করতে হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের প্রতিহিংসার কারণে আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। একটা করুণ অবস্থা, অস্বাভাবিক অবস্থায় দেশ চলছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সে জন্য প্রথম দায়িত্ব গণতন্ত্রের মাতাকে মুক্ত করা। আমি মনে করি, একটি কার্যকর আন্দোলন ছাড়া দেশনেত্রীকে মুক্ত করা সম্ভব নয়।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমাদের নির্বাচিত ছয়জন সংসদে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের নির্বাচিত সদস্যরা শপথ নেবেন না। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের (তারেক রহমান) সাথে বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের স্থায়ী কমিটি নিয়েছে। সুতরাং এখান থেকে ফিরে যাওয়ার বা কোনো পরিবর্তনের প্রশ্নই ওঠে না। সংসদে যাওয়ার কেন প্রয়োজন নেই তা ব্যাখ্যা করে মওদুদ আহমদ বলেন, আজকে তারা (সরকারি দল) আমাদেরকে বলছেন, আসুন আপনারা আসুন। আমরা তো জানি তাদের ন্যাচারটা কী। ২০০৯ সালে তারা কী করেছিল। আমাদের মাত্র ২৭টা আসন। তখন তারা বলেছিল, আপনারা পার্লামেন্টে আসুন, আমরা আপনাদেরকে সম্মান দেখাব, সব কিছু করব প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন। তারপর যখন পালার্মেন্টের প্রথম সারিতে ৯টা সিট প্রথম দিনই স্পিকার বললেন যে, না এই ৯টা সিট দেয়া যাবে না, তিনটা সিট আপনারা গড় ও সংখ্যানুযায়ী। আমি তখন পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলাম, এই সিট দিলে আপনাদের সরকারের কি পতন হবে যে যদি এখানে ৯ জন অথবা ৭ জন বসি। এই সঙ্কীর্ণমনা দলের কাছ থেকে কোনো রকমের সহনশীলতা, কোনো রকমের রাজনৈতিক শিষ্টাচার আমাদের প্রত্যাশা করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি।
খালেদা জিয়ার মুক্তির আইনিপ্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরে মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি। আইনিপ্রক্রিয়ায় আমরা চেষ্টা করে যাবো। তবে আমি বলতে চাই, তার মুক্তিতে আন্দোলন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজকে একটা নির্বাচন নাকি কী হয়েছে আপনারা সবাই জানেন। আমার দৃষ্টিতে এই তিন শ’ আসনে কেউ জয়লাভ করে নাই, কেউ পরাজিত হয় নাই। জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে জনগণ। সেই জনগণ যখন শতভাগ ভোটকেন্দ্রে যেয়ে ভোট দিতে পারে নাই সেই নির্বাচনে নির্বাচিত বলার সুযোগ নাই। কিন্তু আমরা শুনি আমাদের নির্বাচিতরা বলেন, জনগণের ইচ্ছা তারা যেন সংসদে যান। কিন্তু তাদের মধ্যে শুনলাম না এই কথা- অবৈধ সরকারকে বৈধ করণের প্রক্রিয়ায় আমরা পার্লামেন্টে যাবো না। দল কী করবে সেটা পরের কথা।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দল সিদ্ধান্ত না দিলে কেউ পার্লামেন্টে যাবে না। কিন্তু যারা নির্বাচিত বলেন, তারা কেন প্রতিবাদ করে বলতে পারেন না যে, আমরা সংসদে যাবো না দেশনেত্রীকে যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা মুক্ত না দেখব। আর সংসদে তখনই যাবো দল যদি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের পাঠায় তখন আমরা বিবেচনা করব। এই কথাটা শুনতে চেয়েছিলাম। তা শুনছি না। উঁকি-ঝুঁকি মারছে নানা চোরাগলি পথ দিয়ে নানা কথা। কোন কথা সত্য কোন কথা মিথ্যা জানি না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এখানে বিএনপির যেসব নেতা আছেন তারা কি নিজেদের মতো করে চলতে পারছেন নাকি তাদের হাত-পা বেঁধে দেয়া হয়েছে। তাদের ক্ষমতা দিতে হবে দল চালানোর জন্য। লন্ডন-আমেরিকা থেকে আদেশে দল চালানো যাবে না। স্থানীয় আদেশে দল চালাতে দিতে হবে।
সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এই বইটি বিক্রি করে যে পয়সা হবে, সেই পয়সা আমি নেবো না। এই টাকা দিয়ে আমরা একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করব।
বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ‘শত নাগরিক কমিটি’র জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে আবদুল হাই শিকদারের লেখা ‘খালেদা জ্যোতির্ময়ী’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন কবি নাসিম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, কৃষিবিদ জি কে মোস্তাফিজুর রহমান, বিএনপির শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, গৌতম চক্রবর্তী, সেলিম রেজা হাবিব, মীর নেওয়াজ আলী, শফিউল বারী বাবু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নিপুণ রায় চৌধুরী, হাজী ইউসুফ, লেবার পার্টির ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, কল্যাণ পার্টির শাহিদুর রহমান তামান্না প্রমুখ নেতা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২ ‘গাজার ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে ১৪ বছর লাগতে পারে’

সকল